এমপি পঙ্কজ ছাড়াই মেহেন্দিগঞ্জ আওয়ামী লীগের সম্মেলন

এমপি পঙ্কজ ছাড়াই মেহেন্দিগঞ্জ আওয়ামী লীগের সম্মেলন

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে দলের আংশিক কমিটি ঘোষনা করেছে বরিশাল জেলা কমিটি। স্থানীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথকে ছাড়াই মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শেষে হয়েছে।

গতকাল বুধবার ২৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপির উপস্থিতিতে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া গত ৪ নভেম্বর বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার আওয়ামী লীগের সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সেখানেও আওয়ামী নেতা পঙ্কজ নাথ ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়।

গত সেপ্টেম্বর মাসে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পঙ্কজ নাথকে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে দল।

এরপর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মসূচী তাকে আর দেখা যায়নি তবে সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ তার নির্বাচনী এলাকায় নানা কর্মসূচী অংশগ্রহন করতে দেখা গেছে।

পঙ্কজ নাথের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের টানপড়েন চলছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে। বিরোধী পক্ষ ছিল বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারীরা। দুই পক্ষের বিরোধকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানিও ঘটেছে। হামলা-মামলার শিকার হয়েছে অসংখ্য নেতা কর্মী।

তাছাড়া হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দেয়া হলে পঙ্কজ নাথ নিজের অনুসারীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করতেন বলে অভিযোগ আছে। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল পঙ্কজের। হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জে পঙ্কজ নাথের আধিপত্য থাকায় কোণঠাসা ছিলো আওয়ামী লীগের একাংশের অনুসারীরা।

মেহেন্দিগঞ্জ থানার পরিদর্শক ও পঙ্কজ নাথের মধ্যে ফোনে কথপোকথন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যা নিয়ে সারাদেশে চলে নানা মতবিরোধ। সেই অডিওকে পুজি করে অপর পক্ষ পঙ্কজ হটাও মিশনে নেমে অনেকটা সফল হয়েছে। হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার রাজনীতি অনেকটা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। স্থানীয় একাংশের নেতাদের অভিযোগ-আপত্তি আর প্রশাসনের সাথে কথপোকথন এমপি পঙ্কজ নাথকে স্থানীয় রাজনীতি থেকে সরাতে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকা নেতা কর্মীদের সুযোগ করে দেয় পঙ্কজ হটাও আন্দোলন। যার ফল হিসেবে এই দুই উপজেলার সম্মেলনে পঙ্কজ নাথের উপস্থিতি কিংবা কোন পদ না থাকার কারন হিসেবে দেখছে অনেক নেতা কর্মী।

বর্তমানে এ দুই উপজেলার রাজনীতি জেলা সভাপতির নিয়ন্ত্রনে থাকায় পঙ্কজ বিরোধীরা ফের স্থানীয় রাজনীতিতে সংক্রিয় হয়ে উঠেছে। আগামী সংসদ নির্বাচনেও এর প্রভাব লক্ষ করছে স্থানীয় ও সুধীজনরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, এই সন্মেলন উদ্দেশ্য মূলক। আমাদের নেতা পঙ্কজ নাথ ছাড়া মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ একদম প্রাণহীন। তার প্রতি উদ্দেশ্য মূলক অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন এই সন্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ক্ষুব্দ।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আরও একনেতা জানান একেপেশী শক্তিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সন্মেলন তারাহুরো করে কমিটি দেয়া হয়েছে। যার প্রমান রয়েছে এলাকার ত্যাগী নেতাদের কাছে। হিজলা উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি নিয়ে এরই মধ্যে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যার কারনে একাধিক নেতা জেলা সভাপতি বরাবর আবেদনও করেছে। হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মীহীন নেতাদের আধিপত্য বিস্তার করতে না পারায় রাজনৈতিক বিরোধকে পুজি করে ফায়দা লুটছে একাংশের আওয়ামী লীগ নেতা।

গতকাল অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. আনিসুর রহমান, সদস্য গোলাম রাব্বানী চিনু ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেরনিয়াবাত আশিক আবদুল্লাহ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন পৌর মেয়র ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন খান।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস।

নতুন কমিটিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র  আলহাজ্জ্ব কামাল উদ্দিনকে সভাপতি, সহ-সভাপতি (১) পদে আবদুল মকিম তালুকদার,বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাব আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক ,যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক পদে(১) মোস্তাফিজুর রহমান রিপন, যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক(২) পদে নুরুল ইসলাম জামাল মোল্লা, যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক (৩) পদে এস এম আব্দুর রহিম এবং  সাংগঠনিক সম্পাদক(১) পদে মোতালেব হোসেন জাহাঙ্গীর ও সাংগঠনিক সম্পাদক(২) পদে সরদার সাইফুলকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

২০১৯ সালের অক্টোবরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকেও সরানো হয় পঙ্কজ নাথ কে।