কাজী নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি: উদীচী-বনা

কাজী নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি: উদীচী-বনা

কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতার মূর্ত প্রতীক একজন মানবতার কবি। ধর্ম দিয়ে মানুষের মধ্যে সৃষ্ট বিভেদ ঘোচাতে কলম চালিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম। কবির জন্মের ১২২ বছর পরও নজরুলকে মুসলমানের কবি বানানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। নজরুল কেবল বিশ^মানবতার জয়গান গেয়ে গেছেন। তিনি হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সৃষ্ট গালাগালিকে গলাগলিতে রূপ দিতে কাজ করে গেছেন। তাই তিনি কোন বিশেষ ধর্মের কবি নন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মজয়ন্ত্রীর আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

মঙ্গলবার (২৫ মে) রাত সাড়ে সাতটায় নগরের উদীচী ভবনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কবি নজরুল ইসলামের জন্ম জয়ন্তীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও বরিশাল নাটক।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বরিশাল জেলা সংসদের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় নজরুলের সার্বজনীনতা নিয়ে আলোচনা করেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল, মুকুল দাস, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট বিশ্বনাথ দাস মুনশী, খেলাঘর সভাপতি কবি নজমুল হোসেন আকাশ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য ও বরিশাল নাটকের সাবেক সভাপতি আজমল হোসেন লাবু, উদীচীর সংগঠক আবুল খায়ের সবুজ, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ বরিশাল শাখার সাধারণ সম্পাদক সুখেন্দু শেখর সরখেল, বরিশাল নাটকের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সঞ্জয় সাহা, বরিশাল নাটকের সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু বিশ্বাস।

আবৃত্তি করেন, উদীচীর সহসভাপতি ও আবৃত্তি শিল্পী কাজী সেলিনা, অধ্যাপক সুজয় সেনগুপ্ত, রাখি শায়ন্তনী।

সঙ্গীত পরিবেশন করেন, বিশ্বনাথ দাস মুনশী, কাজী সেলিনা, পার্থ সারথী, জুবায়ের হোসেন শাহেদ, আশরাফুর রহমান সাগর, সাগর দাস মুনশী, কমল ঘোষ।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৪২ সালে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলার আগ পর্যন্ত মানব কল্যাণে কবিতা, গান, নাটকসহ বিভিন্ন উপন্যাশ লিখেছেন। নজরুল তার লেখনিতে কেবল মানুষের জয়গানের কথাই লিখে গেছেন। তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে অগ্নিগিরি রচনা করেছেন। তাঁর লেখা বিদ্রোহী কবিতা এক সঙ্গে বৃটিশ এবং ধর্মান্ধদের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতার একাংশে তিনি লিখেছেন, ‘বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি, চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-তারা ছাড়ি, ভ্যুলোক, দ্যুলোক, গোলক ভেদিয়া, খোদার আসন আরশ ছেদিয়া উঠিয়াছি চির বিস্ময়, আমি বিশ্ব বিধাত্রির। মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ¦লে রাজ- রাজটিকা দীপ্ত জয়শ্রীর। বল বীর আমি চির উন্নত মম শির।’ এই লেখার পর কবিকে নাস্তিক ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে অসংখ্য শ্যামা সঙ্গীত রচনা করায় নজরুলকে হিন্দুর কবি বলে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। এরপর তিনি অসংখ্য ইসলামি গান ও গজল লিখেছেন। নজরুল কোন সমালোচনায় কান না দিয়ে লেখা দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি হিন্দু কিংবা মুসলমানের নয়। তিনি কেবল মানবজাতির কল্যাণের জন্য লিখেছেন। নজরুল হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দ্বন্দ্বকে ঘুচিয়ে দেবার চেষ্টা করে গেছেন। তাই তো নজরুল লিখেছেন, ‘হিন্দু মুসলিম দুটি ভাই, ভারতের দুই আঁখি তারা, এক বাগানে দুটি তরু দেবদারু আর কদম চারা’। এমন অসংখ্য কবিতা ও গানে হিন্দু-মুসলি, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈনকে ধর্মীয়ভাবে আলাদা না করে মানুষ হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম।

বক্তারা বলেন, কবি নজরুল ইসলামকে বর্তমানে মুসলমানের কবি বানানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকৃতির কবি, প্রেমের কবি, বিদ্রোহের কবি, মানুষের কবি, মানবতার কবি, বিশ্ব মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামকে খ-িত করার অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে। সেই জন্য সত্যিকারের নজরুলের লেখা ও গান বেশি বেশি চর্চা করে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।