খেলার মাঠটি সংরক্ষণ করুন

উন্নয়নের নামে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে বড় বড় খেলার মাঠ। ভরাট হচ্ছে খাল, দিঘি, পুকুর। শরীর চর্চা এবং খেলাধুলার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে শিশু থেকে যুবকরা মাদকসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে। খেলাধুলার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার কারণে আমাদের শিশুরা বিকশিত হতে পারছে না। দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ ভাগ শিশু। এই বিশাল সম্ভবনাময় জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় নিতেই হবে। তাঁদের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে বিকাশের পথে খেলাধুলার পরিবেশ গড়ে দিতে হবে। সেজন্য অবশ্য অবশ্য-ই পাড়া মহল্লার উন্মযক্ত স্থানগুলো সংরক্ষণ করে খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এমন বাস্তবতায় দেশের সকল উন্মুক্ত মাঠ, খেলার মাঠ সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ নিন।
ঢাকার তেঁতুল তলার খেলার মাঠ ধ্বংস করে পুলিশ অবকাঠামো নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়। স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ জানায়। শিশু-কিশোর থেকে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন তেঁতুল তলার মাঠ রক্ষার দাবি তোলে। এই দাবির মূল উদ্যোক্তা সংগঠক সৈয়দা রতœা এবং তার ছেলেকে পুলিশ আটক কওে হয়রানী করে। এক পর্যায়ে তীব্র আন্দোলনের মুখে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অবহিত হলে তাঁর হস্তক্ষেপে রক্ষা পায় তেঁতুল তলার মাঠ। আমাদের অনুরোধ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কেবল তেঁতুল তলার মাঠ নয়, দেশের সকল খেলার মাঠ রক্ষায় আপনার নির্দেশনা প্রয়োজন।
দু:খের বিষয় সব ঘটনা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছায় না। আর এই সুযোগে হারিয়ে যায় খেলার মাঠ, খাল, পুকুর। এরকমই বরিশাল নগরের কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোড এলাকার একটি খেলার মাঠ ধ্বংস করে স্টল বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে মাঠে নামে শিশু সংগঠন খেলাঘর। পরবর্তী সময় এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানিয়ে ওই মাঠে সমাবেশ করে। সেখান থেকে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে খেলার মাঠ ধ্বংস না কারার দাবি তোলেন। তারা অভিযোগ করেন, হঠাৎ স্টল নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়ার উদ্যোগ নেয় পুলিশ। যা অশুভ ইঙ্গিত। জেলা প্রশাসনের খাস খতিয়ানের জায়গায় পুলিশ স্থাপনা নির্মাণ করতে পারেন না। সরকারি মাঠ দেশের কল্যাণে শিশুদের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। তা না হলে তীব্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে সারা দেশে যতোগুলো খেলার মাঠ ছিল বর্তমানে সেটা কেবল ইতিহাস ছাড়া আর কিছু নয়। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও খেলার মাঠগুলো ছিল উন্মুক্ত ও অবারিত। আমাদের শিশুরা সেখানে খেলতে খেলতে বড় হয়েছে। আজকের এই সময় এসে কিছু ক্লাব ভিত্তিক খেলার মাঠ চোখে পড়বে। সেখানে সব শ্রেণির শিশুরা খেলাধূরা করার সুযোগ পায় না কিংবা সুযোগ নেই। তাদের খেলাধুলার জন্য পাড়ার খেলামাঠই ছিল মূল ভরোসা। বর্তমান সময়ে খেলার মাঠগুলো কেবল সংকুচিতই হয়নি দখল, দুষণ এবং উন্নয়নের নামে মাঠগুলোর অস্তিত্ব চরম হুমকীর মুখে পড়েছে। যার ফলে আমাদের শিশুরা এখন আর মাঠে খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। তারা মুঠোফোনসহ নানা নেতিবাচক কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। যা আমাদের জন্য অশনিসংকেত। এখান থেকে বের হতে হলে সারা দেশের খেলার মাঠগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগ নিতে হবে। কোনভাবেই উন্নয়নের দোহাই দিয়ে খেলার মাঠ বন্ধ করা যাবে না। তাই বরিশাল নগর সহ সারা দেশের উন্মযক্ত মাঠগুলো সংরক্ষণ করে শিশুদের মনোবিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে দিন।
আমরা বলতে চাই, মানুষ হিসেবে যদি বেড় ওঠার সুযোগই সৃষ্টি করা না যায় তাহলে কার সুরক্ষা কে নেবে। তাই বলতেই হয় আগামীর সম্ভাবনা গড়ে তুলতে হলে শিশুদের মনোবিকাশ, সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত করা বিশেষ করে খেলাধুলা এবং শরীর চর্চার দিকে নজর দিতেই হবে। সেজন্য প্রয়োজন শিশুদের জন্য খেলার মাঠ।