বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পূর্ণ মেয়াদে ছুটি, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের উল্লাস

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পূর্ণ মেয়াদে ছুটি, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের উল্লাস
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হককে আগামী ২৬ মে পর্যন্ত (২৭ মে তার ৪ বছর মেয়াদ শেষ) ছুটি দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থী আন্দোলনের মুখে গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) তার ৪৬ দিনের ছুটি অনুমোদন দিয়েছেন রাস্ট্রপতি ও বিশ^বিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। একই সঙ্গে ট্রেজারার অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব হাসানকে তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব হাবিবুর রহমান সাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই তথ্য জানানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে বলা হয়, রাস্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হককে ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে ১১ এপ্রিল থেকে ২৬ মে পর্যন্ত মোট ৪৬ দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছেন। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ট্রেজারার অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব হাসান নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। রাস্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুরোধক্রমে এই আদেশ জারী করা হয়েছে বলে অফিস আদেশে উল্লেখ রয়েছে। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির সদস্য রাম চন্দ্র দাস এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরের পর উপাচার্য প্রফেসর ইমামুল হককে তার মেয়াদ শেষের আগের দিন পর্যন্ত (২৬ মে, ১৯ইং) ছুটিতে পাঠানোর খবর ছড়িয়ে পড়লে আনন্দে মেতে ওঠেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা। উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ৩৪তম দিন গতকাল সোমবার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা যখন অবস্থান কর্মসূচী পালন করছিলেন, তখনই খবর আসে উপাচার্যকে পূর্ণ মেয়াদে (২৭ মে তার ৪ বছর মেয়াদ শেষ) ছুটিতে পাঠানোর। মুহূর্তে অবস্থান কর্মসূচী পরিণত হয় আনন্দ উল্লাসে। এর মধ্য দিয়েই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৪ দিনের আন্দোলনের পরিসমাপ্তি এবং অচলাবস্থার নিরসন হয়েছে। আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম নেতা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের দাবি ছিলো উপাচার্যকে অপসারণের। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রাস্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছেন। পূর্ণ মেয়াদে ছুটিতে থাকলে তিনি (উপাচার্য) আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। তাই রাস্ট্রের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীরা মেনে নিয়েছে। এই মুহূর্ত (সোমবার দুপুর) থেকে উপাচার্যের অপসারণ দাবির আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। আন্দোলন প্রত্যাহার করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাৎক্ষণিক আনন্দ মিছিল করেছে। আজ (মঙ্গলবার) তারা ক্যাম্পাসে বড় শোডাউন করে আনন্দ মিছিল করবে। আনন্দ মিছিলের পর শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছেন শফিকুল ইসলাম। শিক্ষার্থীরা ক্লাশ-পরীক্ষায় কবে ফিরছে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী নেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়। শিক্ষার্থীরা ক্লাশ-পরীক্ষায় ফিরতে উদগ্রীব বলে তিনি জানান। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, উপাচার্যকে পূর্ণ মেয়াদে ছুটি দেওয়ায় শিক্ষক সমিতি আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী প্রশাসনের নির্দেশক্রমে অতি দ্রুত ক্লাশে ফিরে যাবেন তারা। দির্ঘ এক মাস ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা যাতে নতুন করে কোন সেশন জটে না পড়ে সে বিষয়ে শিক্ষকরা সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন বলে জানান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান জানান, উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ট্রেজারার উপাচার্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন। আজ মঙ্গলবার থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে। এর আগে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোয় প্রতিবাদ করলে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের কটুক্তি করেন। এর প্রতিবাদ ও প্রত্যাহার সহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। গত ২৯ মার্চ ভিসি তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট না হওয়ায় ভিসির পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু তিনি পদত্যাগ না করে ১৫ দিনের ছুটিতে গিয়ে উল্টো গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়ায় আরও ক্ষুব্ধ হয় তারা।