বরিশালে শ্মশান দিপাবলী উৎসব আজ

বরিশালে শ্মশান দিপাবলী উৎসব আজ

বরিশালে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শ্মশান দিপাবলী উৎসব আজ। এদিন সমাধীর পাশে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করবেন স্বজনরা। পাশাপাশি প্রয়াত প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে তার সমাধিস্থলে নিবেদন করা হবে প্রয়াতের পছন্দের নানা ধরনের খাবার।

দিপাবলী উৎসবকে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে নগরীর কাউনিয়া মহাশ্মশানে প্রয়াতদের সমাধি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং রঙের কাজ করছেন তাদের স্বজনরা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস কালি পূঁজার আগের দিন ভূত চতুর্দশী তিথিতে পূজা অর্চনা করলে প্রয়াত ব্যক্তির আত্মা শান্তি লাভ করে। তাই আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি প্রয়াত প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে তার সমাধিস্থলে নিবেদন করা হয় প্রয়াতের পছন্দের নানা ধরনের খাবার। সবকিছু করা হয় তিথি থাকা অবস্থায়। এছাড়া সমাধীর পাশে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করেন স্বজনরা।

বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার বলেন, ‘ভ‍ূত চতুর্দশীর পূণ্য তিথিতে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও আয়োজন করা হয়েছে দিপালী উৎসবের। শ্মশানে চলছে ধোয়া মোছার শেষ মুহুর্তের কাজ। প্রিয়জনের সমাধি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর রং-তুলির কাজ আজকের মধ্যে শুক্রবার শেষ হয়। গত দুদিন ধরে শ্মশানের ভেতরে এবং বাইরে আলোকসজ্জার কাজ করা হচ্ছে।তমাল মালাকার জানান, তিথি শুরু হলেও প্রয়াতদের স্বজনদের ভিড় শুরু হবে দুপুরের পর থেকে। লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জী কুডু জানান, কথিত আছে এশিয়া মহাদেশ তথা পৃথিবীর বৃহত্তম আয়োজন এটি। ভারতে এটি দীপাবলি উৎসব নামে পরিচিত হলেও বরিশালে শশ্মান দীপাবলি উৎসব হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। নতুন পুরনো মিলিয়ে বরিশাল মহাশ্মশানে কাঁচা-পাকা মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার সমাধি রয়েছে।

এছাড়াও প্রায় ৯শত সমাধি রয়েছে, যাদের স্বজনরা এ দেশে থাকেন না। সেসব সমাধিগুলোকে হলুদ রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সমাধিগুলোতে কমিটির উদ্যোগে দিপালী উৎসবের দিন সন্ধ্যায় মোমবাতি, ধূপকাঠি ও প্রদীপ প্রজ্বলন করা হবে।মানিক মুখার্জী কুডু জানান, ৫ একর ৯৬ শতাংশ জমির উপর স্থাপিত মহাশ্মশানের পুরনো অংশের অধিকাংশ সমাধি ধ্বংস হয়ে গেলেও এখনো সেখানে ব্রাহ্মণদের ২/৩টি এবং রূপসী বাংলার কবি জীবনান্দ দাসের বাবা সত্যানন্দা দাস ও পিতামহ (দাদা) সর্বানন্দা দাস, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা মাসি মা, শিক্ষাবিদ কালি চন্দ্র ঘোষসহ খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সমাধি রয়েছে।

শশ্মান দিপাবলী উৎসব নির্বিঘ্ন এবং উৎসবমুখর করতে মহাশ্মশানের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে ২৬টি সিসি ক্যামেরা এবং নিয়োগ করা হয়েছে ২০০ স্বেচ্চাসেবী।বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, শশ্মান দীপাবলি উৎসবকে নির্বিঘ্ন এবং উৎসবমুখর করতে শশ্মান এলাকায় শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।