জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সম্মেলন ও গুণিজন সম্মাননা অনুষ্ঠিত

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সম্মেলন ও গুণিজন সম্মাননা অনুষ্ঠিত

বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই কেবল রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা কিংবা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলেই হবে না। রবীন্দ্রনাথের বহুমাত্রিক দিক সম্পর্কে জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে রবীন্দ্রনাথ আমাদের পথ দেখাবে।

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ বরিশাল শাখার সপ্তদশ দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও গুণিজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা

 শুক্রবার সকাল ১০টায় নগরীর বগুরা রোডের বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংস্কতিজন অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল। পরে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

এরপর বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তদশ দিবার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সযোগী অধ্যাপক বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ও গবেষক ড. অসীম দত্ত।

সাধারণ সভা ও সম্মেলনের সাংগঠনিক আলোচনায় বক্তারা আসন্ন দুর্গা পূজার মধ্যে মেডিকেল, প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এবং  রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করায় রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বক্তারা বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ওইভাবে পরীক্ষার সময়সূচি করা হয়েছে। ওই পরীক্ষার কারণে কেবল পরীক্ষার্থী নয়, তাদের পরিবার পরিজনসহ সবাই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করা হয়। অবিলম্বে ওই সময়সূচির পরিবর্তন করার দাবি জানানো হয় সম্মেলন থেকে।

দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও সম্মেলন শেষে কাজল ঘোষকে সভাপতি এবং সুখেন্দু শেখর সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

সন্ধ্যা সাতটায় সরকারি বালিকা বিদ্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় গুণিজন সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের শিল্পীদের কণ্ঠে গাওয়া আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে রবীন্দ্রনাথের এই গানের সঙ্গে প্রদীপ জে¦লে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন প্রধান অতিথিসহ অতিথিরা। এরপর নৃত্যাঙ্গন নৃত্য একাডেমির শিল্পীরা পরিবেশন করেন উদ্বোধনী নৃত্য। সংবর্ধিত গুণি ব্যক্তিত্ব ড. কাজী মোজাম্মেলন হোসেনকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয় সম্মিলন পরিষদের পক্ষ থেকে। উত্তরীয় পড়িয়ে এবং সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দিয়ে সম্মান জানান জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গুণিজন সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান ছিলেন, জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান। সম্মাননা জানানো হয় বরেণ্য চিত্রশিল্পী ও গবেষক ড. কাজী মোজাম্মেলন হোসেনকে। অতিথি ছিলেন সাংবাদিক ও সংস্কৃতিজন এসএম ইকবাল, বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা হোসেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার বড়াল।

গুণিজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের রবীন্দ্রনাথকে জানতে হবে। রবীন্দ্রনাথ আমদের জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ আমাদের তাঁর সাহিত্য ভা-ার দিয়ে সত্যিকার মানুষ হওয়ার দিক্ষা দিয়েছেন। তাই কেবল সঙ্গীত নয়, রবীন্দ্রনাথকে জানতে তার শিল্প-সাহিত্য, গল্প উপন্যাশ ও নাটক বেশি বেশি চর্চা করতে হবে।

সংবর্ধিত গুণি ড. কাজী মোজাম্মেল হোসন বলেন, রবীন্দ্রনাথ একজন খটি বাঙালি। আমরা তার কেবল গান, কবিতা ও নাটক নিয়ে কথা বলি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ একজন গুণি চিত্রশিল্পী ছিলেন, সেটা তেমন উঠে আসে না। ছবির মাধ্যমে তিনি প্রকৃতি, প্রেম এবং বিদ্রোহের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। কালের বিবর্তনে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রভাব কমে যেতে পারে কিন্তু তাঁর শিল্পকর্ম কোনদিন তার আভিজাত্য হারাবে না। আমরা যেন রবীন্দ্রনাথের সবদিক নিয়ে চর্চা করি। একই সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মকে রবীন্দ্রনাথ চর্চায় উদ্যোগী করে তুলি।

সম্মাননা শেষে রবীন্দ্রসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেওয়া শিল্পীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান, প্রশিক্ষক ড. অসীম দত্তসহ অতিথিরা। এরপর শিল্পীরা পরিবেশন করবেন রবীন্দ্রসঙ্গীত।