মঠবাড়িয়ায় খালে বাঁধ থাকায় পানি অপসারণে বাধা: পাকারাস্তা ভেঙ্গে খাদ

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বাদুরা গ্রাম সংলগ্ন বলেশ^র-বিষখালী দুই নদীর সংযোগ ভুতা ও দোগনা খালে প্রভাবশালীদের দেওয়া একাধিক বাঁধের কারণে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্থ হওয়ায় জোয়ার ও জলোচ্ছাসের পানি উপচে পড়ে লোকালয়ে ডুকে স্থায়ী জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী জলবদ্ধতা, পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধাগ্রস্থ হওয়ায় সেখানকার পাকা রাস্তাগুলো দেবে গিয়ে গভীর খাদে পরিনত হয়েছে।
এছাড়া অতিরিক্ত পানি দ্রুত অপসারণ না হওয়ায় জলাবদ্ধায় সহস্¯্রাধিক একর জমির আমন চাষ বন্ধসহ তিন ফসলি জমি এক ফসলিতে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে ইদুরের গর্ত সহ বিভিন্ন ছোটবড় নালা দিয়ে পানি নামার সময় বিশাল এলাকা জুড়ে ভাঙ্গনে ব্যস্ততম সড়ক খাল গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। দীর্ঘ জলমগ্নে ডুবে থাকায় স্কুলের ক্লাস বন্ধ, রাস্তা ঘাটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ অতিরিক্ত পানিতে স্থানীয়দের দারুন দূর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রতি বর্ষা মৌসুমে জোয়ার ও জলোচ্ছাসের অতিরিক্ত পানিতে চরম দূর্ভোগের স্বীকার ভূক্তভোগীরা বাঁধ অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশসহ প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি পেশ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাঁধ অপসারণে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি বঙ্গবসাগরে সৃষ্ট লঘু চাপের প্রভাব ও জোয়ারের ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার ১০ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে। গ্রাম সমূহ হলো তেতুলবাড়িয়া, বাদুরা, নাগ্রাভাঙ্গা, ছোটশৌলা, বড়শৌলা, মিরুখালী, ছ্টোহারজী, হারজী নলবুনিয়া, দেবত্র, দাউদখালী।
এছাড়াও অতিরিক্ত পানিতে মিরুখালী-ধানীসাফা ও কাঠালিয়ার আমুয়া সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান দেবে দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বলেশ^র- বিষখালী নদীর সংযোগ খাল মিরুখালীর দোগনা ও ভুতা খালে একাধিক বাঁধ থাকায় পানি প্রবাহ হতে না পাড়ায় ওই এলাকার শত-শত বাড়ি ঘরের মেঝেতে পানি উঠে যায়। পিরোজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্যস্ততম সড়কটির করিমের পোল, মিরুখালী কলেজ ও ডিলারবাড়ির সামনে পাঁচটি বড় বড় গর্ত হয়েছে।
বাদুরা গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক নেতা মো. রোকনুজ্জামান শরীফ বলেন, বলেশ^র- বিষখালী নদীর সংযোগ খাল মিরুখালীর ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামের দোগনা ও ভুতা খালে একাধিক বাঁধ থাকায় পানি প্রবাহ হতে না পাড়ায় এলাকার শত-শত বাড়ি ঘরের মেঝেতে পানি উঠে গেছে। সহ¯্রাধিক একর জমি পানির নিচে থাকায় জলবদ্ধতায় আমন আবাদ করা সম্বব হবে না।তিনি আরো বলেন অবৈধ বাঁধ অপসারনের দাবিতে কৃষক সহ স্থানীয়রা একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্মারকলিপি প্রদান করলেও কোন সাড়া মিলছে না।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের পিরোজপুরের উপসহকারী প্রকৌশলী শামীম আহসান বলেন, সম্প্রতি জোয়ারের পানিতে ধানিসাফা মিরুকালী সড়কটিতে কয়েকটি গর্ত হয়েছে। যা দ্রুত মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, শাখা খালের ৪/৫ টি বাঁধই কৃষকের হুমকি স্বরুপ। ইতিমধ্যে এ বাঁধের কারনে এখানকার তিন ফসলি জমি এখন এক ফসলি জমিতে পরিনত হয়েছে। তিনি অরো বলেন মাঠে অতিরিক্তি পানিতে জলাব্ধতা থাকায় জমিতে আমন আবাদ করা যাচ্ছে না। বাাঁধের কারণে কৃষি জমির ক্ষতির বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ঊর্মি ভৌমিক বাঁধের কারণে জলাবদ্ধতাসহ স্থানীয়দের জণদূর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন এ বিষয়ে পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডি সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন-সম্প্রতি জেলা পরিষদের সভায় এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।