গলায় জুতার মালা পড়িয়ে লাঞ্ছিত, চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী কারাগারে
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ঈমাম মো. শহীদুল ইসলামের গলায় জুতার মালা পড়িয়ে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবদ শেষে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারো পাঠানো হয়েছে।
গত বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় মামলার প্রধান আসামী মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ১২ নম্বর দরির চর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী এবং দ্বিতীয় আসামী আবদুস সত্তার সিকদারকে মুলাদী উপজেলার পৌর শহর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া বৃহষ্পতিবার মামলা হওয়ার পরপরই অন্য এক আসামী বজলুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বুধবার বিকেলে বরিরশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ১২ নম্বর দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়নে ঈমাম মো. শহীদুল ইমলামকে আটকে রেখে নির্যাতন ও গলায় জুতার মালা পড়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা রাঢ়ী ও অন্যান্য সদস্যরা। নির্যাতনের পর তারা সেই ঘটনা ভিডিও করে এবং ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জেনে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেন।
এঘটনায় নির্যাতনের শিকার মো. শহীদুল ইসলাম বাদি হয়ে বৃহষ্পতিবার মেহেন্দিগঞ্জ থানায় চেয়ারম্যানসহ ৯জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ মামলাটি গুরুত্বসহকারে নিয়ে আসামী গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। মামলার মূল আসামী ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩জনকে গ্রেপ্তর করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
পুলিশ জানানয়, হেনেস্তার শিকার শহীদুল ইসলাম বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ীসহ শালিসে উপস্থিত ৯জনের নাম উল্লেখ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলা দায়েরর পরপরই বজলু নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর মামলার মূল আসামী মো. মোস্তফা রাঢ়ীসহ অন্যারা আত্মগোপন করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় মুলাদী পৌর শহর থেকে মোস্তফা রাঢ়ী ও আবদুস সত্তার সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. নাঈমুল হক গতকাল রাতে বলেন, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার মাদ্রাসা সহকারী ও ঈমাম মো. শহীদুল ইসলামকে নির্যাতন এবং গলায় জুতার মালা পড়িয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামী ও ঘটনার মূল হোতা দরির চর খাজুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা রাঢ়ী এবং আবদুস সত্তার সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা দয়েরের ৮ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামীসহ তিনজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। খুব শিঘ্র তারা আইনের আওতায় আসবে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, একজনের গলায় জুতার মালা পড়ানো গর্হিত কাজ। ন্যাক্কারজনক এই ঘটনায় ফৌজদারী মামলার পাশাপাশি অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ীকে সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। শিঘ্রই তার বিরুদ্ধে আইনগত এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসক।