শেবাচিম হাসপাতালে ইন্টার্নদের ধর্মঘটে রোগীদের ভোগান্তি

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ৩ দফা দাবীতে ইন্টার্ণ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির চলছে।
গতকাল রোববার সকালে হাসপাতালে গিয়ে কোন ইন্টার্ন চিকিৎসককে কাজে দেখা যায় নি।
রোগী ও রোগীর স্বজনরা জানান, গত শনিবার দুপুরের পর থেকে কোন ডাক্তারই তাদের খোঁজ খবর নেননি। এমনকি কোন চিকিৎসকরে দেখাও তারা পাননি। এ অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। বিশেষ করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সাধারনত ২৪ ঘন্টাই রোগীর পাশে থাকতো। কিন্তু কর্মবিরতির কারণে তারা কেউ সেখানে নেই।
হাসপাতাল প্রশাসন বলছে, ৫০০ শয্যার হাসপাতালের জনবল দিয়ে ১০০০ শয্যার হাপতাল চালাতে হচ্ছে। তার মধ্যে হাসপাতালে বর্তমানে ২২৪টি পদের স্থলে মাত্র ৯১ জন চিকিৎসক কর্মরাত আছেন। বাকি পদ শূণ্য রয়েছে। বর্তমানে ১০০০ শয্যার এ হাসপাতালে দেড় হাজারের মতো রোগী থাকলেও সেখানে জনবল কাঠমোর উন্নয়ন ঘটেনি। তারওপর শূন্যপদ পূরনে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে চিকিৎসক সংকটের মধ্যেও তারা রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইন্টার্ণদের দাবিগুলো হলো, ডা. মাসুদ খান কর্তৃক দায়েরকৃত প্রহসনমূলক মিথ্যা মামলা ও অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা, ডা. মাসুদ খান এর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ এর সুষ্ঠু বিচার করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচারকৃত অসত্যের জন্য মানহানির বিচার করা।
গত ২১ অক্টোবর শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-৪ এর রেজিষ্ট্রার ডা. মো. মাসুদ খান, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের সভাপতি সজল পান্ডে এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. তরিকুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে আরো ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে তার ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ এনে পরিচালক বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর দিন ২২ অক্টোবর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা মেডিকেলের সামনে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন নেয়ার অভিযোগে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন ডা. মাসুদ খানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন। এর কয়েকদিন পরে ডা. মাসুদ খান কোতোয়ালি থানায় ওই ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলার খবর পেয়ে ২৯ অক্টোবর দিবাগত রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করে এবং কর্মবিরতির ডাক দেয়। কিন্তু মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ, হাসপাতাল পরিচালক ও উপ-পরিচালকের হস্তক্ষেপে আড়াইঘন্টার আলোচনা শেষে রাত আড়াইটায় কর্মবিরতি থেকে সরে আসে ইন্টার্নরা। সে সময় ইন্টার্নরা কিছু আল্টিমেটামও বেধে দেয় কর্তৃপক্ষকে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ইন্টার্ণ চিকিৎসকরা ঘোষণা দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন জানান, দুই পক্ষকে নিয়ে গতকাল আলোচনায় বসা হয়েছিলো। দুই পক্ষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাড় দিতে রাজি না হওয়ায় সমঝোতা হয়নি। তবে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য এ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় দেড়শত ইন্টার্ন চিকিৎসক রয়েছেন। যারা করোনাকাল থেকে শুরু করে এখন দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আর ডা. মাসুদ খানও অতিরিক্তি দায়িত্বপালনসহ করোনাকালে সব থেকে বেশি সময় কাটিয়েছেন এ হাসপাতালে এবং রোগীদের সঙ্গে।
##
নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধানে বিক্ষোভ সমাবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
বরিশাল জেলার নদী সমূহের ভাঙনের স্থায়ী সমাধান ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুর্নবাসনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
গতকাল রোববার সকাল ১০ টায় নগরের সদররোডস্ত অশ্বিনী কুমার হলের সামনে ‘নদী বাঁচায়, মানুষ বাঁচাও’ এই শ্লোগান নিয়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি বরিশাল জেলা শাখা।
এসময় বক্তারা বলেন, বরিশালের নদীসমূহ বিশেষ করে সন্ধ্যা, সুগন্ধা, আড়িয়াল খাঁ, জয়ন্তী নদী ভাঙনে প্রতি বছরে শত শত একর জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমি হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা যায়নি। সরকার এ ব্যাপারে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও স্থায়ী কোন সমাধান পাওয়া যায়নি। নদী শাসন, নদী খনন, জলাধার নির্মাণসহ আধুনিক পদক্ষেপগুলো সমন্বিতভাবে গ্রহণ করে স্থায়ী সমাধান দরকরা। দ্রুত সমাধানে উদ্যোগ না নিলে, বরিশাল জেলার উজিরপুর, বানারীপাড়া, বাবুগঞ্জ, মুলাদী, মেহেন্দিগঞ্জের নদী কূলের লাখ লাখ মানুষ সবকিছু হারিয়ে বেকার ও দিনমজুরে পরিণত হয়েছে, তা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তাই নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান ও ক্ষতিগ্রস্ত ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর পুর্নবাসন এবং নদীর নাব্যতা সংকট দূর করার জন্য খননকাজ জোরদার করার আহবান জানান বক্তারা। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি নজরুল হক নীলু, সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. টিপু সুলতানসহ নেতৃবৃন্দ।