পটুয়াখালী ডিবি কার্যালয়ের গ্রিল ভেঙে আসামি পলায়ন

মোস্তাফিজুর রহমান সুজন, পটুয়াখালী
পটুয়াখালীতে বৃদ্ধ দম্পতি খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে আটক সাইফুল ইসলাম (২৫) ডিবি কার্যালয়ের জানালার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সাইফুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী বল্লভপুর গ্রামের মৃত মোস্তফা প্যাদার ছেলে।
পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেন, সাইফুল ইসলাম একজন ভয়ংকর ও পেশাদার চোর। আটক হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় পালাতে সক্ষম হন সাইফুল। এঘটনায় গণমাধ্যমে কথা বলতে চান না পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা। তবে সাইফুলকে আটক করতে পুলিশের একটি টিম তৎপর রয়েছে।
জানা গেছে, সাইফুল আটক হওয়ার পর রাতে নিরাপত্তা হেফাজতে না রেখে পুরোনো ডিবি কার্যালয়ে রাখার কারণে পালাতে সক্ষম হয়। ৩১ অক্টোবর সকাল দিকে সদর উপজেলা বহালগাছিয়া থেকে আটক হন সাইফুল।
নিহতের বাড়ি সংলগ্ন দোকানি রফিক গাজী বলেন, ‘৩১ অক্টোবর সকালে তার এক প্রতিবেশী মামলার বাদী হিমুদের বাড়ি পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন দেখতে পান বাড়ির সীমানা দেয়ালের ভেতর থেকে একটি বস্তা বাহিরে ফেলা হচ্ছে। পথচারী যুবক দৌড়ে এসে আমাকে জানালে এলাকাবাসীকে নিয়ে অজ্ঞাত এক যুবককে আটক করে নিহতের ছেলে ও মামলার বাদী হিমুকে কল করে জানাই। তখন হিমু পুলিশ পাঠানোর কথা বলে এবং ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মাথায় পুলিশ এসে যুবককে নিয়ে যায়।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে নিহত দম্পতির একমাত্র ছেলে আবুল বাশার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ওরফে হিমু বলেন-“আমি ব্যাবসায়িক কাজে ঢাকাতে থাকি। গত ৩১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রতিবেশী লিমন তার গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে যেতে দেখেন, বাড়ি সীমানা দেয়ালের ভেতর থেকে একটি বস্তা সড়কে ফেলা হয়েছে।
এসময় স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে এক যুবককে আটক করে বিষয়টি আমাকে মুঠো ফোনে জানান। পরে ঘটনাস্থলে থাকা তার চাচা ইব্রাহীম, ভাজিতা আহাদ এবং বাড়ি সংলগ্ন দোকানি রফিক গাজীর সঙ্গে মুঠো ফোনে কথা বলে নিশ্চিত হন। পরে তাৎক্ষণিক পটুয়াখালী সদর সার্কেলের অ্যাডিশনাল এসপিকে কল দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন। পরে ডিবি পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবককে নিয়ে আসে।
হিমু আরও বলেন, ‘‘রাত ১১টার দিকে মামলার তদন্তকারী অফিসার পটুয়াখালী ডিবির ওসি মিজানুর রহমানের সঙ্গে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি আমাকে বলেন ‘আটক যুবককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্য-উপাত্থ পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে কিছু বলা যাবেনা”।
ডিবি পুলিশের এসআই দাউদুল আলম বলেন, “মামলাটির তদন্ত অফিসার ডিবি পুলিশের ওসি স্যারের নির্দেশে ঘটনাস্থল পৌঁছে জনতার হাত থেকে সাইফুলকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। এরপর ঘটনা সর্ম্পকে আমি অবগত নই, বিষয়টি সিনিয়র অফিসাররা জানেন”।
মামলার তদন্ত অফিসার পটুয়াখালী ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, “আমার এক আত্মীয় অসুস্থ,তাই জরুরি কাজে বরিশালে আছি। আসামি পলায়ন সর্ম্পকে আমি জানি না, আপনি মিডিয়াসেলের সঙ্গে কথা বলুন”।
চলতি বছরের ২৪ জুলাই বিকালে পটুয়াখালী সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের বহালগাছিয়ার নিজ বাড়ি থেকে প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক আশ্রাব আলী (৭০) ও তার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম(৬০) এর গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তৎকালীন সরকার পতনের আন্দোলনে এমন এঘটনায় নড়েচড়ে বসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও চুলচেরা বিশ্লেষণে ঘটনার ক্লু উদ্ঘাটন করতে ব্যর্থ হন সংশ্লিষ্টরা। ২৬ জুলাই নিহতের ছেলে আবুল বাশার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ওরফে হিমু বাদী হয়ে পটুয়াখালী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। যদিও ওই মামলায় কারো নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি। এ মামলাটি তদন্তর দায়িত্ব দেন ডিবি পুলিশের ওসিকে। কিন্তু সরকার পতনের আন্দোলনে নানা ঘটনায় তদন্ত গতিরোধ হয়।