ফরিদপুরে আজিজ ইনস্টিটিউটের মাঠে বিএনপির সমাবেশ

ফরিদপুরে আজিজ ইনস্টিটিউটের মাঠে বিএনপির সমাবেশ

১২ নভেম্বর ফরিদপুরে অনুষ্ঠেয় বিএনপির বিভাগীয় গণ সমাবেশ করার প্রস্তাবিত মাঠ বরাদ্দ না পাওয়ায় পর প্রশাসনের প্রস্তাবিত কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউটের মাঠ মেনে নিয়েছে বিএনপি। তবে এ ঘটনাকে 'আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন' বলে অভিযোগ করেছে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক।

এদিকে, সমাবেশ আয়োজনের লক্ষ্যে সোমবার (৭ নভেম্বর) ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশের মাঠটি পরিদর্শন করেছে কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ।

এর আগে, জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এই মাঠে জনসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন। এর মধ্যেই, সমাবেশ সফল করতে শহরে ডিজিটাল ব্যানার টানানো শুরু হয়ে গেছে। তবে, রবিবার পর্যন্ত মাঠ নিয়ে সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় ওই ব্যানারগুলোতে গণ সমাবেশের স্থান উল্লেখ করা হয়নি।

এ সমাবেশ সফল করতে কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় মত বিনিময় সভা করেছে। এছাড়া প্রতিদিন জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাতে এ গণসমাবেশের সমন্বয়কারী কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির ফরিদপুর দলের দুই সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) খন্দকার মাশুকুর রহমান ও মো. সেলিমুজ্জামান ফরিদপুরে অবস্থান করে গত প্রায় এক পক্ষকাল ধরে কাজ করছেন। এ কার্যক্রমের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান ওমর।

সমাবেশকে সফল করতে গঠিত হয়েছে ছয়টি প্রস্তুতি কমিটি। এ কমিটিগুলি হচ্ছে ব্যবস্থাপনা কমিটি, অভ্যর্থনা কমিটি, আপ্যায়ন কমিটি, প্রচারণা কমিটি, সংবাদিক সমন্বয় কমিটি ও শৃঙ্খলা কমিটি। জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর  বিএনপি এ গণসমাবেশের জন্য অম্বিকা ময়দান, জনতা ব্যাংকের মোড় ও ফরিদগপুর জিলা স্কুলের মাঠ এর যে কোনো একটি চেয়ে আবেদন করেন। ওই দিন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের কাছে লিখিত ভাবে এ আবেদন জানান। তবে গত ১৬ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ওই সরকারী রাজেন্দ্র কলেজের মাঠটি আগের প্রস্তাবনার সাথে জুড়ে দেওয়া হয়।

শনিবার (৫ নভেম্বর) বিএনপির ফরিদপুর বিভাগের অন্তর্গত পাঁচটি জেলার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা জেলা কার্যালয়ে এক সভা করে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে যে কোনো মূল্যে গণসমাবেশ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। রবিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় জেলা নেতৃবৃন্দ বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক ও দুপুর ২টায় পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাৎ করে সমাবেশের মাঠ হিসেবে রাজেন্দ্র কলেজের মাঠ দেওয়ার আবেদন জানানয়। তবে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উভয়েই এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে এ জাতীয় সমাবেশ হলে চলমান এইচএসসি পরীক্ষা ব্যাহত হবে। শহরে যানজট সৃষ্টি হবে এবং দলীয় ও ভিন্নদলের রাজনীতির বিভেদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও শহরে উপর অসংখ্য হাসপাতাল ক্লিনিক রয়েছে যেখানে রোগীরা ভর্তি রয়েছে তাদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। বিএনপি নেতাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ গণসমাবেশ করার জন্য শহরের থেকে আনুমানিক ছয় কিলোমিটার দূরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পূর্বদিকে অবস্থিত কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউটে করার মৌখিক অনুমতি দেয়।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা বলেন, দেশের অন্য যে সব জায়গায় গণসমাবেশ হয়েছে সেসব জায়গায় বিএিনপি যে মাঠ চেয়েছে প্রশাসন সেই মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু ফরিদপুরে এর ব্যতিক্রম ঘটলো।

তিনি বলেন, মাঠ বরাদ্দ না দেওয়ার পেছনে অনেক যুক্তি থাকতে পারে কিন্তু সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দেওয়ার মানসিকতা ও সদিচ্ছাই মূখ্য ভূমিকা পালন করে। যেহেতু বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার মানে না সেহেতু মাঠ বরাদ্দ না দেওয়ার জন্য তাদের অজুহাতের শেষ নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসন যে মাঠটি বরাদ্দ দিয়েছে সেটি ঢাকা-খুলনা মহা সড়কের পাশে অবস্থিত। ১০ নভেম্বর থেকেই জনতার চাপে ওই মহাসড়ক আটকে যাবে। তখন সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে যানবাহন চলাচলের সমস্যা হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরও তারা ওই মাঠটি বরাদ্দ দিয়েছে।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রেস উপ কমিটির আহ্বায়ক এ বি সিদ্দিকী মিতুল বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ ভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সমাবেশ করতে চায়।

‘গায়ে পড়ে আমরা ঝগড়া করতে চাই না’-মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে কোমরপুরের আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউটে গণসমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে আমরা সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি।