করোনা ভাইরাস আতংক নয়, সচেতন হোন

করোনা ভাইরাস নিয়ে সারা দুনিয়ায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে চীনে। তবে এর আঁচ পৃথিবীর অনেক দেশেই লাগছে। তথ্য পাওয়া গেছে ১০৩ দেশে এই ভাইরাস কম-বেশি আক্রমণ করেছে। বাংলাদেশেও তিন নাগরিক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এব্যাপারে আতংকিত হওয়ার মত অবস্থা হয়নি। সরকার এব্যাপারে সচেতন আছে। আমরাও বলতে চাই, করোনা ভাইরাস আতংক নয়, সচেতন হোতে হবে। একই সঙ্গে কোথাও কোনভাবে যেন আতংক ছাড়ানো না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
করোনা ভাইরাস আতংকে চীনের উহানসহ বিভিন্ন প্রদেশে বাংলাদেশের অনেক নাগরিকরা অবরুদ্ধ হয়েছে। চীনে উচ্চ শিক্ষা নিতে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময় বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় দেশে ফিরে এসেছেন। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। কোনভাবে তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তারপরও দেশের মধ্যে আতংক রয়েছে। এই আতংকের কারণে দেশের বাইরে ভ্রমণে গিয়ে বিপদের পড়ছেন অনেক নাগরিক। তারা মুঠোফোনে দেশে ফিরতে না পেরে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। নেপালে যাওয়া বরিশালের দুই নাগরিক জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিমান তাদের ফ্লাইট বাতিল করায় তারা দুর্ভোগে পড়েছেন। তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নিজেদের অর্থে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছেন। তারপরও তারা জানেন না বাংলাদেশ বিমান পরবর্তী সময়সূচি অনুযায়ী চলবে কি না। করোনার দোহাই দিয়ে বিমানের যাত্রা বাতিল করেও আতংক ছড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাই করোনার ভাইরাসের আতংক না ছড়িয়ে সচেতনতার পরামর্শ দেওয়া জরুরী।
আমরা মনে করি তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনার প্রকোপ কমে আসবে। বাংলাদেশ এখনো করোনার ঝুঁতিতে আছে এমন কোন তথ্য নেই। তারপরও সতর্ক থাকতে হবে। তবে শিশু এবং বৃদ্ধরা এই ভাইরাসের প্রভাবে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তারপরও এই মুহূর্তে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই ভাইরাস বাংলাদেশে বিস্তার ঘটাতে পারে। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে। সতর্কতাই আমাদের এই ভাইরাস থেকে প্রথমত দূরে রাখতে সাহায্য করবে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নিতেই হবে। এজন্য সতর্কতা এবং সতর্কতাই হবে মূল।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সেব্যাপারে সতর্কতা জারী করেছে বাংলাদেশ সরকার। বিমানবন্দর, নৌবন্দরে বিশেষ নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে দেশি প্রকল্পে নিয়োজিত বিদেশি নাগরিকদের ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশে এসেছেন, এমন নাগরিকদের পর্যবেক্ষণে রাখছেন কর্তৃপক্ষ।
করোনা ভাইরাস সংক্রামন এড়াতে এবং করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহসব জেলা হাসপাতালে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২৫ শয্যার ইসোলেশন ইউনিট চালু করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওই ইউনিটের জন্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে চিকিৎসক। ইতিমধ্যেই নতুন ওয়ার্ডে স্থাপন করা হয়েছে ভেল্টিলেটিং মেশিনসহ যাবতীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৫ জনের একটি সেবিকা দল।
আমরা বলতে চাই, বিশ্বায়নের যুগে যেমন আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছি। তেমনি নানমুখী সমস্যাও আমদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে এসব সমস্যার সমাধানও করতে সক্ষম হই। তবে সমাধানের আগেই অনেক কিছু হারাতে হয়। তারপরও আমরা সম্ভাবনার বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সব কিছু জয় করবোই। এর আগে আমরা ডেঙ্গু ভাইরাস মোকাবেলা করেছি। অনেকটা সফলও হয়েছি। এবার করোনা ভাইরাস থেকেও আমরা সতর্ক থেকে মোকাবেলা করবো। এজন্য প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হতে হবে। সরকারের সঙ্গে আমাদের সবার সহযোগী মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে কোনভাবেই আতংক ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা সঠিক হবে না।