বরিশালে লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের পৃথক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা

বরিশালে লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের পৃথক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা

বরিশালে লকডাউন বাস্তবায়নে পৃথক দুটি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। অপরদিকে লকডাউন বাস্তবায়নসহ করোনা সংক্রামন রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে নগরীতে র‌্যালী করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। উভয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউনকালীন সময়ে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের না হতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। 

সোমবার থেকে করোনা সংক্রামণ রোধে ১ সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার।

সোমবার সকাল থেকে লকডাউন কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল হুদা এবং আতাউর রাব্বীর নেতৃত্বে নগরীর সদর রোড, নতুনবাজার, নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, বাংলাবাজার, সাগরদী ও চৌমাথাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়। এ সময় মাস্ক না পড়া এবং অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ৮ ব্যক্তি এবং অপ্রয়োজনে দোকান খোলা রেখে আড্ডাবাজী করার দায়ে ৫ প্রতিষ্ঠান থেকে ১১ হাজার ৮৮০ টাকা জরিমানা আদায় করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হুদার ভ্রাম্যমান আদালত। 

অপরদিকে একই কারনে ৫ জন ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউর রাব্বীর নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমান আদালত। 

এ সময় উভয় ভ্রাম্যমান আদালত মোট ১ হাজার মাস্ক ও ৩০০ হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেন। তারা লকডাউনকালীন সময়ে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করেন। 

এদিকে লকডাউনকালীন সময়ে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে নগরীতে র‌্যালী করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় মেট্রো পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খানের নেতৃত্বে নগরীর জিলা স্কুল মোড় থেকে র‌্যালী বের হয়। র‌্যালীটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। 

এ সময় লকডাউন বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় নগরবাসীর সহায়তা কামনা করেন পুলিশ কমিশনার। 

আসন্ন রমজান এবং লকডাউনকে কেন্দ্র করে বরিশালের বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। লকডাউনে কি পরিস্থিতি হয় এমন আশংকায় গত শনিবার সরকারী ঘোষনার পরপরই বাজারমুখী হয় ক্রেতারা। গতকাল রবিবার মুদী বাজার ও কাঁচা বাজারে আরও উপচেপড়া ভীর লক্ষ্য করা গেছে। কে কার আগে বাজার সদাই নেবেন এমন প্রতিযোগীতা চলছে বাজারে। তবে মূল্য বৃদ্ধির কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বাজারে পন্যের যথেস্ট সরবরাহ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে কোন ধরনের গুজবে কান না দিয়ে অতিরিক্ত পন্য কেনা থেকে বিরত থাকার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।  

পবিত্র শবে-ই বরাতের পরই রমজানমুখী কেনাকাটা শুরু করেন ক্রেতারা। তবে গত শনিবার সরকারী ঘোষনায় আজ সোমবার থেকে সারা দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত জানানোর পর বাজারে হুমড়ী খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। একে তো রমজান আসন্ন, তার উপর আবার সোমবার থেকে লকডাউন। তাই সামনে কি পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তা নিয়ে সন্দিহান ক্রেতারা। তাই আর দেরী না করে মুদি ও কাঁচা বাজার থেকে যে যা পারছেন কিনছেন। প্রয়োজনের চেয়েও বেশী পন্য কিনছেন অনেকে। এ কারনে বাজারে প্রচুর ভীর লক্ষ্য করা গেছে। অতিরিক্ত ভীরের কারনে বাজারে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষিত হয়েছে চরমভাবে। 

তবে বাজারে কোন নিত্য পন্যের ঘাটতি নেই বলে দাবী নগরীর পিঁয়াজপট্টির আড়তদার এনায়েত হোসেনের। ক্রেতারা হুজুগে অতিরিক্ত কেনাকাটা করছেন বলে দাবী ফরিয়াপট্টির মুদি দোকানী মো. রুবেলের। 

এদিকে বাজারে হুজুগে অতিরিক্ত কেনাকাটা এবং ক্রেতাদের অতিরিক্ত ভীর ঠেকাতে একাধিক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল দুপুরে নগরীর বাজার রোড, ফরিয়াপট্টি ও পিঁয়াজপট্টিতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী সুজা বলেন, লকডাউনকে কেন্দ্র করে বাজারে অতিরিক্ত ভীর এবং অতিরিক্ত কেনাকাটা লক্ষ্য করা গেছে। বাজারে কোন পন্যের সংকট নেই। যথেস্ট পন্য মজুদ রয়েছে। জেলা প্রশাসন ক্রেতাদের অতিরিক্ত কেনাকাটা না করার অনুরোধ করছে। একই সাথে বাজারে শারীরিক দূরত্ব সহ স্বাস্থ্য বিধি রক্ষায় প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত।