আমরা আপনাদের প্রত্যাশার সমান হতে চাই : বিএমপি কমিশনার

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেছেন, আমরা আপনাদের প্রত্যাশার সমান হতে চাই। সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ সারা বাংলাদেশকে প্রায় সাত হাজার বিটে ভাগ করেছে। থানায় গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে খুঁজে সময় নষ্ট করার দিন শেষ। আমরা আপনাদের দোরগোড়ায় এসেছি। আপনার এলাকার জন্য নির্ধারিত বিট অফিসার আপনার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
রোববার কাউনিয়া থানার বিসিক এলাকায় বিট পুলিশিং কার্যালয় শুভ উদ্বোধন করতে গিয়ে এসব কথা বলেন পুলিশ কমিশনার।
পুলিশ কমিশনার বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমে আমরা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ যে ধারা প্রবর্তণ করার চেষ্টা করছে তা অত্যন্ত সংবেদনশীল ধারা। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ আমরা ধৈর্যের সঙ্গে শুনে পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করা হচ্ছে। থানায় ভুক্তভোগীর প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। পুলিশের কোন অনিয়ম পেলে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে কোনো অপেশাদারিত্বের অভিযোগ পেলে তাকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বর্তমান পুলিশ দুর্নীতিমুক্ত, নির্ভেজাল সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। যার অংশ হিসেবে প্রতিমাসে থানায় অনুষ্ঠিত ওপেন হাউজ ডে’তে ভুক্তভোগী সেবা প্রত্যাশীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্বৃতি ‘তামরা স্বাধীন দেশের পুলিশ, তোমরা ব্রিটিশ পুলিশ নও, তোমরা জনগণের পুলিশ’ দিয়ে বলেন, সেই জনগণের পুলিশ হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, কৃষক -শ্রমিক, মেহনতী মানুষের আকাঙ্খা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে পুলিশ। নিরাপদ, সুশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণসহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আইনমান্যকারী সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বিট পুলিশিং কার্যক্রম। এর মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিয়ে, আমরা জনগণের আকাঙ্ক্ষার পুলিশে রূপান্তরিত হতে চাই।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান, জনগণের নিরাপত্তার চাহিদা নির্ভুল পূরণই হলো পুলিশের কাজ। প্রতিটি বিট এলাকায় যদি নিষ্ঠার সঙ্গে দুর্নীতিমুক্ত, নির্ভেজাল সেবা দিতে পারি, অপরাধ সংঘঠনের আগেই জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে জনসম্পৃক্ততা নিয়ে অপরাধীর বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রতিরোধ গড়তে পারি; তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের জনগণের পুলিশ হতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত কতিপয় পুলিশ রয়েছে, আমরা সেই পুলিশ চাই না, আমরা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার জনবান্ধব পুলিশ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পুলিশ দেখতে চাই। কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের ঘাম ঝড়ানো টাকায় আমরা বেতন রেশনসহ সকল সুবিধা ভোগ করে থাকি, সেই জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে, নিজেকে রাষ্ট্রের একজন কর্মচারী হিসেবে পরিপূর্ণ সেবক হিসেবে নিয়োজিত রেখে কাজ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে কোথাও কোনো পুলিশ অনিয়ম করছে কি-না তা জানতে বিভিন্ন অভিযোগ মাধ্যমসহ প্রতিটি থানায় প্রতিমাসে ওপেন হাউজ ডে, কমিউনিটি পুলিশিং এর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আপনাদের ফিডব্যাক পেলে আমরা আরও সমৃদ্ধ হবো।
জনসাধারণকে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন এর মতো ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আহ্বান জানান তিনি। বিট এলাকায় ভালো লোক, মন্দ লোক, ওয়ারেন্টধারী, দুষ্কৃতকারীদের তথ্য দিয়ে সমাজের সুশাসন, শৃঙ্খলা রক্ষায় সাধারণ মানুষের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজের মাধ্যমে একটি নিরাপদ নগরী উপহার দেয়া সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পুলিশ কমিশনার।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিএমপি জনাব প্রলয় চিসিম বলেন, থানাগুলো ছোট সীমানায় ভাগ করে জনগণের তথ্য নিয়ে সেবা নিশ্চিত করতেই বিট পুলিশিং। ২৪ ঘন্টা যে কোন বিপদ আপদে, যে কোন ঘটনা বিট অফিসারকে জানাতে পারেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার বিএমপি সদরদপ্তর আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ্ বিট পুলিশিং এর সার্বিক সফলতা ও সুফলতা কামনা করে বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে চেষ্টা করছি। তারই অংশ হিসেবে বিট পুলিশিং অন্যতম। বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে জনগণ ও পুলিশের সম্পৃক্ততায় সামাজিক প্রতিরোধ। এর সঙ্গে আইনী কাঠামো এক করে সমাজ থেকে দ্রুততম সময়ে অপরাধ দানাবাঁধার আগেই দমন করা সম্ভব।
উপ-পুলিশ কমিশনার উত্তর মো.খাইরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কাউনিয়া থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ রানা, সহকারী পুলিশ কমিশনার স্টাফ অফিসার প্রকৌশলী সাহেদ চৌধুরী, বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো মিজানুর রহমান, বিসিক শিল্প সমিতির উপদেষ্টা এডভোকেট আফজালুল করিম, কাউনিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আজিমুল করীমসহ থানার অফিসারবৃন্দ ও সুশীল সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধি ও নারী নেতৃবৃন্দ।