ধর্মের অপব্যাখ্যা বন্ধ না হলে ভাস্কর্য থাকবে না

ধর্মের অপব্যাখ্যা বন্ধ না হলে ভাস্কর্য থাকবে না

সাম্প্রতিক সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙাকে কেন্দ্র করে দেশে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরাও সোচ্চার হয়েছেন। সচিবালয় থেকে শুরু করে তৃণমূলের প্রশাসন এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মিছিল সমাবেশ করেছে। এই সরকারি কর্মকর্তারা যদি কেবল নির্দেশ পালন না করে আন্তরিকভাবে ভাস্কর্য ভাঙার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে থাকেন তাহলে নিঃসন্দেহে আশার সংবাদ। তারপরও বলতে হচ্ছে, কেন ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদ করতে হবে? ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা এই কাজ করছেন তারা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিভ্রান্ত করছেন। এই বিভ্রান্তি বন্ধ করতে না পারালে, বিশেষ করে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা বন্ধ না হলে ভাস্কর্য থাকবে না। সেকারণেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে ভাস্কর্য রক্ষায় সবাইকে একজোট হতে হবে।

বিশে^র ইসলামিক দেশেগুলোর দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখবো সেসব দেশে নান্দনিক সব ভাস্কর্য আছে। সেসব ভাস্কর্যের সৌন্দর্য যাতে মলিন না হয় সেজন্য রাষ্ট্রীয় খরচে সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হয়। তাহলে বাংলাদেশে ভাস্কর্য ভাঙার এই সংস্কৃতি কেন? কারা ভাস্কর্য ভাঙতে অতি উৎসাহী হচ্ছে? কি তাদের উদ্দেশ্য? কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এরা এতটা বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে? সেসব বিষয় খতিয়ে না দেখলে হবে না। আমরা যদি একটু চিন্তা করি, তাহলে এর মূল বিষয় অনুধাবন করতে পারবো। যারা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বহু আগে থেকে ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের সম্পদ গড়ে তুলেছে তারাই কালে কালে, যুগে যুগে ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করেছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম হলেও এদের অপব্যাখ্যার কারণে হামলা, ভাঙচুর এবং দাঙ্গার মতো ঘটনা ঘটেছে। তবে অনেক সময় রাষ্ট্র এদের নেতিবাচক কর্মকা-ে চুপ থাকায় এদের সাহস বেড়েই চলেছে। যার সবশেষ আঘাত হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যর ওপর।

মৌলবাদী গোষ্ঠী যারা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিচ্ছেন তারা কিন্তু আমাদের ইসলামিক দেশগুলোর চিত্র সম্পর্কে জানেন। জানেন না আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ অনেক মানুষ। সেই সুযোগ নিয়ে ওই গোষ্ঠী নতুন করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে কমশিক্ষিত মানুষদের ধর্মের দোহাই দিয়ে ওই চক্র নেতিবাচক কাজ করিয়ে নিচ্ছে। কখনো বেহেস্ত পাওয়ার আশ^াস, কখনো জেহাদের নামে তাদের মানুষের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছে। এদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশের কোন শৈল্পিক নিদর্শন থাকবে না।

মুসলিম বিশ্বে ভাস্কর্য একটি অত্যন্ত সৃষ্টিশীল কাজ হিসেবে স্বীকৃত। ভাস্কর্য হচ্ছে মানুষের চিন্তাশক্তির সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ। এটি দেশের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির পরিচায়ক। যেখানে তুলে ধরা হয় হাজার বছরের ইতিহাস। মুসলিম বিশ্বে রয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্যের নিদর্শন রয়েছে। যেসব ভাস্কর্যে ফুটে উঠেছে ইতিহাসের বীরত্বগাঁথা, মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা আর নিজ সংস্কৃতির নানা দিক। রয়েছে আলাদা কদর। সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, ইরাকের মতো দেশগুলোতেও দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যের দেখা মিলে। ইরাক-ইরান জুড়ে রয়েছে নানা ভাস্কর্য। সিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, কাতার, বাগদাদ, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আবর আমিরাতসহ সব্যত্রই ভস্কর্যের কদর চোখে পড়ে। তাহলে বাংলাদেশে যারা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছেন তারা কোন ইসলামের কথা বলছেন?

অবশ্যই বলা যায় এরা ইসলামের সুন্দর পথে কাঁটা বিছানোর কাজ করছেন। এদের থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যারা এই ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে আমাদের উসকে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এব্যাপারে রাস্ট্রকে কঠোর হয়ে এই মৌলবাদী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।