বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর ভীড়, স্যালাইনের সংকট

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর ভীড়, স্যালাইনের সংকট

বরিশাল মহানগরসহ বরিশাল জেলা ও বিভাগে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রতিদিন রোগীর ভীড় বাড়ছে। এখন পর্যন্ত বিভাগে ২৯ হাজার ১১৪জন রোগী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে জায়গা সংকটের সঙ্গে ডায়রিয়া স্যালাইনেরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রোগীদের বাহির থেকে উচ্চমূল্যে স্যাল্ইান কিনে আনতে হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীর বাড়তি চাপের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ সামাল দিতে না পেরে মেঝেতে এবং গাছতলায়ও রোগী রেখে চিকিৎসা সেবা নিতে দেখা গেছে। এক পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল চত্বরে প্যা-েল নির্মাণ করে দেয়। তারপরও রোগীর চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। একই অবস্থা বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ জেলার অন্যান্য উপজেলা স্বস্থ্যকমপ্লেক্সের চিত্র।

এদিকে স্যালাইন সংকটের কথা অস্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে একজন রোগীকে ২-৪ টা পর্যন্ত আইভি স্যালাইন দেয়া যায়, কিন্তু তার বেশি প্রয়োজন হলে তা সম্ভব হয় না। তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, কেউ সর্বোচ্চ ১টার বেশি আইভি স্যালাইন পাচ্ছে না। আর রাতের বেলা ভর্তি হওয়া রোগীরা একটা স্যালাইনও পাচ্ছে না।


আমিনুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজন জানান, গতকাল সন্ধ্যার পর তার রোগীকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর চিকিৎসা সেবা তাৎক্ষণিক শুরু হলেও আইভি স্যালাইন সরকারিভাবে হাসপাতাল থেকে না পাওয়ায় বাহির থেকে কিনে আনতে হয়েছে।
৯২ টাকা মূল্যের একটি স্যালাইন হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকান থেকে ১২০ টাকায় কিনে আনতে হয়েছে।

সোহেল নামে অপর রোগীর স্বজন জানান, তার রোগী ভর্তির পর প্রথম স্যালাইনটি পেয়েছেন, এরপরেরগুলো তাদের বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হয়েছে। তবে সবথেকে বেশি সমস্যা হচ্ছে গরম। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ভেতরে কোন জায়গা না থাকায় বাহিরে খোলা জায়গায় প্যান্ডেলের নীচে রোগীদের রাখা হচ্ছে। প্রচ- গরমে রোগীরা হাসফাস করছে। এছাড়াও একাধিক রোগীর স্বজনরা এমন অভিযোগ করেছে।

সরেজমিনে বরিশাল সদর হাসপাতালের ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে রোগীদের প্যান্ডেলের বাহিরে গাছ তলাতে কিংবা ভ্যানের ওপর রাখতেও দেখা গেছে। তবে যেখানেই থাকতে হয় না কেন এ হাসপাতালে রোগী আসার পরপরই তার চিকিৎসাসেবা শুরু হয়ে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগীর স্বজনরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, একজন রোগী আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতাল থেকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। সেটা ১টা বা যে কয়টা প্রয়োজন হয় তাই দেয়া হয়। স্যালাইনের সংকট না থাকলেও রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা ব্যালেঞ্চ করে চালাতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে একজন রোগীর অনেক বেশি স্যালাইনের প্রয়োজন হলে তা হয়তো দেয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু ২-৫টা স্যালাইন রোগী প্রতি গড়ে দেয়া হচ্ছে। যদিও একবারে অসহায় রোগীদের ক্ষেত্রে হিসেবটা সম্পূর্ণই আলাদা।

এ বিষয়ে বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালের আরপি ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৯৬ জন রোগী ভর্তি ছিলো। দুপুরে সুস্থ হওয়া রোগীদের ছেড়ে দেয়ার পর বর্তমানে ৫০-৬০জন রোগী চিকিৎসাধীন আছে। এর সঙ্গে একটু পরপরই নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। অথচ জেনারেল হাসপাতালে মহিলা ও পুরুষ মিলে মাত্র ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ড। কিন্তু সেখানেই ২৪টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সম্প্রতি যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনাসহ সবকিছুতে হিমশিম ক্ষেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় প্যান্ডেল করে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে আরো ৯টি বেড দেয়া হয়েছে। তারপরও রোগীর চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডায়রিয়ার ভয়াবহ অবস্থা কেবল বরিশাল সদরেই নয়। গত প্রায় ১ মাস ধরে গোটা বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগও।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, বরিশাল বিভাগে এপর্যন্ত ডায়ারিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ২৯ হাজার ১১৪। সব থেকে বেশি আক্রান্ত জেলা ভোলায়। হঠাৎ করে ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে যেটুকু জানা গেছে, তাতে ডায়রিয়ায় শহরের মানুষ তেমন আক্রান্ত না হলেও বেশি আক্রান্ত হচ্ছে উপকূল ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসের আবহাওয়া প্রচুর পরিমাণ গরম হওয়ায় খাবার থেকে ডায়রিয়া ছড়াচ্ছে। তীব্র গরমে রাস্তার পাশে শরবত, বরফ দিয়ে আখের রস তৈরি করা হয়। এসব শরবত বা জুস তৈরিতে মাছ প্রক্রিয়াজত করণের বরফ ব্যবহার হচ্ছে। এসব রাস্তার পাশের জুস খেয়েও আক্রান্ত হচ্ছে।