বরিশালে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় উপস্থিত হননি সাদিক ও খোকন সেরনিয়াবাত

বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আয়োজিত জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলে না প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। কেন্দ্রীয় নেতার বলছেন, মেয়র প্রার্থী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকার জন্য আসতে পারেননি। আর সাদিক নির্বাচন পরিচালনার কাজ করবেন ঢাকায় থেকে। তবে এ নিয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাদেও অভিযোগ, নৌকার নির্বাচনী কার্যক্রমে নেমে তারা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এসময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেন বিসিসি নির্বাচনে দলের কেন্দ্রীয় টিম লিডার। ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে একজোট আছেন বলেও দাবি করেছেন নেতারা।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় গৌরনদী পৌরসভা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বিসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির টিম লিডার ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি।
সভায় দলের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, সদস্য গোলাম রাব্বানীর চিনু ও গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, সদর আসনের এমপি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বরিশাল ২ আসনের এমপি মো. শাহ আলম, বরিশাল ৪ আসনের এমপি পংকজ নাথ, সংরক্ষিত এমপি রুবিনা আক্তার মিরা সহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সকল উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র গণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি গাজী নঈমুল হোসেন লিটু এই বর্ধিত সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ উপস্থিত না থাকার কারণ জানতে চান।
মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা শুরু থেকেই নৌকার পক্ষে কাজ করতে চেয়েছি। আমাদের কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা ঘরে বসে থাকি। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমরা যাতে নৌকার পক্ষে কাজ করতে পারি সেই পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়ে যান।
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে উল্লেখ করেন। এই নির্বাচনে ভুলত্রুটি শুধরে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া দলীয় এমপি এবং স্থানীয় নেতারা যেকোনো মূল্যে নৌকা প্রার্থীকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ১২ জুন নৌকা বিজয়ী করতে সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, নৌকার মনোনয়ন দেয়াকে কেন্দ্র করে বরিশালে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আজকের বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে সকল ভেদাভেদের অবসান হলো। নেতাকর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, কোনক্রমে অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেলে এই নির্বাচন পরিচালনার যিনি টিম লিডার তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুখ দেখাবেন কিভাবে? আর নেতাকর্মীরা-ই বা টিম লিডার এর কাছে দাঁড়াবে কিভাবে।
সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, সিটি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের একটি প্রস্তুতি, রিহার্সাল। এই নির্বাচনে জেতার জন্য যা যা করা দরকার তাই করতে হবে। কিন্তু বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে একটা গন্ধ পাচ্ছি। জেতার আগে যদি কেউ জিতে যায়, তাহলে সে জিততে পাওে না। আমার ধারণা আমার ভাই খোকনের চারপাশে চারপাচ টা লোক আছে। যারা তাকে ভুল বোঝাচ্ছ। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এর নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান টিম আমরা করব। এই টিম দুষ্টচক্র খুঁজে বের করবে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা ভাইয়ের (আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ) নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন সেই নির্দেশ দেয়ার জন্যই এই বর্ধিত সভা। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিটি ওয়ার্ড নেতাকর্মীরা কসম কেটে মাঠে নামলে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে নৌকা প্রার্থী বিজয়ী হবে। তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন আমাদের জন্য একটি শিক্ষা। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের একটি ব্যারোমিটার। বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকা বিজয়ী করে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেব। এই জয়ের মধ্য দিয়ে হাসানাত ভাইয়ের মুখ উজ্জল করব এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
সভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত না আসার কারণ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বর্ধিত সভা শেষে গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি বরিশাল শহরে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন, এ কারণে আসতে পারেনি। অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মনোনয়ন বঞ্চিত সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ঢাকায় থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন।