আপনার তো শরম নাই: ওবায়দুল কাদেরকে

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘কী করবেন, আমাকে মেরে ফেলবেন, ফেলেন। জেলে দিবেন দেন। আপনাকে কালকে বাদল গালিগালাজ করছে। আপনার তো শরম নাই। আপনার শরম থাকলে আপনি এটার প্রতীকার করতেন, করেন নাই। কালকেও রাজাকারের সন্তান বলছে, প্রকাশ্য দিবালোকে, রূপালী চত্ত্বরে। আপনার শরম আছে? আপনার লজ্জা আছে? আপনার লজ্জা থাকলে আপনি রিজাইন দিয়ে ঘরে ঢুকে যাইতেন। আপনি দলকেও ক্ষতিগ্রস্থ করছেন। আমি সবাইকে চিনি ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত। আমরা কালোকে কালো বলবো সাদাকে সাদা বলব’।
গতকাল শুক্রবার কোম্পানীগঞ্জ থানার মূল ফটকের সামনে উপজেল আওয়ামী লীগ অনুসারী ও মির্জা কাদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টায় আল্টিমেটাম দেওয়ার সাড়ে ১১ ঘণ্টা পর তার অনুসারী স্বপন মাহমুদের ফেইবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে সকাল ১১টায় তিনি এসব বলেন।
কাদের মির্জা সেতুমন্ত্রীর স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তার স্ত্রীকে রক্ষা করবে কীভাবে। তার স্ত্রী আমাকে মারার জন্য এক কোটি টাকা দিছে। বাদল এগুলো সব রেকর্ড করে রাখছে, তার স্ত্রী বলছে আমাকে মারার জন্য। পরে বাদল রেকের্ডের হুমকি দিলে তাকে দ্রুত জেল থেকে ছেড়ে দেয়। বাঁচাইতে পারবেন? ওয়ান-ইলেভেনের পরে দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা দেয় নাই? এটা এখন ধামাচাপা দিয়ে রাখছে। ওয়ান-ইলেভেনের পর তো বর্ডার দিয়ে চলে গেছেন চুরি করে’।
এ সময় তিনি বলেন, ‘অন বর্ডারের দরজা টোয়াই হাইতেন নয়। কয়দিন বাঁচাবেন, কেমনে বাঁচাবেন, কারে দিয়ে বাঁচাবেন। সিঙ্গাপুরে কত হাজার কোটি টাকা আপনার অসুস্থতার নামে তুলেছে? আরো হাজার কথা আছে। কার কার কাছে কত টাকা আছে, কোন কোন বান্ধবী ও আত্মীয়ের কাছে কত টাকা। আমার ভাই টাকার অভাবে ফাঁসি দেয়। আমার ভাইকে টাকার অভাবে মানুষের দেনা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। আপনি কাদেরকে লালন করেন?’
কাদের মির্জা আরো বলেন, ‘আপনার সহকারী সবগুলো কোটি কেটি টাকা বানাইছে। সবগুলোর গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট আছে’।
এর আগে বৃহস্পতিবার সংঘর্ষের ঘটনায় রাত ১১টায় ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে তার ছেলে তাশিক মির্জা কাদেরের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ফেইসবুক লাইভে তিনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার সময় দিলাম। এ সময়ের মধ্যে ডিসি, এসপি, এডিশনাল এসপি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি, পরিদর্শককে (তদন্ত) প্রত্যাহার করতে হবে এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নুরনবী, রুমেল, সবুজ, কচি, শাহীন চেয়ারম্যান, রাজ্জাক চেয়ারম্যানকে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনেন, না হলে কোম্পানীগঞ্জে শান্তি আসবে না। আমি ২৪ ঘণ্টার সময় দিলাম। ২৪ ঘণ্টার ভিতর যদি এটার কিছু না হয়, ২৪ ঘণ্টার পরে আমি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নামব’।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের সামনে বসে পকেটে অস্ত্র, এ কোন দেশ, এ দেশে কি আইনের শাসন নেই, ইউএনওর সামনে বসে পকেটে অস্ত্র, এ দেশে কি আইনের শাসন নেই, মানবাধিকার সংস্থা নেই? আজকে আমাকে ফেইসবুকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। অথচ আমার প্রতিপক্ষরা ফেইসবুকে কথা বলতে পারছে। আমি পারছি না। এগুলো কে করেছে? ওবায়দুল কাদের সাহেব। তার বউয়ের অপকর্মকে ঢাকার জন্য। সেই এগুলো করছে, না হলে কে করতেছে’?
কাদের মির্জা বলেন, ‘আজকে তারা আমার পরিবারকে ধ্বংস করতে চায়। ওসি তুমি মিথ্যা কথা বল। মুনাফিক দশ লাখ টাকা খেয়ে আজকে প্রতারণা করছ। তুমি আমার ছেলেদের জেলে দেওয়ার ভয় দেখাও। তোমাকে এ সাহস কে দিয়েছে? বাজে লোক। সাবধান, সাবধান, সাবধান করে দিচ্ছি তোমাদের। আমাকে চেন না, চেন না, চিনবা পরে। আমি কারো তোয়াক্কা করি না। আল্লাহ ছাড়া, জনগণ ছাড়া কাউকে ভয় করি না। আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। আমার পরিবার প্রয়োজনে এই পথে নিজেদের বিসর্জন দিব। তারপরেও কোন অপরাধী, অপরাজনীতি, সন্ত্রাসী, অস্ত্রবাজ, ঘুষখোর সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো আপস করব না’।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে কাদের মির্জা ও বাদল অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন। বিকেলে কোম্পানীগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাদের মির্জার অনুসারীদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখান থেকে তারা পৌর ভবনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এর কিছুক্ষণ পর মেয়র কাদের মির্জার ছেলে তাশিক মির্জার নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক থানার সামনে আসলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ হয়।
থানা সূত্রে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও মির্জা গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় রাত ৮টার দিকে বসুরহাট পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। আটকরা হলেন বসুরহাট পৌরসভা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শিমুল চৌধুরী (৪২), রিয়াদ (১৭), সাগর (১৭)।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।