মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় ইউনিট খোলার অনুরোধ ডিএনসির

মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় ইউনিট খোলার অনুরোধ ডিএনসির

মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিৎসায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের ব্যবস্থাপত্র নিতে হয়। কিন্তু দেশে এমন বিষেশজ্ঞ আছেন তিনশ’ জনের মতো। তাদের বেশিরভাগই থাকেন ঢাকায়। বিভাগীয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে মনোরোগ চিকিৎসকের পদ থাকলেও সবকটিতে চিকিৎসক নেই। কোনোটিতে চিকিৎসক থাকলেও নেই চিকিৎসার ব্যবস্থা। তাই মাদকাসক্তের চিকিৎসায় স্বজনদের ছুটতে হয় অন্য কোথাও। সমাধান হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) দেশের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় বিশেষ ইউনিট খোলার অনুরোধ  সরকারের কাছে।

দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা কত, এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে মাদকাসক্ত রোগীদের ওপর জরিপ চালিয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল আনুমানিক যে সংখ্যা জানিয়েছে, সেটা প্রায় ৫৬ লাখ।


অপরদিকে, ২০১৮ সালের শুরুতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এ সংখ্যা ৬৬ লাখ দেখা গেছে। কোনও কোনও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বলছে দেশে ৭০-৭৫ লাখ মাদকাসক্ত আছে।

এত রোগীর চিকিৎসায় সরকারি নিরাময় ও চিকিৎসা কেন্দ্র আছে মোটে পাঁচটি। এর একটি আবার কারাবন্দিদের জন্য। যশোর জেলখানা, ঢাকার তেজগাঁও, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে আছে একটি করে সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র।

এসব কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, চিকিৎসকসহ লোকবলের ঘাটতি রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আসন ও ব্যবস্থা হিসাব করে দেখা গেছে, তারা বছরে মাত্র ১৫ হাজারের মতো রোগীর চিকিৎসা দিতে পারে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী—দেশে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য ৩৫১টি বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্র আছে। ঢাকায় আছে ১০৮টি।

বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্র নিয়েও আছে অসংখ্য অভিযোগ। গত ৪ জানুয়ারি গাজীপুরের ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত নিরাময় পুনর্বাসন কেন্দ্র’-তে অভিযান চালায় র‌্যাব-২। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ প্রতিষ্ঠানের পাঁচ কর্মচারীকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয় মাদক। এই নারীর বিরুদ্ধে সেখানে ভর্তি থাকা এক রোগী, যিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, তিনি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। ২০০৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলে আসছিল। ওই অভিনেতার বন্ধুদের অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব সেখানে অভিযান চালায়।

বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে এমন আরও অভিযোগ রয়েছে। রোগীদের নির্যাতন ও আটকে রাখাই তাদের ‘চিকিৎসা’। অভিযোগ আছে, এসব কেন্দ্রে রোগী ভর্তি হলে উল্টো আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঢাকার আদাবরের ‘মাইন্ড এইড অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি ডি-অ্যাডিকশন’ নামের এক বেসরকারি হাসপাতালে আনিসুল করিম নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা রোগীকে শারীরিকভাবে আঘাত করে মেরেই ফেলা হয়।

রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় মাদকাসক্ত এক মার্চেন্ডাইজারের স্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বামী প্রায় ১৫-১৮ বছর ধরে মাদকাসক্ত। তাকে অসংখ্যবার বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রে দিয়েছি। চিকিৎসায় অনেক টাকা খোয়া গেছে। কিন্তু তিনি সুস্থ হন না। শেষে তার চাকরিও যায়। এখন কোনোরকম দিন কাটাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে সরকারের নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসার জন্যও সরকারি উদ্যোগ বাড়ানো দরকার। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতার অবসান ঘটানো। তা না হলে এই সমস্যার শেষ হবে না। কারণ এখন বাসায় এসেও মাদক দিয়ে যাচ্ছে।’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি)-এর তথ্যানুযায়ী দেশে প্রায় তিনশ’ মনোরোগ চিকিৎসক রয়েছে। এরমধ্যে সিলেটে ৩০ জন, চট্টগ্রামে ২০ জন, রংপুরে ১০-১২ জন, রাজশাহীতে ২০ জন, বরিশালে ৫ জন এবং ময়মনসিংহে ৮ জন। বাকি দুই শতাধিক আছেন ঢাকায়। গ্রামে ও জেলা শহরের রোগীদের তাই ঢাকায় আসতেই হয়।

বিএপি-এর সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ তারিকুল আলম সুমন বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকরা সারাদেশেই রয়েছেন। তবে ঢাকায় একটু বেশি। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতেও রয়েছেন। রোগী এলে অবশ্যই চিকিৎসা পাবেন।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, ‘আমরা রোগীদের চিকিৎসার জন্য একটি পরিকল্পনা নিয়েছি। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য একটি ইউনিট খোলার বিষয়ে আলোচনা চলছে।’


RS BT