বরিশালের ‘ওসিসি’ চলছে যেভাবে

বরিশালের ‘ওসিসি’ চলছে যেভাবে

বাকেরগঞ্জের আসমা এখানে এসে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে হন্যে হয়ে খুজে খুজে নাগাল পেয়েছে ওই হাসপাতালেই সরকারী একটি প্রকল্পের। যেখানে তার সব সহায়তা জুটবে বলে সে আগেই জানতে পেরেছিলো। কিন্তু বাস্তবে তার সেই আশা পুরন হচ্ছে হয়নি । কেবল ওই আসমাই নয়, একই হয়রানীর শিকার হয়েছে নলছিটির ফাতেমা, বরিশাল সদরের ডলি । এখানে এই অবস্থার শিকার হয়ে শেষ পযর্ন্ত কোন গতি না পেয়ে নির্যাতনকারীর সঙ্গে মিমাংসায় যেতে বাধ্য হয়েছে আগৈরঝাড়ার আকলিমা। এমনকী নির্যাতনকারীর সঙ্গেই তার বিয়ে হয়েছে সম্প্রতি। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ওসিসিতে খোজ নিয়ে জানা গেছে, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সহ ৫টি গুরুত্ব পূর্ন মন্ত্রনালয়ের একটি যৌথ প্রকল্প ‘ওসিসি’ কে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না বরিশালের বিভিন্ন থানা। এমনকি ওই প্রকল্পের বিষয়ে কোন খোঁজ খবরও রাখেন না তারা। ফলে অনেকটা নিভৃতে বিদেশী দাতা সংস্থা ও সরকারের মোটা অংকের টাকা গচ্ছা যাচ্ছে । মহিলা ও শিশু বিষয়ে মন্ত্রনালয়ে সূত্র থেকে জানা গেছে। ডানিডার ও অর্থায়ন ‘মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োলেন্স এ্যাগেইন্সড ওমেন’ নামের একটি প্রকল্পের প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে দেশের সব কয়টি বিভাগীয় শহরে হাসপাতালে একটি করে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) গঠন করা হয়। যেখানে দৈহিক নির্যাতনের শিকার শিশু ও নারীদেরকে চিকিৎসা, পুর্নঃবাসন, আইনগত সহায়তা সহ প্রয়োজনীয় অপরাপর সহায়তা প্রদানের নীতিমালা রয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০০৪ থেকে ২০০৭ সন পর্যন্ত। প্রকল্পের সঙ্গে একীভূত মন্ত্রনালয়গুলো হচ্ছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক, স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়, তথ্য মন্ত্রনালয়, সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয় ও আইন বিচারক সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় । এই প্রকল্পের মোট ব্যয় বরাদ্ধ রয়েছে ১৮ কোটি ৬ লাখ ২২ হাজার টাকা। এরমধ্যে ডানিডার দেওয়া ১৫ কোটি ৭০ লাখ ৫২ হাজার এর বাকী ২ কোটি ৩৫লাখ ৬০ হাজার টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। বরিশাল ওসিসির দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, প্রকল্প ভুক্ত প্রতিটি ও সি সি’র মতই বরিশাল শেরেই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসিসিতে একজন পরিচালক, একজন সমন্বয়কারী, ৩ জন মেডিকেল অফিসার (ডাক্তার), একজন সমাজ কল্যান কর্মকর্তা, ৫ জন নার্স, পুলিশের দু’জন এস.আই, ১জন কনস্ট্রবল, ১ জন কম্পিউটার অপারেটর ও ৩ জন ক্লিনার প্রেষনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন হারে মোটা অংকের বেতন পেয়ে থাকে। সেই সঙ্গে রয়েছেন আইন মন্ত্রনালয়ের আওতায় একজন আইনজীবী। ওই প্রকল্পের আইন কর্মকর্তা বরিশাল আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট মনিরা বেগম জানান, প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এখানে তারা মোট ৮জন ভিকটিমকে সহায়তা দিয়েছেন। তবে তারা বিভিন্ন থানার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ও নীতিমালা অনুসারে সহযোগিতা পাচ্ছেন না। যার ফলে ভিকটিমরা তাদের প্রত্যাশানুসারে মামলা দায়ের বা আইনগত সুবিধা গ্রহনে ব্যর্থ হচ্ছেন। কোন কোন থানায় তারা মামলা দায়েরের জন্য গেলেও থানা পুলিশ মামলা নিতে চায় না এবং ওসিসির কার্যক্রমকেই তারা মানতে চায় না। গত কয়েক মাসে কেবল মাত্র বরিশাল কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া আগৈলঝাড়া , বাকেরগঞ্জ ও নলছিটি থানায় গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে তাদেরকে। যে বিষয়টি তারা গত ১৫ আগস্ট বরিশালের পুলিশের ডিআইজির সঙ্গে দেখা করে তাকে অবহিত করেছেন। আইনগত সহায়তা একজন নির্যাতিতা তরুনী জানায়, সে ওসিসিতে গিয়ে চিকিৎসা সহায়তা পেলেও আইনগত সহায়তা পাচ্ছে না, থানা মামলা নেয় না বলে ওসিসি থেকে তাকে জানানো হয়। ফলে প্রতিদিন সে ওসিসি কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্না দিচ্ছেন। এদিকে ওসিসির মাধ্যমে মামলা দায়েরে ব্যর্থ হয়ে শেষ পযর্ন্ত নির্যাতন কারীর সঙ্গে বিয়েতে সম্মত হওয়া আগৈলঝাড়ার আকলিমার বিষয়টি অবহিত আছেন আগৈলঝাড়া থানা পুলিশও। আগৈলঝাড়া থানার ওসি সুলতান আহম্মেদ প্রথমআলোকে জানান, আকলিমার বিষয়ে মামলার জন্য একটি আবেদন তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু ওই মামলা দায়েরের পূর্বের দন্ত পযার্য়েই তিনি জানতে পারেন অভিযোগকারী ও অভিযুক্তর পক্ষ মিল মিশ হয়েছে এবং ছেলে- মেয়ের মধ্যে বিয়ে হয়েছে ও নিযার্তিতা ওই ওসিসি থেকে চলে গেছে স্বামীর সঙ্গে। তাই আর মামলা নেওয়া হয়নি। তবে বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রথমআলোকে জানান, ওসিসি থেকে যাওয়া কোন মামলা কোন থানায় গ্রহন না করার ঘটনা তার জানা নেই, বরং গুরুত্ব সহকারেই ওই মামলা নেওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।