ত্রাণের চাল নিয়ে চালাকি বন্ধ করতে হবে
করোনায় সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও কাতর। প্রায় এক মাস নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কর্মহীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মী। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও এই সময় কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে। আয়হীন এসব মানুষের জন্য সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। যার মধ্যে দ্রুত ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা। ১০ টাকা দামের চাল সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়েছে। জেলেদের জন্য চাল বরাদ্দ অব্যাহত আছে। এর পাশাপাশি খোলা বাজারে টিসিবিও পন্য সরবরাহ করছে। এতো এতা উদ্যোগের পরও সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করার উদ্যোগ দেখে আমরা হতবাক হচ্ছি।
সারা দেশেই ত্রাণের চাল নিয়ে তেলেসমাতির খবর উঠে আসছে গণমাধ্যমে। কখনো ৪০ কেজির পরিবর্তে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে। ত্রাণের চাল অন্য কোথাও বিক্রি করে দেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আবার চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের বাড়ি থেকে শত শত বস্তা চাল জব্দ করা হচ্ছে। করোনার দুর্যোগের মধ্যে এসব খবরে আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। যখন সাধারণ মানুষের ঘরে খাবার সংকট দূর করতে সরকার ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়ে চলেছে, সেই মুহূর্তে এমন ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয়। যারা সত্যিকার চাল চুরির সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে এই চাল আত্মসাতের ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার।
আমরা বিশ্বাস করি প্রশাসন সঠিক কাজটি করে চলেছে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের বাড়ি থেকে প্রায় দুই শতাধিক বস্তা চাল উদ্ধারের ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। আমাদের কোথাও ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো। এটা বলছি এই জন্য, গৌরনদীতে ডিলার চাল বিক্রি করে দিয়েছে এবং অন্য এক গুদাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এটাকে আমরা চুরি কিংবা আত্মত বলবোই। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা সদস্যর বাড়িতে এতো বস্তা চাল কেন রাখা হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। বিষয়টা এমন না হয়, বিকল্প গোডাউন না থাকায় তারা ওই চাল বাড়িতে রেখেছিলেন। কারণ এই দুর্যোগে ২০০ বস্তা চাল অসহায় গরীবদের মাঝে বরাদ্দ না দিয়ে নিজের বাড়িতে রেখে আত্মসাত! কেমন যেন মনে হয়। ৪০ কেজির বদলে ৩০ কেজি দেওয়ার বিষয়টি মানা যায় এবং হচ্ছেও অনেক স্থানে। কিন্তু পুরো চাল আত্মসাত! আমরা আবারো বলছি প্রশাসন অবশ্যই সঠিক তথ্য উপাত্ত নিয়েই চাল জব্দ করেছেন। তারপরও বলতে চাই, এই দুর্যোগের সময় যেন অহেতুক কোন মানুষ হয়রানীর শিকার না হয়।
আমরা বিশ^াস করি, আমাদের অবশ্যই রাজনীতি এবং জনপ্রতিনিধিদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। সব জনপ্রতিনিধি নেতিবাচক কাজের সঙ্গে যুক্ত এমন নয়। অনেক জনপ্রতিনিধি আছেন যারা সরাকারের সহযোগিতার আগেই নিজের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখনো অনেকে সরকারি বরাদ্দের সঙ্গে নিজের অর্থ যোগ করছেন। কিন্তু চাল আত্মসাতের ঘটনা যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে জনপ্রতিনিধিদের ওপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে যেতে পারে। এই মুহূর্তে সেটা কোনভাবেই কাম্য হবে না। কারণ মাঠ প্রশাসনকে করোনা মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দিতে পারে তৃণমূলের এই জনপ্রতিনিধিরা। আমরা যেন কোনভাবেই তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় না করাই। করোনার ঝুঁকির এই সময় আমাদের নজর কোন একটি বিশেষ দিকে নিয়ে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তারপরও বলতে চাই, করোনার এই প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগে কেউ কালি লেপন করতে চাইলে সেটা ঠেকানো অত্যন্ত জরুরী। যারা ত্রাণের চাল নিয়ে তেলেসমাতি করবে তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। কিন্তু সেই আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে যেন কোন প্রশ্ন দেখা না দেয়। সেব্যাপারে মাঠ প্রশাসন বিশেষ করে জেলা প্রশাসন, র্যাব এবং পুলিশের অবশ্যই দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। আমরা চাই, করোনা মোকাবেলায় ঝুঁকির এই মুহূর্তে সরকারি বরাদ্দর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে। আর সেটা করতে হলে অবশ্যই ত্রাণের চাল নিয়ে সব ধরণের চালাকি বন্ধ করতে হবে।