বাবুগঞ্জে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

বাবুগঞ্জে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

বাবুগঞ্জে অভাব অনটন ও পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী মাহমুদা (২২) কে কুপিয়ে হত্যা করেছে মোঃ নান্টু সিকদার(৩০) নামের পাশন্ড স্বামী। পুত্রবধুকে রাক্ষা করতে এসে নান্টুর দায়ের কোপে আহত হয়েছে পিতা ও তার আপন বড় ভাই। 

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর(আগরপুর) ইউনিয়নের ব্রাহ্মণদিয়া গ্রামে। এ ঘটনায় স্বামী মোঃ নান্টু সিকদারকে আটক করেছে থানা পুলিশ। 

লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আটককৃত মোঃ নান্টু সিকদার উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নে ব্রাহ্মণদিয়া গ্রামের চানমদ্দিন সিকদারের ছোট ছেলে এবং মাহামুদা গৌরনদী উপজেলার শরিকল ইউনিয়নের কুরিরচর গ্রামের মোঃ খলিলুর রহমানের মেয়ে।

ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মোঃ নূরে আলম বাদী হয়ে নান্টুকে আসামী করে বাবুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। 
বাবুগঞ্জ থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে বুধবার রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে বাড়ির সবাই যখন ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক তখন নান্টু সিকদার তার স্ত্রীকে দা দিয়ে কোপাতে শুরু করে। স্ত্রী মাহমুদা বেগম জীবন বাঁচাতে ডাকচিৎকার দিয়ে তার শশুরকে ডাকতে ডাকতে ঘরের বাহিরে চলে যান। তার চিৎকার শুনে শশুর (নান্টুর পিতা)এগিয়ে আসলে তাকেও দা দিয়ে কোপ দেন নান্টু সিকদার। পিতা এবং ভাইয়ের স্ত্রীকে বাঁচাতে বড় ভাই মিন্টু সিকদার এগিয়ে এলে তাকেও কুপিয়ে আহত করেন নান্টু সিকদার। স্বামীর হাত থেকে বাঁচতে বাড়ির পাশে একটি বাগানে দৌড়ে পালান মাহমুদা বেগম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার। সেখানে গিয়েও উপর্যপুরি কুপিয়ে গলা কেটে স্ত্রীকে হত্যা করেন নান্টু। পরে স্থানীয় জনতা নান্টু সিকদার কে ধাওয়া করে আটক করে থানা পুলিশকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে নান্টু সিকদার কে আটক করেন এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।

নিহতের ভাই ও পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণদিয়া এলাকার চানমদ্দিন সিকদারের ছোট ছেলে নান্টু সিকদার এর সাথে পার্শবর্তী গৌরনদী থানার শরিকল ইউনিয়নের কুরিরচর গ্রামের মোঃ খলিলুর রহমানের মেয়ে মাহামুদা বেগম এর সাথে ৫/৬ বছর আগে পারিবারিক ভাবে বিবাহ হয়। বিয়ের পরে তাদের দাম্পত্য জীবন ভালোভাবেই চলছিল কিন্তু সম্পর্কের অবনতি শুরু হয় স্ত্রী সন্তান সম্ভাবা না হওয়াকে কেন্দ্র করে। আর ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নান্টু কিছুটা মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পরে। আর সংসারে অবহেলাসহ নিয়মিত কাজ করা ছেড়ে দেন। নিয়মিত কাজ না করায় সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়। এতে দাম্পত্য জীবনের তিক্ততা চরম শিখরে পৌঁছে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় গত এক সপ্তাহ আগে মাহামুদা বেগম তার বাবার বাড়িতে চলে যান। বাবার বাড়িতে যাওয়ার কয়েকদিন পরে স্বামী নান্টু সিকদার শশুর বাড়িতে বেড়াতে যান। দু’দিন শশুর বাড়িতে থাকার পর স্ত্রীকে বাড়িতে আসার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু স্ত্রী বাড়িতে আসতে অস্বীকার করেন। তিনি তার স্বামী কে বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত কাজে যাওয়ার তাগিদ দেন। পরে নান্টু সিকদার শশুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে চলে যান। বাড়িতে গিয়ে মাহামুদাকে সারাক্ষণ মোবাইলে ফোন দিয়ে বাড়িতে আসতে বলতেন। স্বামীর ফোনে না আসায় শাশুড়ী তাকে মোবাইলে ফোন করে বাড়িতে আসতে বলেন। পরে বুধবার বিকালে মাহমুদা বেগম বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে আসেন। ওই দিন রাতেই নান্টু সিকদার  স্ত্রী মাহামুদাকে কুপিয়ে হত্যা করেন। নান্টু পেশায় একজন ভ্যান চালক ছিলেন।

বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ মাহাবুবুর রহমান জানান, পারিবারিক কলহের জের, সন্তান না হওয়া এবং কাজকর্ম না করায় মানসিকভাবে অসহায় হয়ে পরার কারণে এ হত্যাকান্ড হতে পারে বলে ধারণা করেছেন তিনি। এ ঘটনায় নিহত মাহামুদা বেগমের বড় ভাই মোঃ নূরে আলম বাদী হয়ে নান্টু সিকদার কে আসামী করে বাবুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৬। আসামী নান্টু সিকদার কে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।