নারী দিবসের আহ্বান, সব দলের মূলকমিটিতে ৩৩ ভাগ নারী অন্তর্ভুক্তি হোক

বরিশালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বক্তারা সব রাজনৈতিক দলের মূল কমিটিতে ৩৩ ভাগ নারী অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। বক্তারা আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্যের আলোকে বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, অবস্থান ও ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে সুদৃঢ় করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশমালা তুলে ধরেন।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল নগরীর গ্রান্ড পার্ক সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ওই আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়।
‘প্রত্যেকের জন্য সমতা: রাজনীতিতে নারী’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে বিবৃতি পাঠ করেন পটুয়াখালী জেলা জাতীয়তাবাদী দলের যুগ্ম সম্পাদক এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র লিডার ফেলো ও ‘নারীর জয়ে সবার জয়’ নেটওয়ার্ক মেম্বার জেসমিন আক্তার; নারীর ক্ষমতায়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরগুনা জেলা থেকে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল-এর রাজনৈতিক ফেলো বিথী হাওলাদার পূজা। এছাড়াও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে সুদৃঢ় করতে সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়।
পরে একটি প্রদর্শনী ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ‘এই সংসদ মনে করে, পুরুষতান্ত্রিকতাই রাজনীতিতে নারী অন্তর্ভূক্তির প্রধান অন্তরায়’ বিষয়ের উপর অনুষ্ঠিত ছায়া সংসদ বিতর্কে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নারী নেতৃবৃন্দ সরকারি দলে অংশ নেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পুরুষ নেতৃবৃন্দ বেসরকারি দলে। ছায় সংস বিতর্কে স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহসিনা হোসাইন, বিচারক ছিলেন, দৈনিক সমকালের ব্যুরো প্রধান পুলক চ্যাটার্জী এবং উন্নয়ন সংগঠক রহিমা সুলতানা কাজল।
নারী দিবসকে কেন্দ্র করে কুইজ প্রতিযোগিতা ও ‘ফান বক্স’ খেলার আয়াজন করা হয়। ছিল সম্মননা স্মারক বিতরণ পর্ব ও নারী দিবসকে কেন্দ্র করে গান।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলের চালকের আসনে নারী। দুটি প্রধান দলের শীর্ষ পদে নারী নেতৃত্ব থাকা সত্ত্বেও আমাদের রাজনৈতিক কাঠামো নারীর ক্ষমতায়নের সহায়ক নয়। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাও তাদের রাজনীতিতে আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক দলগুলোকে অঙ্গীকার পূরণ করতে হলে তৃণমূল পর্যায় থেকে নারী নেতৃত্ব গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে। তবে সংখ্যা পূরণই একমাত্র প্রতিকার নয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে এমন উন্নত পর্যায়ে নিতে হবে, যেখানে পুরষের পাশাপাশি নারীরা সমভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণে আগ্রহী হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চা বাড়াতে পারলে তৃণমূল থেকে নারী নেতৃত্ব গড়ে তোলা সম্ভব।
বক্তারা আরো বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ২০০৯ (সংশোধিত) অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যেই মূল দলের সকল পর্যায়ের কমিটিগুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে ৩৩ ভাগ নারী অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, জাতীয় পর্যায়ের কমিটিতে নারী অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি থাকলেও ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত দলের নেতৃত্বস্থানীয় পদগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ খুবই নগণ্য। নারী নেতাদের সুপারিশমালা নিচে উপস্থাপন করা হলো:
নারী দিবসের আলোচনায় বক্তারা বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে -
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ২০০৯ (সংশোধিত) ধারা ৯০বি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল কর্তৃক কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন করা। এই সেল রাজনৈতিক দলের তৃণমূল কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে কি না তা নিয়মিতভাবে মনিটর করবে। তৃণমূল পর্যায়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ২০০৯ এর ধারা ৯০বি বাস্তবায়নে অগ্রগতির উপর রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নির্বাচন কমিশনে বাৎসরিক প্রতিবেদন পেশ করার বাধ্যবাধকতা থাকা।
২০২০ সালের মধ্যে মূলধারার কমিটিতে ৩৩ ভাগ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রত্যেক দলের নিজস্ব রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। নারীর জন্যে দলের ভিতরে এবং বাইরে নিরাপদ এবং সহযোগিতামূলক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা। নারীদের রাজনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। কে›ন্দ্রীয় মনিটরিং সেল বিভিন্ন কমিটিতে নারীদের ৩৩ ভাগ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণে কোন কমিটি ব্যর্থ হলে জবাবদিহিতার জন্যে কমিটিকে অবগত করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানাতে পারে। কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদে নারী নেতাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং মূলধারার রাজনীতিতে যোগ্য নারী নেতার সংখ্যা বাড়ানো।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি জেলার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, জাতীয় পার্টির নারী ও পুরুষ নেতৃবৃন্দ; সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ; সাংবাদিকবৃন্দ এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিবৃন্দ। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের রিজিওনাল ম্যানেজার দিপু হাফিজুর রহমান।
মূলদলে নারী অন্তর্ভূক্তিতে ভূমিকা রাখায় ‘নারীর জয়ে সবার জয়’ চ্যাম্পিয়ন এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগ এবং বরগুনা জেলা জাতীয়তাবাদী দলের মোট ৬ জন নেতৃবৃন্দকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর নেতৃবৃন্দের হাতে এ এ্যাওয়ার্ড তুলে দেন বরগুনা জেলা জাতীয়তাবাদী দলের নেতা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-এর নেতৃবৃন্দের হাতে এ এ্যাওয়ার্ড তুলে দেন ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের নেতা। এছাড়া সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের দুই প্রবীণ নারী নেতৃকে।
এই অনুষ্ঠানটি ইউএসএআইডি ও ইউকেএইড এর যৌথ অর্থায়নে ‘Strengthening Political Landscape in Bangladesh’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে নারীর জয়ে সবার জয় ক্যাম্পেইনের আওতায় আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) আরও বেশি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্যে সক্রিয় নাগরিকবৃন্দ ও সংবেদনশীল সরকার সমূহকে সহায়তা প্রদান করছে এবং সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক দলসমূহকে সাথে নিয়ে কাজ করছে।