নগরীর রসুলপুর কলোনীতে দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ ও পানি নেই

নগরীর রসুলপুর কলোনীতে দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ ও পানি নেই

বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরঘেষা রসুলপুর কলোনীতে (বস্তি) মানবিক সংকট চলছে। দুইদিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ওই কলোনীর এক হাজার পরিবারের অন্তত ৮ হাজার মানুষ। বিদ্যুত না থাকায় সুপেয় পানিও পাচ্ছেন না তারা। দীর্ঘ সময় বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন থাকায় বিভিন্ন বাসা-বাড়ি এবং দোকানের ফ্রিজে রাখা খাদ্য সামগ্রী পঁচে গেছে। বৈদ্যুতিক পাখা চালাতে না পারায় তীব্র গরমে ত্রাহি অবস্থা।

গত মঙ্গলবার কলোনীর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন রসুলপুর কলোনীর বাসিন্দারা।
ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারি জমিতে বসতি হওয়ায় নিজ নিজ নামে বৈদ্যুতিক মিটার পাচ্ছেন না তারা। কলোনীর একটি উন্নয়ন সমিতি কার্যালয়ের মিটার থেকে সাব মিটার নিয়ে তারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করতেন। প্রতিমাসে তারা সাব মিটারের বিল পরিশোধ করলেও আদায়কারীরা ব্যাংকে বিলের টাকা জমা না দেয়ায় হঠাৎ করে গত মঙ্গলবার কলোনীর বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। রসুলপুর কলোনীর হাজার পরিবারের দুর্দশার কথা স্বীকার করলেও কিভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারছেন না স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হারুনর রশীদ।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে ওই এলাকায় তাদের ১৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। বকেয়া বিল পরিশোধ করলে পুনরায় রসুলপুর কলোনীর বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হবে।
ওই কলোনীর বাসিন্দারা জানান, বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে কীর্তনখোলা নদী ড্রেজিং করে সংলগ্ন রসুলপুর এলাকায় পলিমাটি ফেলা হয়। পলি ফেলায় নদীর তীরে একটি চরের আকৃতি হলে সেখানে বসতি স্থাপন করতে থাকে ভূমিদস্যুসহ ভূমিহীনরা। ধীরে ধীরে প্রায় ১ হাজার পরিবার বসতি স্থাপন করে সেখানে। রসুলপুর চর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত হলেও সেখানে কোন নাগরিক সুবিধা ছিলো না। পরবর্তী সময় তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরন চরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে সেন্ট্রাল ডিজেজ কন্ট্রোল (সিডিসি) নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বেশকিছু রাস্তাঘাট, টয়লেট ও কমিউনিটি স্কুল এবং কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করেন। কিন্তু চরের জমি বসতি স্থাপনকারীদের নামে রেকর্ডভুক্ত (সরকারি খাস খতিয়ান) না হওয়ায় তারা সরাসরি বৈদ্যুতিক মিটার পাচ্ছিলেন না। ওই সময় মেয়র হিরন সিডিসি কার্যালয়ের একটি মিটার থেকে সাব মিটারের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারকে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দেন। তারা প্রতিমাসে সাব মিটারের রিডিং অনুযায়ী ইউনিট প্রতি সাড়ে ১২ টাকা হারে বিল পরিশোধ করতেন সিডিসি কর্তৃপক্ষকে। তারা ওই বিল জমা দিতেন ব্যাংকে। এভাবেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছিলেন ওই চরের প্রায় ৮ হাজার মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে সিডিসি’র আনিস এবং পরশ নামে দুই ব্যক্তি সাব মিটারের বিল আদায় করেন।

চরের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, একটি মিটার থেকে ৪০০ সাব মিটার নিয়ে কলোনীর বাসিন্দারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। এ কারণে তারা ব্যাংকে বিল জমা দিতে পারেন না। দায়িত্বপ্রাপ্ত আদায়কারীকে নিয়মিত বিল পরিশোধ করেন। তাদের কোন মাসের বিল বকেয়া নেই। তারপরও তাদের নামে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা বকেয়া দাঁড়িয়েছে। এ কারণে মঙ্গলবার সকালে বিদ্যুত বিভাগ সংযোগ লাইন কেটে দিয়েছে। 

কলোনীর বাসিন্দা হেনা বেগম বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর থেকে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন তারা। আগে টিউবওয়েল থাকলেও সেটি বিকল। বিদ্যুত না থাকায় সাবমারসেবল পাম্প দিয়ে পানি উত্তোলন করা যাচ্ছেন না। এ কারণে খাবার পানি পাওয়া যাচ্ছে না। গোসল, রান্না, থালাবাসন ও কাপড় ধোয়াসহ গৃহস্থালী অন্যান্য কাজ করতে পারছেন না তারা। বিদ্যুত না থাকায় বৈদ্যুতিক পাখা চালাতে পারছেন না। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বাসিন্দারা। 

আরেক বাসিন্দা মো. আইউব আলী বলেন, খাবার পানির জন্য গর্ভবতী নারীসহ শিশুরা হাহাকার করছে। বিভিন্ন ঘর ও দোকানের ফ্রিজে রাখা মাংশ, মাছ ও খাবার সামগ্রী পঁচে গেছে। রসুলপুর চরের সমস্যা দেখার কেউ নেই বলে তিনি আক্ষেপ করেন। রসুলপুর চরের প্রত্যেক পরিবারকে সরকারিভাবে বৈদুতিক মিটার দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হারুনর রশীদ বলেন, রসুলপুর কলোনীর হাজার পরিবারের দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। সাময়িক সময়ের জন্য কলোনীতে গতকাল সিটি করপোরেশন থেকে দুই গাড়ি পানি দেয়া হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় কম। সাড়ে ১২টাকা ইউনিট হারে প্রতিমাসে সাব মিটারের বিল পরিশোধের পরও সাড়ে ১৩ লাখ টাকা বকেয়া হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। আদায়কারীরা ব্যাংকে বকেয়া বিলের টাকা জমা না দিলে কিভাবে রসুলপুর চরেরর সমস্যা সমাধান হবে সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারছেন না ওয়ার্ড কাউন্সিলর। 

বরিশাল ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড (ওজোপাডিকো) বরিশাল বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন বলেন, ওই কলোনীতে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি না থাকায় ঘরে ঘরে মিটার দেয়া যায়নি। একটি মিটারের মাধ্যমে ৪০০ সাব মিটারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। সেখানে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা বিল বকেয়া হওয়ায় মঙ্গলবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। বকেয়া বিল জমা দিলে ফের সংযোগ পুনস্থাপন করে দেয়ার কথা বলেন তিনি।

সব শেষ বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত রসুলপুর কলোনীর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।