বন্যা মোকাবিলায় সব ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

বন্যা মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বন্যায় ভেঙে পড়বেন না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’
মঙ্গলবার (২১ জুন) সকালে সিলেট সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বন্যায় ঘাবড়ালে চলবে না। বাংলাদেশের মানুষকে সবসময় এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করতে হবে; এই মানসিকতা সবার থাকতে হবে।’
দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নও এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলে মাটি উঁচু করে আর কোনও রাস্তা করা হবে না, এলিভেটেড রাস্তা হবে। এলিভেটেড রাস্তা করা হলে সেটা সহজে নষ্ট হয় না, বন্যার মতো দুর্যোগে যাতায়াতেও সুবিধা হয়।’
পাশাপাশি নদীগুলোর গভীরতা ঠিক রাখতে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু একবার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করলে হবে না। তারপর নিয়মিত মেনটেইন্যান্স ড্রেজিং করতে হবে।’
নিজের ছোটবেলায় সিলেটে বেড়াতে যাওয়ার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশাল বিশাল ড্রেন ছিল, সব বাড়ির সামনে পানি যাওয়ার ড্রেন ছিল, তার ওপর স্ল্যাব দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা। দুর্ভাগ্য, এখন কিন্তু নাই। বিল্ডিং বানিয়ে এমন অবস্থা… পানি যাওয়ার জায়গা নাই। পানি যাওয়ার জায়গা তো লাগবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে সময় যারা তৈরি করেছিলেন, প্রকৃতির কথা চিন্তা করেই করেছেন। কিন্তু এখন আমাদের সময়ে যারা করছেন, তারা হয়তো চিন্তাভাবনা করছেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিলেট অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের যত খাদ্য ও ওষুধ লাগে সব দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বা বিরোধী দল; আওয়ামী লীগ যেখানেই থাকুক না কেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সর্বদা সারা দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের জন্য কাজ করছেন। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা অন্য যেকোনও দুর্যোগে আমরা সবসময় মানুষের পাশে থাকি এবং মানুষকে আমাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবো।’
তিনি বলেন, যেকোনও দুর্যোগে আওয়ামী লীগ অন্যদের তুলনায় দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। সর্বোপরি আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে যাবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, বন্যায় মাছচাষিরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন সেজন্য ব্যবস্থা নেবে সরকার।
বন্যায় যারা ত্রাণ বিতরণ কিংবা উদ্ধার কাজ করছেন, তাদেরও সাবধানে থাকতে হবে বলেও সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট সেনানিবাসের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বন্যা ও এর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
বিভাগীয় প্রশাসন জানিয়েছে, চারটি জেলার ৩৩টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে ৪৫ লাখের বেশি মানুষ বন্যার পানিতে ডুবে আছে এবং ৪ দশমিক ১৪ লাখের বেশি মানুষ ১২৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া, বন্যাদুর্গতদের চিকিৎসার জন্য ৩০০টিরও বেশি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে এবং ২৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে বন্যায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং ৪০ হাজার পুকুর ও হ্যাচারি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে আনুমানিক ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল ১০টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে সেখান থেকে সিলেট সার্কিট হাউজে যান তিনি।
সিলেট সার্কিট হাউজে প্রধানমন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসনে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘মতবিনিময় সভায়’ অংশ নেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।