বরিশাল বিএনপি’র তর্জন-গর্জন নেই

বরিশাল বিএনপি’র তর্জন-গর্জন নেই
বরিশাল বিএনপি’তে এখন আর তর্জন-গর্জন দেখা যায় না। আগে দলের যে কোন স্থানীয় কিংবা কেন্দ্রিয় কর্মসূচিতে ভীর হলেও এখন আর তেমন কর্মী আসছে না। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়েই চলে দলীয় কার্যক্রম। একটা সময় ছিলো মহানগর বিএনপি’র সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার উপস্থিত থাকলে কর্মসূচীতে উপস্থিতি হাজার ছাড়াতো। এখন আর সেই দিন নেই। সরোয়ার থাকুক আর অন্য নেতারা থাকুক বেশীরভাগ সময়ে দলীয় কার্যক্রমে উপস্থিতি শতকের নিচে ঠেকেছে। দির্ঘ ১৩ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা নেতাকর্মীরা পুরনো মামলা থেকে আত্মরক্ষার চেস্টা ছাড়াও নতুন কোন ঝামেলার আশংকায় গাঁ বাঁচিয়ে চলছেন। দুর্দিনে নেতাদের অসহযোগীতার কারনেও ঘর মেরেছেন তনমূলের অনেক কর্মী-সমর্থক। অনেকে আবার অস্তিত্ব রক্ষা সহ নানাবিধ সুবিধা পেতে যোগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। ছাত্রদল হয়ে এখন জেলা (দক্ষিন) যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, রাজনীতিতে ওইভাবে সক্রিয় নেই আবার আছেন। দেশে কোথাও রাজনীতি নেই। দলেও কার্যক্রম নেই। এই দলের ভবিষ্যত কি তাই ভেবে পাচ্ছেন না। বিগত সিটি নির্বাচনের সময় প্যানেল মেয়র ও মহানগর বিএনপি’র মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আয়শা তৌহিদ লুনা, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মহানগর বিএনপি নেতা খাইরুল মামুন শাহিন ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম সহ অনেকে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে স্বাচ্ছন্দ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্যানেল মেয়র আশা তৌহিদ লুনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এপ্রেসিয়েট না করলে তিনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন না। বিসিসির কাউন্সিলর বেশীরভাগ আওয়ামী লীগের। তারা ভোট দিয়েছে বলেই তিনি প্যানেল মেয়র হতে পেরেছেন। তারা গ্রহন করেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। ছাত্রদল এবং পরবর্তীতে ওয়ার্ড বিএনপি থেকে মহানগরীর মূল দলে পদ পেয়ে ২০১৩ সালে একবার কাউন্সিলর নির্বাচিত খাইরুল মামুন শাহিন বলেন, বিএনপি’র নেতৃত্বের উপর অবশ্যই ক্ষোভ ছিলো। ১৫-২০ বছর ছাত্রদল করার পরও যদি দলে পদ-পদবী কেনা লাগে। তাহলে সেই দল করে কি লাভ ? মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর আহব্বানে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। সুযোগ-সুবিধা নিতে আওয়ামী লীগে যাননি, তবে এখানে কদর পাচ্ছেন বলে দাবী করেন বিগত জাতীয় নির্বাচনের সময় বিএনপি’র হয়ে ৩ মামলার আসামী শাহিন। বিএনপি’র বর্তমান দৈন্য চিত্র ফুটে উঠেছে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে গত ১৮ জুলাই নগরীর কেন্দ্রিয় ঈদগাহ ময়দানে বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশে। ওই দিন আশুনুরূপ লোকসমাগম হয়নি বলে মনে করছেন অনেকে। অথচ একই দাবীতে একই স্থানে গত বছরের ৭ এপ্রিল বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশে ছিলো জনসমাগম। তবে তবে এবারের বিভাগীয় সবাবেশও সফল হয়েছে দাবী নেতাদের। তৃনমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা মুখ ফিরিয়ে নিলেও নেতায় নেতায় দ্বন্ধ প্রকট আকার ধারন করেছে বরিশাল বিএনপি’তে। নেতারা একই সভা-সমাবেশ মঞ্চে পাশাপাশি আসনে বসলেও পেছনে পেছনে আলাদা গ্রুপিং নিয়ে ব্যস্ত। ৩ বছর মেয়াদী মহানগর এবং দুই জেলা (উত্তর ও দক্ষিন) বিএনপি’র কমিটি ৩ থেকে ৬ বছরের মেয়াদোত্তীর্ন হলেও আওতাধীন কমিটিগুলো হালনাগাদ করতে পারেন নি নেতারা। ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর মেজবাউদ্দিন ফরহাদকে সভাপতি এবং আ ক ন কুদ্দুসুর রহমানকে সাধারন সম্পাদক করে উত্তর জেলা বিএনপি’র ১৫১ সদস্য বিশিস্ট কমিটি গঠিত হয়। ৩ বছর মেয়াদের কমিটিতে ৯ বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত মেহেন্দিগঞ্জ ও গৌরনদী পৌর সহ গৌরনদী, মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা ও আগৈলঝাড়া থানা কমিটি হালনাগাদ করতে পেরেছেন নেতারা। ওই জেলার আওতাধীন ৩ থানা ও ৩ পৌর কমিটি বহু পুরনো। উত্তর জেলা বিএনপি’র সভাপতি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ স্বীকার করেন পুরনো থানা ও পৌর কমিটির অনেক নেতা মারা গেছেন, কেউ বিদেশে অনেকে আবার নিস্ক্রিয়। থানার নেতাদের সহযোগীতা পাচ্ছেন না। একা আর ঘানি টানতে পারছেন না। এখন কেন্দ্র থেকে জেলা কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি করার প্রক্রিয়া চলছে। নতুন নিয়মে জেলায় আহ্বায়ক হলে সে আর পূর্নাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি প্রার্থী হতে পারবেন না। তাই তিনি আহ্বায়ক হয়ে পরবর্তী কমিটিতে নতুনদের হাতে দায়িত্ব দিতে চান। ২০১৩ সালের নভেম্বরে এবায়দুল হক চাঁনকে সভাপতি ও আবুল কালাম শাহিনকে সাধারন সম্পাদক এবং ৫জনকে সহসভাপতি করে ৭ সদস্যের দক্ষিন জেলা কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। ৩ বছর মেয়াদের কমিটির বয়স ৬ বছর অতিবাহিত হতে চললেও জেলার আওতাধীন ৫ থানা ও ৩ পৌরকমিটি হালনাগাদ করে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলায় পূর্নাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি নেতারা। দক্ষিন জেলা বিএনপি’র সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন বলেন, দক্ষিনের ৮ ইউনিট কমিটির মধ্যে কোতয়ালীতে মহানগর সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ারের এবং বাকেরগঞ্জে আবুল হোসেন খানের বাঁধার কারনে কমিটি হালনাগাদ করতে পারেননি। কমিটি করার উদ্যোগ নিলেই তারা কেন্দ্রি নালিশ করে। এরপর উদ্যোগ থেমে যায়। জেলার সভাপতি হয়েও বিভিন্ন থানা কমিটির প্রেগামে গিয়ে দেখেন মহানগর সভাপতি সরোয়ার প্রধান অতিথি। তিনি জেলার সব জায়গায় হস্তক্ষেপ করেন। একইভাবে বাকেরগঞ্জে আবুল হোসেন খান কেন্দ্রের প্রভাব বিস্তার করায় সেখানে কমিটি হালনাগাদ হয়নি। অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি এবং কামরুল আহসান শাহিনকে সাধারন সম্পাদক করে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর ৩ বছর মেয়াদে গঠন করা হয় মহানগর বিএনপি’র ১৭১ সদস্যের কমিটি। বছর ব্যবধানে সম্পাদক কামরুল আহসান শাহিনের মৃত্যুর ২ বছর পর ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সরোয়ারকে মধ্যমনি রেখে মহানগর বিএনপি’র রাজনীতি পরিচালনা করছেন জিয়া। তবে দলীয় কর্মসূচীতে তেমন সমাগম হয় না কর্মীদের। একাধিক সহসভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক সহ দলের পদ-পদবীধারী অনেক নেতাই আসেন না কোন দলীয় কর্মসূচীতে। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি হালনাগাদ করে সম্মেলনের মাধ্যমে মহানগর কমিটি হালনাগাদেরও কোন উদ্যোগ নেই। মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া বলেন, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডেই দলের হালনাগাদ কমিটি আছে। তবে কিছু ইনএক্টিভ আছে। মহানগর সভাপতি তাদের সাথে রাজনৈতিক ভাবে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। নিস্ক্রিয়দের দলে তৎপর করার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কোথাও কমিটিতে পরিবর্তন কিংবা নতুন কমিটি গঠনের প্রয়োজন পড়লে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন সভাপতি।