আলুর সঙ্গে এবার সবজির বাজারেও আগুন

আলুর সঙ্গে এবার সবজির বাজারেও আগুন

সরকার দুই দফায় আলুর দাম বেঁধে দিলেও বাজারে সরকারের নির্দেশনার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। প্রথমে খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা এবং পরবর্তীতে ৩৫ টাকা বেঁধে দেয়া হয়। তবে ভোক্তারা এক কেজি আলু ৪৫ টাকার নিচে কিনতে পারছেন না।

আলুর এই চড়া দামের সঙ্গে বাজারে সব ধরনের সবজিও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য সপ্তাহের ব্যবধানে গাজরের দাম কিছুটা কমেছে। বিপরীতে বেড়েছে বরবটির দাম। সব মিলিয়ে এখনও বেশিরভাগ সবজি অনেকটাই নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। আগের মতোই পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে সবজি মিলছে না।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ খুচরা ব্যবসায়ী আলুর কেজি ৪৫ টাকা বিক্রি করছেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ীকে ৫০ টাকা কেজিতেও আলু বিক্রি করতে দেখা গেছে। অথচ সরকার খুচরায় আলুর কেজি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

কারওয়ানবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা আলুর কেজি ৪২ টাকা বিক্রি করেছেন। অথচ সরকার পাইকারি পর্যায়ে আলুর কেজি ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

রামপুরা বাজারে ৫০ টাকা কেজি আলু বিক্রি করা মফিজুল শেখ বলেন, সরকার দাম বেঁধে দিলে কী হবে? আমরা তো পাইকারি বাজার থেকে কম দামে আলু কিনতে পারছি না। বেশি দামে আলু কিনে এনে কিভাবে কম দামে বিক্রি করবো?

তিনি বলেন, শ্যামবাজার থেকে দুই বস্তা আলু কিনেছি। প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৪১ টাকার ওপর। এই আলু থেকে বাছাই করা আলু ৫০ টাকা বিক্রি করেছি। একটু নিম্নমানের আলু ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। বাছাই করার সময় কিছু আলু ফেলে দিতে হয়েছে। গাড়ি ভাড়া, দোকান ভাড়া, কুলি খরচ যোগ করলে আসলে আলুতে আমাদের লাভ থাকে না।

সরকারনির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না হওয়ায় বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী আলামিন ব্যাপারি বলেন, এখন খুব বেশি আলু মজুদ নেই। আবার নতুন আলু উঠতে দেরি হচ্ছে। এসব কারণে আলুর দাম বেশি। এ পরিস্থিতিতে সরকার আলুর দাম বেঁধে দিলেও কাজ হবে না। বাজারে আলুর সরবরাহের তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি। নতুন আলু ভরপুর আসার আগে দাম কমবে বলে মনে হয় না।

এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে গাজরের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। খুচরা বাজারে গাজরের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে গাজরের কেজি ১০০ টাকা ছিল। খুচরার পাশাপাশি পাইকারিতেও গাজরের দাম কমেছে।

খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. ছদরি বলেন, গত সপ্তাহে এক কেজি গাজর ১০০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ পাইকারিতে কম দামে কিনতে পারায় ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। গাজরের মতো আরও কয়েকটি সবজির দাম কমেছে।

কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, গত শুক্রবার ১০ কেজি গাজর ৬০০-৬২০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ ৩৮০-৪০০ টাকা বিক্রি করেছি। সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। কিছুদিনের মধ্যে অন্যান্য সবজির দামও কমবে বলে মনে হচ্ছে।

এদিকে আগের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো। গত কয়েক মাসের মতো এখনও ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো। এর সঙ্গে শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

গত সপ্তাহের মতো শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। তবে বরবটির দাম বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি হয়েছে, তা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। বেগুন গত সপ্তাহের মতো ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে উস্তেরও। এক কেজি উস্তে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।

এই সবজিগুলোর পাশাপাশি বাজারে অন্য সবজিগুলোও স্বস্তি দিচ্ছে না। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, গত সপ্তাহের মতো ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। তবে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ঝিঙা, কাঁকরোল, ধুন্দল, কচুর লতির। ঝিঙার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি।

লাউয়ের পিস গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এক হালি কাঁচা কলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বাজারে আসা শীতের আগাম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।

স্বস্তি মিলছে না কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজের দামেও। এক কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা।

কারওয়ানবাজার থেকে বাজার করা নজরুল ইসলাম বলেন, বাজারে গাজরের দাম কিছুটা কমেছে। তারপরও ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। বরবটি, বেগুনের কেজি ৮০ টাকা। ছোটো একটা ফুলকপির দাম ৩০ টাকা। সবজির এতো দাম হলে কী করে পারা যাবে। কয়েক মাস ধরে এমন চড়া দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। যা বেতন পায় তার প্রায় অর্ধেক টাকা বাজারে চলে যায়। বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে কয়েক মাস ধরে কোনো টাকা জমা করতে পারি না। উল্টো গত মাসে এক কলিগের কাছ থেকে ধার করতে হয়েছে।

সবজির দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন খিলগাঁও থেকে বাজার করা কামরুল হোসেন। তিনি বলেন, বাজারের ভার আর টানতে পারছি না। আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক। এক-দুই সপ্তাহ না কয়েক মাস ধরে এ অবস্থা চলছে। খাওয়া কমিয়ে দিয়েও খরচের লাগাম টানতে পারছি না।


ভোরের আলো/ভিঅ/৩০/২০২০