বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, স্যালাইনের সংকট ,মৃত্যু ৪

বরগুনায় হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্বি পেয়ে চিকিৎসা দিতে হিমসিম পাচ্ছে চিকিৎসক ও স্বাস্হ্য কর্মীরা।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে জানুয়ারী থেকে আজকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় ৪ হাজার ৫৯৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। সিভিল অফিসের সূত্রমতে মৃত্যুর সংখ্যা ২ হলেও আজ পর্যন্ত বে-সরকারী হিসাবে মৃত ৪। এরমধ্যে বেতাগীতেই মারা গেছে ৩ জন।
ডায়রিয়ার তীব্র চাপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্হ্য কেন্দ্র গুলোতে স্হান সংকটের পাশাপাশি আইভি স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। বরগুনার জেনারেল হাসপাতাল ও বেতাগী, বামনা,পাথরঘাটা স্বাস্হ্য কেন্দ্রে জরুরী ভিত্তিত্বে ১ হাজার এম,এল, আইভি স্যালাইন দিয়েছেন সংসদ সদস্য নাদিয়া সুলতানা।
১৮ এপ্রিল সিভিল সার্জন ডাঃ মারিয়া হাসান, মহাপরিচালক স্বাস্হ্য অধিদপ্তর বরাবরে ১ হাজার এম,এল ৩২ হাজার এবং ৫ শ' এমএল ২৪ হাজার আইভি স্যালাইনের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন।
সিভিল সার্জন ডাঃ মারিয়া হাসান বলেন,হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় চাপ বৃদ্বি পাওয়ায় কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোপূর্বে স্হানীয় বিশিষ্ট নাগরিকরা আমাদের বেশ কিছু আইভি স্যালাইন দিয়েছেন।
সংরক্ষিত আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ব্যাক্তিগত উদ্দোগে আইভি স্যালাইন দিয়ে সংকটময় অবস্হায় সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে বলেন,চাহিদাপত্রের স্যালাইন আসতে ৩-৪ দিন লাগতে পারে।আমরা সাধ্যমত চেস্টা করে যাচ্ছি ডায়রিয়ার রুগীদের সেবা দিতে।
এদিকে বরগুনার বেতাগীতে হু হু করে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জনবল ও স্থান সংকট, আইভি স্যালাইনের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন দ্রুত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতাল কম্পাউন্ড, মেঝে ও সিঁড়িতেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় নতুন করে বলইবুনিয়ার আহম্মেদ হাওলাদার (৬৫) সহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ শত ১৪ জন ডায়রিয়া রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৯ জন। ভর্তি আছেন ৭৫ জন।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স ছবি মন্ডল জানান, গত শুক্রবার থেকে গড়ে প্রতিদিনই ৫০-৬০ জন মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তবে দিন দিন সংখ্যা বেড়েই চলছে। বেসরকারি হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। করোণা আতঙ্ক ও এমনিতেই হাসপতালে জায়গা নেই। তাই অনেকেই বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আয়শা বেগম নামের এক রুগীর জানান, এখানে দুর্ভোগের শেষ নেই। চিকিৎসকরা কাকে রেখে কাকে দেখবেন বলাই মুশকিল। ছেলের আশঙ্কা জনক অবস্থা তাই না থেকে উপায় নেই।
এরই মধ্য আইভি স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাইরের ফার্মেসি থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর জন্য স্যালাইন কিনতে হচ্ছে বেশী দাম দিয়ে। এই সুযোগে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোম্পানীর লোকজন চড়া দামে কলেরা স্যালাইন বিক্রিরিএমনও অভিযোগ রয়েছে। আশার কথা ইতোমধ্যে বরগুনার মহিলা সংসদ সদস্য নাদিরা সুলতানা’র পক্ষ থেকে ৩ শত এবং বেতাগী উপজেলা পরিষদ’র পক্ষ থেকে ৩ শত কলেরা স্যালাইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তেন মং জানান, সরকারী ভাবে কখনো আসবে স্যালাইন জানিনা।তবে সংরক্ষিত-সংসদ সদস্য তাৎক্ষণিক যে স্যালাইন দিয়েছেন তা দিয়ে কয়েকদিন চালাতে পারবো আশা করছি।স্থানীয়রা জানায়, এখন চড়া দামেও স্যালাইন মিলছেনা।
বেতাগী পৌর শহরের পাইকারী ওষুধ বিক্রেতা রনজিৎ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, গত মঙ্গলবার থেকে ৪-৫ দিন ধরে আইভি স্যালাইনের তীব্র সংকট চলছে। স্যালাইনের জন্য মানুষ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।
উল্লেখযোগ্য কোম্পানীর বরিশাল ডিপোতেও চাহিদাপত্র দিয়েও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছেনা। মানুষ এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। কষ্টের কথা স্যালাইনের সংকট থাকায় এর আগেও যার ৫টি দরকার ছিল। তাকে ১টি দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।