উজিরপুরে রিমান্ডে যৌন ও শারীরিক নির্যাতন, প্রতিবেদন দিতে পারেনি তদন্তে কমিটি

বরিশালের উজিরপুর থানায় রিমান্ডে নারী আসামীকে যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি যথা সময়ে রিপোর্ট দিতে পারেনি। তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আরও ৭ দিনের সময় বাড়িয়েছেন তারা। এদিকে ওসি এবং পরিদর্শক (তদন্ত) প্রত্যহারের পর ওই থানায় নতুন একজন ওসি পদায়ন করা হয়েছে।
গত ৩০ জুন ও পহেলা জুলাই উজিরপুর থানায় রিমান্ডে এক নারী আসামীকে যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। রিমান্ড শেষে ২ জুলাই তাকে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় ওই নারী পুলিশের বিরুদ্ধে তাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করেন। আদালত তার শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত নির্যাতনের শিকার ওই নারীকে নির্যাতনকারী পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে সুযোগ দেয়ার নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার এবং রেঞ্জ ডিআইজিকে। ৩ জুলাই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলের পরিচালক ওই নারীর শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে জমা দেন। রিপোর্টে ওই নারী দুই নিতম্ব, দুই কুনুই, উভয় পায়ের গোড়ালী এবং ডান পায়ের পেছনে ভোতা বস্তু দিয়ে আঘাতের কথা উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে আদালতের নির্দেশে ওই নারী ৫ জুলাই কারাগারে থেকেই বাহক মারফত উজিরপুর থানার তৎকালীন ওসি, পরিদর্শক (তদন্ত), সার্কেল (পদ) এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সার্কেল পদের ব্যক্তিকে শনাক্তকরণ এবং অজ্ঞাতনামা আসামীদের চিহ্নিত করতে রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার কাজী মো. সোয়াইব এবং বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ফরহাদ হোসেন সরদারের সমন্বয়ে গত ৪ জুলাই ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন ডিআইজি। কমিটিকে পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। গতকাল ৭ জুলাই ছিলো তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার শেষ দিন। কিন্তু গতকাল তারা প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি।
রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ওই নারীর সঙ্গে কথা বলতে হবে তদন্ত কমিটির। কিন্তু ওই নারী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে ওই নারীর সঙ্গে সাক্ষাত করবে তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ কারণে তদন্ত কমিটি আরও ৭ দিনের সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের আরও ৭ দিনের সময় দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে রিমান্ডে নারী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় গত ৪ জুলাই উজিরপুর থানার ওসি জিয়াউল আহসান এবং পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাইনুল হোসেনকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। ওই দিনই পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে পদায়ন করা হয় মমিন উদ্দিন নামের এক পুলিশ পরিদর্শককে। একই সাথে তাকে ওসি’র অরিক্তি দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। গত মঙ্গলবার রাতে ওই থানায় নতুন ওসি পদায়ন করে পুলিশ সুপার কার্যালয়। বরিশাল আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মো. আলী আর্শাদ ওই রাতেই উজিরপুর থানার ওসি হিসেবে যোগদান করার কথা নিশ্চিত করেন।
গত ২৬ জুন উজিরপুরের জামবাড়ি এলাকায় এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় তার ভাই ওই নারীর বিরুদ্ধে উজিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ৩০ জুন ও পহেলা জুলাই তাকে থানায় রিমান্ডে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে।