নগরীর বিপনী বিতানসহ জনবহুল এলাকার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেই, জনসমাগম বন্ধে ব্যবস্থা নিন

করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আমরা এখনো সেভাবে সচেতন হতে পারিনি। এর মূল কারণ হচ্ছে করোনার প্রভাব সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই নেই। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে প্রবাস থেকে দেশে ফেরা নাগরিকদের বিরুদ্ধে। কম-বেশি সচেতনতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জরিমানা করা হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অনেককে। কিন্তু আমাদের দেশের বিপনী বিতানসহ জনবহুল এলাকার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নাই। বরিশালের চকবাজার, বাজার রোড, সদর রোড, মহসিন মার্কেটসহ সকল বিপনী বিতানে জনসমাগম লক্ষ্য করা গেছে। চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে চক বাজারের ভীড় সবচেয়ে বেশি। সচেতনতার সঙ্গে জনসমাগম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। জরুরী যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ।
আমাদের সচেতন করতে গিয়ে অনেক সময় আতঙ্কের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাই করোনা আতঙ্কের কারণে সর্দি-কাশি হলেও কেউ চিকিৎসকের কাছে যেতে চাইছে না। আবার চিকিৎসকরাও সর্দি-কাশির রোগি এড়িয়ে চলছেন। আমাদের অজ্ঞতা এবং রাস্ট্রের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় করোনা প্রতিরোধে নেওয়া উদ্যোগ কাজে আসছে না।
দেশে প্রবাসীরা আসায় আমরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু প্রবাসীদের আসা বন্ধে কোন ব্যবস্থা নেই। অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ দেশ চীনে করোনা আক্রান্তের খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিমান বন্দর বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা করোনা মুক্ত আছে। করোনা প্রতিরোধে বিশ্বের দেশে দেশে যখন আন্তর্জাতিক বিমান বন্ধ করা হয়েছে। কোনভাবে নাগরিকদের দেশ থেকে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না এবং দেশে প্রবেশ করতেও দেওয়া হচ্ছে না। মক্কা-মদিনাসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবারের জুমার নামাজ সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশনা দিয়েছে সেসব দেশ। আর আমদের দেশের মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডাসহ সব স্থান উন্মুক্ত রয়েছে। সেব্যারে আমরা উদ্বিগ্ন নই।
গোটা দুনিয়া আত্মরক্ষায় ব্যবস্থা নিচ্ছে, ঠিক সেই সময় বাংলাদেরে বিমানবন্দর উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এক সাবেক মেয়র বিদেশ থেকে এসে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। জনসভা করেছেন তিনি। একই সময়ে দেশে চলছে নির্বাচন। হাজার হাজার প্রবাসী চীন, ইটালীসহ করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে এবং আসছে। ওইসব প্রবাসীরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। বিদেশ ফেরত নাগরিকদের নিজের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরী। একদিকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, অন্যদিকে জরুরী ভিত্তিতে জনবহুল স্থানে মানুষের ভীড় কামাতে হবে। একই সঙ্গে বিপনী বিতান, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমাহলসহ সব ধরণের জমায়েত বন্ধে রাস্ট্রের নির্দেশনা থাকতে হবে।
সরকার আমাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু কিভাবে সতর্ক থাকবে তার কোন নির্দেশনা নেই। গত ১৬ মার্চ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু কেন বন্ধ হয়েছে এবং ওই শিক্ষার্থীরা বাড়ি গিয়ে কি করবে তার কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে বাড়ি গিয়ে সব শিক্ষার্থীরা বিনোদকেন্দ্র এবং জনবহুল এলাকায় নির্বিকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিদেশ থেকে নাগরিকরা দেশে আসছেন। প্রবাসীদের আসা বন্ধ হয়নি। অন্যদিকে বিমানবন্দর থেকে তারা বাড়ি ফিরে কি করবেন সেরকম কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে বিনোদনকেন্দ্র, সিনেমাহল, বিপনী বিতানের ভীড় কমছে না। বন্ধ হচ্ছে না বিবাহ অনুষ্ঠানসহ পারিবারিক অনুষ্ঠানও। লঞ্চ, স্টীমার, বাসসহ গণ পরিবহন চলাচলে সতর্কতা নির্দেশনা নেই। যে যেমন পারছেন এক স্থান থেকে অন্যস্থানে অনায়াসে আসা-যাওয়া করছেন। এই যথেচ্ছার চলাচল বন্ধ করতে কোন নির্দেশনা নেই।
করোনা প্রতিরোধের সঙ্গে হোম কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশন এই ইংরেজি শব্দ দুটি আমাদের ভোগাচ্ছে। এই শব্দ দুটির অর্থ আমরা অনেকেই জানি না। রাষ্ট্র এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ওই ইংরেজি শব্দই ব্যবহার বেশি হচ্ছে। কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশনের মানে না জানার করণেও বিদেশ ফেরত এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে পৃথক করা যাচ্ছে না। সবাই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছেন। আমাদের জন্য করেন্টাইন, আইসোলেশন বুঝিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। সেটা হয়নি। আমদের দেশের বেশিরভাগ মানুষকে সতর্ক করতে হলে অবশ্যই এই উদ্যোগ নিতে হবে।
আইসোলেশন কি? এটা স্পষ্ট করে বলতে হবে। কারও শরীরে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পেলে এবং পরীক্ষায় করোনা ভাইরাস পজিটিভ হলে, তাকে আইসোলেশনে (পৃথক) স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা দরকার। আইসোলেশনের সময় চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে থাকতে হয় রোগীকে। অন্য রোগীদের কথা ভেবে হাসপাতালে তাদের জন্য আলাদা জায়গা তৈরি করে দিতে হবে। আর হোম কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে, নিজের বাড়িতে বাইরের লোকজনের ওঠাবসা বন্ধ করে আলাদা থাকা। কোন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ঘুরে এলে, বা রোগীর সংস্পর্শে এলে তার শরীরে করোনা ভাইরাস থাকতে পারে বা সে আক্রান্ত কি না এটা বুঝে নিতেই এই ব্যবস্থা নিতে হবে। তাকে ন্যুনতম ১৪ দিন ধরে আলাদা থাকতে হবে। এই বিষয়টি সহজ করে দেশের মানুষদের বোঝানো দরকার।
সরকার প্রবাসীদের বাড়িতে রাখার জন্য ভ্রাম্যমান আদতালত পরিচালনা করছেন। অভিযান চলছে হাত শোধনের উপকারণসহ পন্যের বেশি মূল্য নেওয়ার বিরুদ্ধে। করোনা প্রতিরোধে জরুরী প্রযোজনী প্রাথমিক ব্যবস্থা পেতে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই, ভ্রাম্যমান আদালতের পাশাপাশি, নাগরিক সচেতনতায় বেশি বেশি উদ্যোগ নেওয়া হোক। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, লঞ্চ, বাসসহ গণপরিহণ, জনবহুল এলাকা, সিনেমা হল, বিপনী বিতানের ভীড় কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হোক। এসব বিষয় সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে করোনা আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাবে সাধারণ মানুষ।