মহসিন মার্কেটের নাম পরিবর্তন করে “ডিসি মার্কেট”

বরিশাল নগরে ইতিহাস ও ঐত্যিহের সাথে জড়িয়ে থাকা “হাজি মূহাম্মদ মহসিন হকার্স মার্কেট” এর নাম পরিবর্তন করে “ডিসি মার্কেট” রাখা হয়েছে।
আর না জানিয়ে আকস্মিক এ মার্কেটের নাম পরিবর্তন নিয়ে হতবাক হয়েছেন ব্যবসায়ীরা সেইসাথে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। যদিও এরইমধ্যে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে সমালোচনা ঝড়।
“হাজি মূহাম্মদ মহসিন হকার্স মার্কেট” এর ব্যবসায়ীরা জানান, মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরের দিকে হঠাৎ করেই দেখতে পাই মার্কেটের নাম পরিবর্তন করে “ডিসি মার্কেট” লেখা সংবলিত সাইনবোর্ড লাগানো হচ্ছে। যারা সাইনবোর্ড সাটানোর কাজ করছিলো তারা জানায় সহকারি কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা এটি লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক কয়েকজন সহকারি কমিশনার (ভূমি)কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি কোন ভ্রুক্ষেপই করেননি বিষয়টি নিয়ে।
ব্যবসায়ীদের দাবি বর্তমান সহকারি কমিশনার ভূমি হাজি মূহাম্মদ মহসিন সম্পর্কে জানেন না। তবে এজনপ্রিয় এ মার্কেটটির সুনাম ও ব্যবসায়ীক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে দানবির ও শিক্ষানুরাগী “হাজি মূহাম্মদ মহসিন” এর নাম অনুসারে মার্কেটটির নাম বহাল থাকার দাবি ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ী শেখ আবুল হাসেম জানান,১৯৮৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বরিশালের (বাকেরগঞ্জ) জেলা প্রশাসক এম, এ, বারী বরিশাল নদী বন্দরের পশ্চিম দিকের বর্তমানস্থানে ভাসমান ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য “বরিশালের হাজি মূহাম্মদ মহসিন হকার্স মার্কেট” এর উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে হাজি মূহাম্মদ মহসিন হকার্স মার্কেটটি সুন্দর ও সুনামের সাথে ৪০ বছর ধরে এখানে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে এখানে ২ শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে।
তিনি বলেন, এত বছর পর কিছু না জানিয়ে এবং আমাদের ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা না করে, হঠাৎ মার্কেটের নাম পরিবর্তন করা হলো। আমরা চাই প্রাক্তন জেলা প্রশাসক এম, এ, বারীর স্মৃতি ধরে রাখতে হলেও মার্কেটের নামটি পরিবর্তন না করুক। তাই বর্তমান জেলা প্রশাসন জসীম উদ্দীন হায়দারের কাছে বিনীত অনুরোধ তিনি যেন বিষয়টি দেখেন।
উদীচী বরিশাল জেলার সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন বলেন, জেলা প্রশাসক এম, এ, বারী ৮৩ সালে বর্তমানস্থলে “বরিশালের হাজি মূহাম্মদ মহসিন হকার্স মার্কেট” এর উদ্বোধন করেন। কিন্তু ৪০ বছর পর কোন কথাবার্তা ছাড়াই সাইনবোর্ড লাগিয়ে মার্কেটের নাম পরিবর্তন করবে এটা খুবই দুঃখজনক বরিশালের জন্য। আমরা চাই এটা না মার্কেটটি যে নামে আগে ছিলো সেটাই থাকুক। ওইখানে যারা ব্যবসা করে তাদের লাইসেন্সসহ কাগজপত্রই পূর্বের নামে, সেখানে কাউকে কিছু না জানিয়ে জোড়করে এভাবে সাইনবোর্ড লাগানো খুবই দুখঃজনক। এমনকি জেলা প্রশাসকের ওয়েব সাইটেও এ সংক্রান্ত কোন প্রজ্ঞাপন খুজে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, খাস খতিয়ান হোক আর যে খতিয়ানের হোক না কেন, সবকিছুই রাষ্ট্রের এবং নাগরিকদের জন্য। আর তা দেখভালের দায়িত্ব জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভূমি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট। সে হিসেবে ইচ্ছে করলেই সবকিছু করে ফেলা সম্ভব নয়।
এদিকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এ ধরণের কাজ করার আগে বরিশালের মানুষ ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে গণশুনানি কিংবা আলোচনা করা যেত। কারন “বরিশালের হাজি মূহাম্মদ মহসিন হকার্স মার্কেট” বরিশালের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথেও জড়িত। সেইসাথে এখানে অনেকের আবেগও কাজ করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহসিন মার্কেটের নাম পরিবর্তন করে ডিসি মার্কেট করায় পোস্ট করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ফেসবুক ব্যবহারকারীর। রাশেদুল হাসান শাকিল পরিবর্তন হওয়া সাইনবোর্ড পোস্ট করে লিখেছেন এটা পরিবর্তন করলেও মহসিন মার্কেট নাম থেকে যাবে।এমন কাজের পরিবর্তন চান।
বুধবার রাতে বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবনে ব্যবসায়ীরা গিয়ে এ বিষয়ে অনুরোধ করেন ইতিহাস ও ঐতিহাসিক স্থান এর নাম পরিবর্তন না করতে।
আর নাম পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল সদরের সহকারি কমিশনার (ভূমি)তারিকুল ইসলাম বলেন, মার্কেটের জায়গাটি খাস খতিয়ানের জায়গায় রয়েছে। এটির জেলা প্রশাসক মহোদায়সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তে হয়েছে।