বিশ্ব পর্যায়ে রাশিয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দৃশ্যমান

বিশ্ব পর্যায়ে রাশিয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দৃশ্যমান

বিশ্ব পর্যায়ে রাশিয়ার আরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দৃশ্যমান হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেছেন, ‘এটি যুদ্ধের সময় নয়’। অথচ রুশ প্রেসিডেন্ট হুমকি দিয়েছেন ইউক্রেনের তার সামরিক অভিযানে নৃশসংতা আরও জোরদার করার।

উজবেকিস্তানে একটি সম্মেলনে টেলিভিশনে প্রচারিত বক্তব্যে এই সমালোচনা করেছেন মোদি। এর একদিন আগে পুতিন স্বীকার করেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘প্রশ্ন ও উদ্বেগ’ রয়েছে।

দুটি ঘটনা এক সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে দেখা যাচ্ছে যে, পুতিনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে বিশ্বের দুটি জনবহুল দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়ার অর্থনীতির টিকে থাকার জন্য দেশ দুটি গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে ক্রেমলিন যে দাবি করে আসছিল রাশিয়া বিশ্বে একঘরে হয়নি–এই দাবি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে পুতিনকে মোদি বলেছেন, আমি জানি আজকের যুগ যুদ্ধের নয়। মোদি উল্লেখ করেছেন খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের কারণে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে। তিনি বলেছেন, আজ আমরা সুযোগ পেয়েছি কীভাবে শান্তির পথে অগ্রসর হতে পারি।

এই সমালোচনা ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর আলোকে পুতিন গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন পুতিন। শুধু যে এই কূটনৈতিক বিপত্তি তা নয়, ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রুশ সেনাদের প্রত্যাহার এবং দেশে যুদ্ধ পরিচালনা নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে।

তবে পুতিনের পরবর্তী পদক্ষেপ এখনও রহস্যময়। পশ্চিমা কর্মকর্তারা মনে করছেন, পুতিন যদি আরও ব্যর্থতার মুখে পড়েন তাহলে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ জোরদার করতে পারেন।
কয়েকজন এশীয় নেতার সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনীয় বেসামরিক স্থাপনায় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘সতর্কতামূলক’ হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও ভয়ঙ্কর অভিযানের হুমকি দিয়েছেন।

একই সময়ে চীন ও ভারতের মতো অংশীদারদের সঙ্গে অস্বস্তিকর অবস্থা নিয়ে পুতিনকে সচেতন বলেও মনে হয়েছে। কোনও পূর্বশর্ত উল্লেখ না করে পুতিন জোর দিয়ে বলেছেন তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। শুক্রবারের বক্তব্যে পুতিন ইউক্রেনকে বেসামরিকীকরণ ও নাৎসীমুক্ত করার কথা বলেননি। অথচ ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণের শুরুতে অভিযানের লক্ষ্য হিসেবে এগুলোর কথা বলেছিলেন। তখন ধারণা করা হয়েছিলম, এই লক্ষ্যের মাধ্যমে পুরো ইউক্রেন দখল করতে চান তিনি।

পুতিন এখন বলছেন, তাদের আক্রমণের মূল ছিল ডনবাস দখলে সীমাবদ্ধ। পূর্ব ইউক্রেনের এই অঞ্চলের দুটি এলাকা–ডনেস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। এই দুটি এলাকার বেশ কিছু ভূখ- এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনার চেষ্টা করছে এবং মস্কো এগুলোর পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তার কথায়, প্রকৃতপক্ষে আমরা সংযতভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি। তবে এটি সাময়িক। পরিস্থিতি যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আমাদের জবাব আরও ভয়াবহ হবে।
২০১৪ সালে রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়াতে সামরিক স্থাপনায় হামলার কথা স্বীকার করেছে ইউক্রেন। কিয়েভের দাবি, তারা কোনও বেসামরিক নাগরিকের ওপর হামলা চালাচ্ছে না।

বুধবার একটি রাশিয়ার একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামরায় দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরের বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি দখলমুক্ত করা ইজিউমে একটি গণকবর পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে এতে অন্তত ৪৪৫ জনের মরদেহ রয়েছে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক বলেছেন, দখলকৃত ভূখ-ে রাশিয়া নৃশংসতা, সহিংসতা, নিপীড়ন ও গণহারে হত্যা করেছে। তিনি যুদ্ধ অবসানে সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।

এরপরও পুতিন বারবার রাশিয়ার আক্রমণ জোরদার করা হতে পারে বলে সতর্ক করে আসছেন। মার্কিন কর্মকর্তারাও এখন এই হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাদের ধারণা, ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন বাড়াতে পারে রাশিয়া অথবা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহকারী ন্যাটো দেশের ওপর হামলা চালাতে পারেন। ইউক্রেনের পূর্ব বা দক্ষিণে আক্রমণ জোরদার বা ইউক্রেনীয় নেতৃত্বকে টার্গেট করে অভিযান শুরু করতে পারে রাশিয়া।

শুক্রবার পুতিন বলেছেন, আমরা নিজেদের পুরো সেনাবাহিনী নিয়ে লড়াই করছি না। আক্রমণের সামরিক পরিকল্পনায় কোনও সামঞ্জস্য আনার প্রয়োজন নেই বলেও জোর দিয়েছেন। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস