বড়দিন সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনুক

বড়দিন সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনুক


আজ ২৫ ডিসেম্বর যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন। আজ বড়দিন। খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস মতে, যিশু খ্রিষ্ট পৃথিবীতে মানুষের রূপ ধরে জন্মগ্রহণ করেন এই দিনে। পৃথিবীর সকল পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে, মানুষে মানুষে বন্ধনকে আরও সুসংহত করতেই তার আবির্ভাব বলে বিশ^াস করা হয়। তাই বিশ্বজুড়ে ছোট-বড় সব মানুষের প্রবল আগ্রহ, উৎসাহ, উদ্দীপনা। বড়দিনের উৎসব আজ আর কেবল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বিদের উৎসব নয়। আজকের দিনটি ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ছাড়িয়ে সবার উৎসবে রূপ নিয়েছে। আমাদেরও প্রত্যাশা বড়দিন যেন সম্প্রীতির মেলবন্ধন হয়। বিশ^ মানবতার মঙ্গল বয়ে আনুক। সবার জন্য বড়দিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

বড়দিন বা যিশু খ্রিষ্টের তাৎপর্যপূর্ণ আগমনের তিথি স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে এই পালিত হবে। পুণ্যময় বড়দিন যে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব তা বলা বাহুল্য। তাদের কাছে এই দিনটির ধর্মীয় তাৎপর্য ও গুরুত্ব অসামান্য। বড়দিন উৎসব নিয়ে বিপুল এই আগ্রহ এখন শুধু মাত্র আর খ্রিষ্টানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সব ধর্মের বর্ণের মানুষের কাছে নতুনভাবে আবেদন সৃষ্টি করছে। বর্ণিল আয়োজনে এটি রূপ নিয়েছে বিশ^জনীনতায়।

বড়দিনের বড় আকর্ষণ সান্তা ক্লজ। যা শিশুদের মাঝে বেশি উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। এই দিনে একে অপরকে উপহার দেওয়ার পাশাপাশি আকর্ষণীয় সাজে যিশু খ্রিস্টের পূজা করা হয়। এদিন শিশুদেরও আকর্ষণীয় পোশাকে দেখা যায়, তৈরি করা হয় নানা ধরনের ছক, আজকাল সান্তা ক্লজও বড় ধরনের ক্রেজ হয়ে উঠেছে। এটাকে আমার সামাজিক অনন্য আচার হিসেবেই দেখি। যার মাধ্যমে আমরা পরষ্পরের মধ্যে ¯েœহ-ভালোবাসার বহিপ্রকাশ ঘটে। মোটকথা বড়দিন যেমন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উৎসব তেমনি এটা বিশ^মানবতার উৎসব হয়ে উঠেছে। সত্যিকারের সান্তা ক্লজ এসে আমাদের অশান্ত পৃথিবীকে শান্তি উপহার দেবে এমনটা বিশ^াস করতে মন চায়।

৩৩৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রোমান বর্ষপঞ্জিতে ২৫ ডিসেম্বরকে বড়দিন উৎসব হিসেবে উদ্যাপন করার নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানা যায়। রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দিনে দিনে বড়দিন উৎসব আরও প্রাণ পেতে শুরু করে। ইউরোপে যিশুর অনুসারীরা নিশি জাগরণ, প্রার্থনার পাশাপাশি উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে বড়দিন পালন করা শুরু করে।

গোয়াল ঘরে যিশুর মনোরম ‘জন্মদৃশ্য’ এবং এর ‘ভাস্কর্য’ বা চিত্রকলার ব্যবহার রীতি এখন খুব প্রচলিত। মধ্যযুগে এর প্রচলন করেছিল যিশুর অনুসারীরাই এবং তাঁরা ছিলেন ইউরোপিয়ান। উত্তর ইউরোপের অনুসারীরাই বড়দিন উৎসবের অন্যতম আনন্দ উপাদান ‘ক্রিসমাস ট্রি’র প্রবর্তক। বর্তমান সময়ে ‘বড়দিন উৎসব’ বাণিজ্যিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আরও আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন বড়দিন আর কেবল ‘ক্রিসমাস ট্রি’ সাজানোর মধ্যে থেমে নেই। এতে যোগ হয়েছে আলোকসজ্জা, শুভেচ্ছাকার্ড বিনিময়, উপহার দেওয়া-নেওয়া, চকলেট আদান-প্রদান, ঘুরতে যাওয়া, বড়দিনের পিঠা বানান, কেক কাটা ও মিলন ভোজ-সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে। 

পবিত্র বাইবেল ও ধর্মীয় দিক থেকে যদি দেখি, ২৫ ডিসেম্বর দিনটি শুধুমাত্র মানবজাতির ত্রাণকর্তা যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন নয়, বরং চিরমঙ্গলময় ঈশ্বর এবং মানুষের মাঝে ভালোবাসার এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর।
আজকের বিশে^ যে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি আমাদের মধ্যে বিভেদের প্রাচীর তুলে দিচ্ছে। দেশে দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ শিশু-নারী হত্যার সঙ্গে মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই অশুভ চিন্তার বিনাশ হোক। যিশু খ্রিস্টের জন্মদিনে বা বড়দিন হয়ে উঠুক বিশ^মানবতার জয়গান। সবাই মিলে একটি শান্তির বিশ^ গড়ে তুলতে যিশু খ্রিস্টের আদর্শে উজ্জীবীত হই। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই, এই আহ্বান ধ্বনিত হোক গোটা দুনিয়ায়।