রাতে আর্জেন্টিনা ইতালির লড়াই

দুই মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই হবে আজ। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে ইউরো ২০২০ চ্যাম্পিয়ন ইতালি এবং কোপা আমেরিকা ২০২০ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। দুই মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের এ লড়াইয়ের নাম ‘লা ফিনালিসিমা’। লড়াইটা মুখরোচক। এটি একটি অফিশিয়াল প্রতিযোগিতা। দুই মহাদেশের চ্যাম্পিয়নের মুখোমুখি হওয়ার ম্যাচকে ‘লা ফিনালিসিমা’ বলা হলেও একসময় এই ম্যাচের নাম ছিল ‘আর্তেমিও ফ্রাঞ্চি কাপ’। এর আগেও দু’বার হয়েছে এই টুর্নামেন্ট। প্রথমবার ১৯৮৫ সালে, দ্বিতীয়বার ১৯৯৩তে। ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা এবং দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল বন্ধুত্বের অংশ হিসেবে যৌথভাবে আয়োজন করেছে এর আগে। দীর্ঘ ২৯ বছর পর আবারও হতে যাচ্ছে এ টুর্নামেন্ট।
১৯৮৫ সালে তখনকার ইউরো চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স এবং কোপা আমেরিকাজয়ী উরুগুয়ের ম্যাচ দিয়ে এ প্রতিযোগিতা মাঠে গড়ায়। সেই ম্যাচে ফ্রান্স ২-০ গোলে হারিয়েছিল উরুগুয়েকে। এরপর ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা ও ডেনমার্ক। তখন আর্জেন্টিনা ছিল কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন এবং ডেনমার্ক ইউরোপের সেরা। নিজেদের মাঠ মার ডেল প্লাতাতে আর্জেন্টিনা ম্যাচটি জিতেছিল টাইব্রেকারে। আপাতত এই লড়াই আছে ১-১ সমতায়। এবারের ফিনালিসিমা জিততে চান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। আর আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপে না যাওয়ার হতাশা ভুলতে চায় ইতালি, বলেছেন তাদের ইউরোজয়ী গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা।
ফিনালিসিমার প্রতিপক্ষ নিয়ে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি বলেছেন, কাতার বিশ্বকাপে ইতালি থাকলে তাদের ফেভারিট ধরা হতো। এ কথায় ইতালির সমর্থকরা কষ্ট পেতে পারেন। মেসি তার কথাটা ইতিবাচক অর্থে বলেছেন। বিশ্বকাপে ইতালি থাকলে তারা যে ফেভারিটের তকমা পেত তাতে সন্দেহ নেই। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক বলেন, ‘ম্যাচটা দারুণ হবে! ওরা ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন। বিশ্বকাপে থাকলে ফেভারিট ধরা হতো তাদের। দুর্ভাগ্য যে খেলার সুযোগ পায়নি। ফুটবলীয় কারণেই তারা বাদ পড়েছে। বিশ্বকাপের ড্রয়ে কেউ তাদের মুখোমুখি হতে চাইত না।’ মেসি তার পরের কথাটায় বলতে গেলে খোঁচাই মেরেছেন চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। ‘এটা অবিশ্বাস্য যে, তারা ইউরো জিতলেও বিশ্বকাপে নেই। আবারও ইতালি বাদ পড়ল বিশ্বকাপ থেকে। এর অর্থ বিশ্বকাপের সঙ্গে ইতালির সম্পর্কটা লজ্জার।’ চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পরপর দুইবার বিশ্বকাপে খেলতে না পারাটা হতাশারই।
পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে খুশিই হবেন আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। ইতালির বিপক্ষে ১৯৮৭ থেকে হারেনি দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ১৯৮৭’র প্রীতি ম্যাচে ডিয়েগো ম্যারাডোনা গোল করলেও ডি নাপোলি আর ভিয়ালিদের গোলে ইতালি ৩-১ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। ২০১৮’র ম্যানচেস্টার সিটির মাঠ ইতিহাদে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ লড়াইয়ে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে জিতেছিল। এভার বানেগা, ম্যানুয়েল লানজিনি গোল করেছিলেন। মেসি মাঠে থাকলেও খেলতে নামেননি। তবে আজ্জুরিদের সঙ্গে মোট লড়াইয়ে একটু পিছিয়ে আর্জেন্টিনা। ১৬ বারের দেখায় আলবিসেলেস্তেরা জিতেছে পাঁচবার, ইতালির জয় ছয়বার। বাকি পাঁচ ম্যাচ ড্র হয়।
২০২০ ইউরোর ট্রফি হাতে নিয়েছিলেন যে জিওর্জিও কিয়েলিনি তার জন্য আজকের ম্যাচ ইতালির জার্সিতে শেষ ম্যাচ। ১১৬ ম্যাচ খেলা ডিফেন্ডারের কণ্ঠে ঝরেছে মেসি-বন্দনা, ‘আর্জেন্টিনা তো কোপা আমেরিকা হুট করেই যেতেনি। মেসি একজন ফুটবল আইকন। সে বিশ্বের সর্বকালের সেরা কিনা তা বলার আমি কেউ নই। তার বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে আমার শেষ ম্যাচটা খেলতে পারাটা আনন্দের।’ মেসি এবারই প্রথম খেলবেন ইতালির বিপক্ষে। এর আগে সবশেষ ২০১৮তে প্রীতি ম্যাচে ইতালির বিপক্ষে মেসি ছিলেন বেঞ্চে। তার আগে ২০১৩তে প্রীতি ম্যাচের সময় দলেই ছিলেন না মেসি। আর্জেন্টিনা টানা ৩১ ম্যাচে অপরাজিত। মেসির নেতৃত্বে ২৮ বছরের শিরোপা-খরা কাটিয়ে কোপা আমেরিকা জেতে আর্জেন্টিনা। মেসি চাইছেন জাতীয় দলের হয়ে আরও একটি শিরোপা জিততে, ‘এই দল প্রতিটি ম্যাচ খেলে ‘ফাইনাল’ ভেবে। যে কারও সঙ্গে লড়াই করতে পারে এবং যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্য ম্যাচটা কঠিন করে তুলতে পারে। ভালো সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমারা। জয়ের ধারায় আছি আমরা, এভাবে এগিয়ে যেতে এটা অনেক সাহায্য করে।’
ফিনালিসিমাতে থাকবে না কোনো অতিরিক্ত সময়। অর্থাৎ নির্ধারিত ৯০ মিনিটে খেলা অমীমাংসিত থাকলে সরাসরি টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হবে জয়-পরাজয়। যে জিতবে দাবি করতে পারবে বিশ্বসেরা তারা।