কলোনীবাসীর দুর্ভোগ কমাতে উদ্যোগ নিন

কলোনীবাসীর দুর্ভোগ কমাতে উদ্যোগ নিন

বরিশাল নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুর কলোনীর প্রায় ৮ হাজারের বেশি বাসিন্দা গত দুই দিন ধরে পানি ও বিদ্যুতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। এই কলোনীর ১ হাজার পরিবার সাড়ে ১২টাকা হারে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেও এই দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। তারা প্রত্যাহিক কাজের অংশ হিসেবে গোসল, রান্না এবং খাবার পানি পর্যন্ত পাচ্ছেন না। নারী-শিশু থেকে বয়স্ক নাগরিকরা কেবল বিদ্যুতের কারণে ত্রাহি অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। বিদ্যুত বিভাগের দাবি প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা বিল বকেয়ার কারণে তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন। পুরো অর্থ প্রদান করলেই সংযোগ দেওয়া হবে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কেন এত বড় অংকের বিদ্যুত বিল বকেয়া পড়লো? কাদের করণে বিল পৌঁছায়নি বিদ্যুৎ বিভাগে। এসব অনেক প্রশ্ন আছে এবং থাকবে। তার আগে প্রয়োজন এতোগুলো মানুষের নৈমিত্যিক কাজ যাতে সারতে পারেন তার ব্যবস্থা করা। তাই নগর ভবন, বিদ্যুত বিভাগ এবং সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে রসুলপুর কলোনীর বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘব করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে কীর্তনখোলা নদী ড্রেজিং করে সংলগ্ন রসুলপুর এলাকায় পলিমাটি ফেলা হয়। পলি ফেলায় নদীর তীরে একটি চরের আকৃতি হলে সেখানে বসতি স্থাপন করতে থাকে ভূমিদস্যুসহ ভূমিহীনরা। ধীরে ধীরে প্রায় ১ হাজার পরিবার বসতি স্থাপন করে সেখানে। রসুলপুর চর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত হলেও সেখানে কোন নাগরিক সুবিধা ছিলো না। পরবর্তী সময় সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন চরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে সেন্ট্রাল ডিজেজ কন্ট্রোল (সিডিসি) নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বেশকিছু রাস্তাঘাট, টয়লেট ও কমিউনিটি স্কুল এবং কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করেন। কিন্তু চরের জমি বসতি স্থাপনকারীদের নামে রেকর্ডভুক্ত (সরকারি খাস খতিয়ান) না হওয়ায় তারা সরাসরি বৈদ্যুতিক মিটার পাচ্ছিলেন না। ওই সময় মেয়র হিরন সিডিসি কার্যালয়ের একটি মিটার থেকে সাব মিটারের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারকে বিদ্যুত ব্যবহারের সুযোগ দেন। তারা প্রতিমাসে সাব মিটারের রিডিং অনুযায়ী ইউনিট প্রতি সাড়ে ১২ টাকা হারে বিল পরিশোধ করতেন সিডিসি কর্তৃপক্ষকে। তারা ওই বিল জমা দিতেন ব্যাংকে। এভাবেই বিদ্যুত ব্যবহার করে আসছিলেন ওই চরের প্রায় ৮ হাজার মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে সিডিসি’র আনিস এবং পরশ নামে দুই ব্যক্তি সাব মিটারের বিল আদায় করেন।

প্রশ্ন হচ্ছে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া তো এক মাসে হয়নি। যিনি বা যারা এই বিল জমা দেননি তারা তো অন্যায় করেছেনই তার সঙ্গে বিদ্যুত বিভাগেরর অন্যায় হয়েছে। এটি যদি এক কিংবা দুই মাসের বকেয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগ বিল আদায়ের উদ্যোগ নিত তাহলে এত বড় অংকের বিল জমতো না। তার আগেই বাসিন্দারা বিল কেন জমা হয়নি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারতো। তারপরও এতগুলো বাসিন্দা যেখানে বসবাস করেন সেখানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগে অন্তত তাদের নোটিশ দেওয়া উচিত ছিল। এই প্রক্রিয়াগুলো অবশ্যই গ্রাহকরা দাবি করতে পারেন। হঠাৎ করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কোন সমাধান হতে পারে না। এটা নাগরিক দুর্ভোগের সঙ্গে মানবাধিকারও লংঘন।

অন্যদিকে বাসিন্দাদের উচিত ছিল যে বা যাকে সাড়ে ১২টাকা হারে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতো সেই প্রতিনিধি বিল জমা দিচ্ছে কি না সেটার খোঁজ নেওয়া। এখন দরকার বিল উত্তোলনকারী সিডিসি’র আনিস এবং পরশের কাছে জবাবদিহাতা চাওয়া এবং সেই সঙ্গে দ্রুত এর সমাধনে উদ্যোগ নেওয়া। দায়িত্বপ্রাপ্ত আদায়কারীকে নিয়মিত বিল পরিশোধ করার পরেও কোন সাড়ে ১৩ লাখ টাকা বকেয়া থাকবে? এটা খতিয়ে দেখতে হবে।

সবার আগে বিদ্যুৎ বিভাগকে রসুলপুর কলোনীর বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আগে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে উদ্যোগ নিন। তারপর কেন অনিয়ম হয়েছে সেটার অনুসন্ধান এবং এর সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিন। সবার আগে নাগরিক সেবা। সেটার যেন কোন ব্যত্যয় না ঘটে।