সংবিধানে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’-এর পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ এবং ‘প্রজাতন্ত্র’-এর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ শব্দ ব্যবহারের সুপারিশ।
কমিশন আরও প্রস্তাব করেছে, বাংলাদেশের জনগণকে জাতি হিসেবে আর ‘বাঙালি’ না বলে ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়ে চিহ্নিত করা হবে।
বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশনামা জমা দেয়।
প্রস্তাবে একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার ধারণা দেওয়া হয়েছে। নিম্নকক্ষের নাম হবে জাতীয় সংসদ এবং উচ্চকক্ষ পরিচিত হবে সিনেট নামে। উভয় কক্ষের মেয়াদ চার বছর নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
নিম্নকক্ষ ৪০০ আসনে গঠিত হবে। এর মধ্যে ৩০০ আসন হবে আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত। বাকি ১০০ আসন বরাদ্দ থাকবে নারীদের জন্য। এসব আসনে প্রার্থিতা কেবল নারী প্রার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং প্রতিটি জেলা থেকে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন হবে।
এছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য শর্ত রাখা হয়েছে, তারা নিম্নকক্ষের মোট আসনের কমপক্ষে ১০ শতাংশ আসনে তরুণ প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। প্রার্থীদের বয়সসীমা কমিয়ে ২১ করার প্রস্তাবও এসেছে। নিম্নকক্ষে দুইজন ডেপুটি স্পিকার থাকবেন, যাদের একজন বিরোধী দল থেকে মনোনীত হবেন।
উচ্চকক্ষ ১০৫ সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। এর মধ্যে ১০০ সদস্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে মনোনীত হবেন। রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। এছাড়া কমপক্ষে ৫ জন অনগ্রসর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বাকি ৫ আসনে রাষ্ট্রপতি নাগরিক সমাজ থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেবেন, যারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন।
উচ্চকক্ষের স্পিকার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হবেন। ডেপুটি স্পিকার হবেন সরকারদলীয় সদস্য ছাড়া অন্য সদস্যদের মধ্যে থেকে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের এসব প্রস্তাব দেশের আইনি কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।