নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ নেই ইলিশ ধরা, চাই কার্যকর পদক্ষেপ

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রজনন মৌসুমের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ১৪ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, বেচাকেনা, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস্য বিভাগ। নিষেধাজ্ঞা শুরুর সময় থেকে বরিশাল বিভাগের সর্বোত্র চলছে মৎস্য বিভাগের নেতৃত্বে অভিযান। যে অভিযানে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোষ্টগার্ড, নৌ-বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী সহায়তা করছে। এতো নজরদারীর মধ্যেও ইলিশ আহরণ বন্ধ হচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ নেই ইলিশ আহরণ। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় মা ইলিশ আহরণ কিছুটা কম বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। যেসব নদীতে অবাধে ইলিশ শিকার করতে দেখা গেছে তার কোন কোন ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোস রয়েছে। যোগাযোগের ভিত্তিতেই ইলিশ আহরণ ও বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কেবল আইন করে এবং নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হবে না। প্রয়োজন সদিচ্ছা। আর সদিচ্ছার সঙ্গে আন্তরিকভাবে সবার ভূমিকার রাখা দরকরা। ক্ষুদ্র স্বার্থকে ত্যাগ করলেই বড় ধরণের পরিবর্তন সম্ভব হবে। এব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেই হবে।
গত সোমবার বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার শরষী তদন্ত কেন্দ্রের সামনে থাকা নদীতে দিনের বেলা নির্বিঘেœ ইলিশ মাছ ধরতে দেখা গেছে। শরষী খেয়া পারাপারের সময় খেয়ায় দুই পুলিশ সদস্য থাকলেও তারা এব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেননি। পরে জানা গেছে, তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যদের ম্যানেজ করেই নির্বিঘেœ ইলিশ ধরা হয় ওই নদীসহ আসপাশের নদীগুলোতে। প্রকাশ্যে মাছ বিক্রি এবং হাতে চার-পাঁচটি ইলিশ নিয়ে যেতেও দেখা গেছে। এরকম অবস্থাতো কেবল একটি এলাকার। যা সাদা চোখে দেখা গেছে। কিন্তু অদেখা ইলিশ আহরণের খবর তো আমাদের জানার বাইরে। এদের বিরুদ্ধে কে কি ব্যবস্থা নেবে।
আমরা শুনি দরিদ্র জেলেরা পেটের দায়ে ইলিশ শিকার করে। বাস্তবে কথাটা অনেকাংশে সত্যি নয়। সরকার মা ইলিশ রক্ষায় নিষিদ্ধ সময়ের জন্য প্রত্যেক জেলেকে যে পরিমাণ চাল দিচ্ছে তারপর নদীতে নামার কথা নয়। তাহলে কেউ তাদের নদীতে নামাচ্ছে। কারা তাদের নদীতে নামচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে সত্যিকার ইলিশ রক্ষা করা কঠিন হবে। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে যদি শতভাগ ইলিশ শিকার বন্ধ করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের সব নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে। আমরা চাই, সেই পরিস্থির দিকে দেশকে নিয়ে যেতে সবাই উদ্যোগী ভূমিকা নেবে।
আবার এ কথাও সত্য ইশিল মাছ রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। প্রতিদিন লাখ লাখ মিটার জাল জব্দ করা হচ্ছে। জেলেদের আটক করে জেল জরিমানা দেওয়া হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে বরিশাল বিভাগে প্রায় ৫০০ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে দ- দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় বিভিন্ন নদী থেকে আহরণ করা প্রচুর পরিমাণ ডিম ওয়ালা মাছ জব্দ করা হয়েছে। সারা দেশের হিসেবে তা কয়েক টন ছাড়িয়ে যাবে। ওই পরিমান মা ইলিশ রক্ষা করতে পারলে ইলিশ আর পানি সমান হয়ে যেত। তাই মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এব্যাপারে শূন্য সহনশীল নীতি অনুসরণ করতে হবে। যে, যিনি কিংবা যারাই ইলিশ শিকারের সঙ্গে জাড়িত প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যে প্রশাসনের চোখের সামনে ইলিশ মাছ আহরণ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান সফল হবে না। আমরা চাই, সরকার ও প্রশাসন সেই উদ্যোগ নিক।
##