মুঠোফোন ব্যবহারে সন্তানকে সতর্ক থাকতে হবে

এখন যে কোন বাড়িতে গেলে চোখে পড়বে বাড়ির ছোট্ট সন্তানটি মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত। কারো সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলার সময় যেন তাদের নেই। মুঠোফোনে তারা গেইম, ফেইসবুকসহ নানা অ্যাপ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কখনো বাবা-মা মুঠোফোন নিয়ে কথা বলতে গেলে ছোট্ট শিশুটি প্রতিবাদ করে। ফোন দিতে চায় না। ফোন নিতে গিয়ে অনেক বাবা-মাকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তেও দেখা যায়। তারপরও বাবা-মা সন্তানের মুঠোফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কোন উদ্যোগ নেন না। ফলে ওই ছোট্ট শিশুকে মুঠোফোন ছাড়া নাস্তা খাওয়ানো, খাবার খাওয়ানো এমনকি ঘুমানোও সম্ভভ হয় না।
অনেক বাবা-মাকে গর্ব করে বলতে শোনা যায়, তাদের দুই, তিন কিংবা চার বছরের সন্তান মুঠোফোন ব্যবহারে পারদর্শী। গর্বিত এমন বাবা-মা বলেন, ‘আমার সন্তান মুঠোফোনের সব বিষয় জানে। মুহূর্তের মধ্যে অনেক কিছু বের করতে পারে। যে কোন অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করে। ভালো ছবি তোলে, তা আবার ফেইসবুকে আপলোড করতে পারে। এসব দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই।’ বাবা-মায়ের এই গর্ব এবং অহংকার তার প্রিয় সন্তানকে মনস্তাত্বিকভাবে মুঠোফোনে আসক্ত করে ফেলে। এরপর ওই সন্তানের কাছ থেকে আর মুঠোফোন দূরে রাখা সম্ভব হয় না। আসক্তির এক পর্যায়ে মুঠোফোনের নেতিবাচক দিকে প্রবেশ করে প্রিয় সন্তান। তাই মুঠোফোন ছোট্ট শিশুর নাগালের বাইরে রাখা দরকার। কোনভাবেই যেন ছোট্ট সন্তান মুঠোফোনে আসক্ত হয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মুঠোফোন ব্যবহারে সন্তানকে সতর্ক করতে হবে বাব-মাকে।
মুঠোফোনের ভয়াবহ পরিণতি অনেক বাবা-মা-ই জানেন। তারপরও তারা সতর্ক হন না। কয়েক বছর আগে নগরের একটি নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ব্যাগ তল্লাসি করে দামি দামি মুঠোফোন পায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওইসব মুঠোফোনের বেশিরভাগ ছিল নিষিদ্ধ ছবি ও ভিডিওতে ঠাসা। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, বেশ কিছু মুঠোফোন নিতে কোন অভিভাবক আসেননি। এরকমও তথ্য তখন পাওয়া গেছে স্কুল পড়ুয়া ওইসব শিক্ষার্থীরা সাইবারক্যাফে গিয়ে নীল ছবি চ্যাট করতো। এমন ভয়াবহ চিত্র পাওয়ার পরও স্কুল পড়ুয়া ছোট্ট সন্তানদের মুঠোফোন ব্যাবহার কমেনি।
আমরা জানি, আধুনিক সভ্যতায় মুঠোফোন ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মিাণে মুঠোফোনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কারণ মুঠোফোন কেবল কথা বলার যন্ত্র নয়। মুফোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার, ফেইসবুক চালানো থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন সব কাজ করে থাকি। আমাদের সমৃদ্ধির শিখড়ে পৌঁছাতে মুঠোফোনের বিকল্প কেবল মুঠোফোন। এত এত সহযোাগী মুঠোফোন থেকে আামরা দূরে থাকতে পারবো না। কিন্তু আমাদের শিশু সন্তানকেও যদি সমানভাবে মুঠোফোনের সঙ্গে রাখতে চাই, তার পরিণতি ভালো হবে না। মুঠোফোন ব্যবহারের বিরোধিতার জন্য বলছি না। আমরা বলতে চাই, মুঠোফোন ব্যবহারে শিশুদের সতর্ক করতে হবে।
মুঠোফোন ব্যবহারকারী ছোট্ট সন্তান বড় হয়ে মুঠোফোরেন নেতিবাচক দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আপনার অজন্তে এমন বন্ধুর সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, সেখান থেকে তাকে আর ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। আপনার আমার প্রিয় সন্তানই কিন্তু মুঠোফোনে আসক্ত হয়ে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিচ্ছে।
কেবল গেইমের নামে শিশুর হাতে মুঠোফোন তুলে দেবেন না। গেইম খেলতে খেলতে শিশু মুফোফোনে আসক্ত হয়ে যাবে। তাই যতই বায়না ধরুক শিশুকে মুঠোফোন ব্যবহারের অনুমতি দিবেন না। আমাদের ছোট্ট সোনামনি মুঠোফোনে পারদর্শী এমন গর্ব করা বন্ধ করুন। বরং দুই বছর বয়সে বর্ণমালা বলতে পারে কিনা সেটা দেখুন। দেখুন ছোট্ট শিশু বাংলা কিংবা ইংরেজি ছড়া বলতে পারে কি না। গান, আবৃত্তি পারে কি না। তাহলে বাবা-মায়ের গর্ব করা স্বার্থক হবে। তাই আমাদের আহ্বান, মুঠোফোন ব্যবহারে সন্তানকে সতর্ক থাকতে হবে। এব্যাপারে বাবা-মাকেই প্রথম এবং প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে।