বরিশালে ব্রকলি চাষে সাফল্য
বরিশালে ব্যতিক্রমী ফল ও সবজি চাষ করে কৃষি বিভাগের সম্মান অর্জন করা চাষি গিয়াসউদ্দিন লিটু এবার ব্রকলি চাষ করে সাফল্য দেখিয়েছেন। ব্রকলি বাজারজাত করে লাভবানও হয়েছেন তিনি। একই চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন আবদুল বারেক হাওলাদারও। বরিশালের চাইনিজ রেস্তোঁরায় বেশি চলে ব্রকলি। তবে সাধারণ মানুষও আকৃষ্ট হচ্ছে ব্রকলি দিকে।
‘ব্রকলি’ দেখতে অনেকটা ফুলকপির মতো। কিন্তু পুষ্টিগুন ফুলকপির চেয়ে অনেক বেশি। বাজার মূল্যও ফুলকপির চেয়ে বেশি। এক কেজি ওজনের একটি ব্রকলি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমা হক জানান, বরিশাল নগরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন লিটু একজন সৌখিন চাষি। ব্যতিক্রম ফুল-ফলের চাষ করে থাকেন তিনি। ১০ বছর আগে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করে আলোচনায় আসেন লিটু। ফুল বিক্রি করেও লাভবান হয়েছেন গিয়াসউদ্দিন লিটু। এরপর তিনি নজর দিয়েছেন আরএক ব্যতিক্রমী সবজি ‘ব্রকলি’ চাষে। বরিশালে চাইনিজ রেস্তোঁরার বাইরে এই সবজির তেমন পরিচিতি এখনো ঘটেনি। তারপরও তিনি আশা করছেন বরিশালে ব্রকলি চাষে লাভবান হওয়া যাবে। এ বছর তিনি ৩ শতাংশ জমিতে ব্রকলি চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগ তার পাশে থেকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
ভিডিও দেখুন- https://youtu.be/ZLwLhdxTCQc
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আতিকুর রহমান সবুজ জানান, ব্রকলি চাষে সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলন বেশি হয়। তাছাড়া এর পুষ্টিগুণও অনেক বেশি। রাতকানা রোগসহ অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও রয়েছে ব্রকলিতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গিয়াসউদ্দিন এবং তার ছেলে রকিবুল হাসান হৃদয় কাজ করছেন। খামার পরিদর্শনে এসেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশালের উপপরিচালক হরিদাস শিকারীসহ তাদের সহকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাষাবাদ বিশেষ করে সবজি ও ফল চাষে দীর্ঘদিনের আগ্রহ থেকেই এই পেশায় আসেন গিয়াস উদ্দিন লিটু। শুরুতেই ফুল ও ফলে নতুনত্ব আনতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবেন তিনি। প্রথমে তার নিজস্ব কয়েক শতাংশ জমিতে গ্লাডিওলাস ফুল, পেয়ারা এবং পেঁপে ও অন্যান্য সবজি চাষ শুরু করেন। আস্তে আস্তে জমির পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে গিয়াসউদ্দিন প্রায় দেড় একর জমিতে চাষাবাদ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর ব্রকলি সবজি চাষ করেছেন। সবজির পাশাপাশি পেয়ারা, মাল্টা, বিভিন্ন জাতের সুইট মেলন, বেশ কয়েকটি জাতের ফলের চাষ করছেন। তার এই ব্যতিক্রমী চাষের সাফল্য দেখে উৎসাহিত হয়ে অনেক সৌখিন চাষিও ভিন্ন ও নতুন নতুন জাতের ফল উৎপাদনে ঝুঁকছেন।
ভিডিও দেখুন- https://youtu.be/ZLwLhdxTCQc
গিয়াস উদ্দিন লিটু বলেন, কৃষিতে ভিন্ন ধারা সৃষ্টির জন্য আমি ১০ বছর আগে ফুল চাষ শুরু করি। সেখানেও সাফল্য পেয়েছি। এরপর বিদেশি মরুর ফল চাষ করেছি। এবার ব্রকলি চাষ শুরু করেছি। পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় কৃষি বিভাগও আমাকে উৎসাহ দিচ্ছে। বরিশালে আমি বাজারও সৃষ্টি করতে পারবো। পরিকল্পনা আছে অমৌসুমে তরমুজ ফলানোর এবং ড্রাগন ফল চাষের।
গিয়াসউদ্দিন লিটুর এই চাষাবাদে সহযোগী হয়ে কাজ করেন তার ছেলে রকিবুল হাসান হৃদয়। ঝালকাঠি কৃষি ডিপ্লোমা বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারে অধ্যয়ন করা রকিবুল জানায়, বাবার ভিন্ন মাত্রার চানাবাদ দেখে আমিও উদ্বুদ্ধ হয়েছি। পড়াশুনার ফাঁকে আমি বাবার সঙ্গে কাজ করি। কৃষি বিষয়ে আমি নতুন নতুন বিষয় জেনে বাবার কাজে উৎসাহ দেই। সঙ্গে কৃষি বিভাগ সরেজমিনে খামারে এসে পরামর্শ দিচ্ছে, সার্বিক সহযোগিতাও দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ। ব্রকলি চাষে সাফল্য এসেছে। আমাদের খামারে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেছি।
নগরের লাইনরোডের বাকেরগঞ্জ বীজ ভা রের স্বত্তাধিকারী এসএম জাকির হোসেন বলেন, বরিশালে ব্যতিক্রমী সবজি ফল চাষ করে দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে গিয়াস উদ্দিন লিটু। তিনি আমাদের কাছ থেকে ব্যতিক্রমী বীজ সংগ্রহ করেন। কেবল সংগ্রহই করেন না, তিনি সেসব বীজের সফল উৎপাদক হয়েছেন। আমরা তার সবজি এবং ফলে বাজার সৃষ্টিতেও সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করি। এবার বরিশালে তিনি ব্রকলি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তবে বরিশালে এখনো ব্রকলির তেমন পরিচিতি ঘটেনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশালের উপ-পরিচালক হরিদাশ শিকারী বলেন, বরিশালে ব্রকলি চাষ লিটু এবং দুলাল নামে দুইজন কৃষক শুরু করেছেন। ব্রকলি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি। ফুল কপির চেয়ে কয়েকগুন বেশি পুষ্টি রয়েছে ব্রকলিতে। এটার চাষ বৃদ্ধি পেলে আমাদের পুষ্টি চাহিদা মেটাবে। তিনি আরো বলেন, লিটু আমাদের একজন ভালো মানের কৃষক। ব্যতিক্রমি বিভিন্ন সবজি ও ফল চাষ করে সে কৃষি বিভাগকেও সমৃদ্ধ করছে। আমরা তার চষে প্রযুক্তিগত পরমার্শ ছাড়াও সার বীজ দিয়ে সহায়তা করছি। এর বাইরেও আমরা মাঝে মাঝেই তার খামারে গিয়ে রোগবালাই সম্পর্কে সচেতন করি।
ভিডিও দেখুন- https://youtu.be/ZLwLhdxTCQc