সাংবাদিকদের ওপর তালেবানের নির্মম নির্যাতন

সাংবাদিকদের ওপর তালেবানের নির্মম নির্যাতনের কিছু ছবি দেখে এই কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠী মানবাধিকার ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি আসলেই মেনে চলবে কিনা তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ ও সংশয় বেড়ে চলেছে।
এই ধরনের অন্তত দুটি ছবি গত মঙ্গলবার তালেবানদের সরকার গঠনের পরে প্রকাশিত হয়েছে এবং ভেরিফাইড টুইটার হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা হয়েছে। একটি ছবি প্রকাশ করেছেন মার্কাস ইয়াম নামের লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস এর একজন বিদেশী সংবাদদাতা এবং অন্য ছবিটি প্রকাশ করেছে ইটিলাট্রোজ নামের একটি আফগান সংবাদ প্রকাশক প্রতিষ্ঠান।
মার্কাস ইয়ামের টুইট করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে দুই সাংবাদিক তাদের পোশাক খুলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের পিঠ এবং পায়ে মারাত্মক জখম, লাল দাগ এবং ক্ষত দেখা যাচ্ছে।
ইটিলাট্রোজের টুইট করা ছবিতেও এই দুইজনকেই দেখানো হয়েছে। সংবাদ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে এই দুজন তাদেরই সংবাদ কর্মী। একজনের নাম তাকি দরিয়াবি এবং অন্যজন নেমাতুল্লাহ নকদি।
ইটিলাট্রোজ জানায়, জনাব দরিয়াবি একজন ভিডিও এডিটর এবং জনাব নকদি একজন রিপোর্টার। গতকাল পশ্চিম কাবুলের কার্ত-ই-চর এলাকায় নারীদের একটি বিক্ষোভ কভার করার সময় তালেবানরা তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং দুজনকে দুটি ঘরে নিয়ে মারধর ও নির্যাতন করে।
এলএ টাইমসকে নকদি বলেন ‘আমরা চিৎকার করে বলছিলাম যে আমরা সাংবাদিক। কিন্তু তারা পাত্তা দেয়নি। আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে মেরে ফেলবে। মারধরের পর তারা আমাদের উপহাস করতে থাকে ...’।
এলএ টাইমস জানিয়েছে, তালেবানরা তাদের সাংবাদিকদেরকেও প্রতিবাদী নারীদের ছবি তোলা থেকে বিরত রাখে; তবে বিদেশী সংবাদদাতাদের কেবল এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
এলএ টাইমস আরও বলেছে যে, ফ্রান্স ভিত্তিক প্যান-ইউরোপীয় টিভি নিউজ নেটওয়ার্ক ইউরোনিউজের স্থানীয় প্রধানসহ আরও তিনজন সাংবাদিককেও অপহরণ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে তাদের অক্ষত অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়, যদিও ইউরোনিউজের প্রধানের মাথায় বারবার চড় মারা হয়।
টোলো নিউজের ক্যামেরাপারসন ওয়াহিদ আহমদী এবং আরিয়ানা নিউজের রিপোর্টার সামি জাহেশ ও ক্যামেরাম্যান সামিম সহ আরও বেশ কয়েকজন সাংবাদিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিজম (সিপিজে)-এর এক বিস্তারিত প্রতিবেদনে আরও হামলার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
গত মাসে টোলো নিউজের আরেক রিপোর্টার- জিয়র ইয়াদ খানকে তালেবানরা হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। পরে সেই রিপোর্টার নিজেই জানান যে, তালেবানরা তাকে হত্যা করেনি, তবে, বন্দুকের মুখে মারধর করেছিল।
তার কয়েক দিন আগে তালেবান ডয়চে ভেলের এক সাংবাদিকের খোঁজে গিয়ে তার আত্মীয়কে হত্যা করে।
তালেবানরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখাবে। কিন্তু গতকাল এবং গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের কার্যক্রম ভিন্ন কিছু বলছে। তালেবানের একজন মুখপাত্র ইতিমধ্যেই প্রতিবাদে রাস্তায় নামার বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করেছেন এবং সাংবাদিকদের সতর্ক করেছেন যে তারা যেন কোনো বিক্ষোভ প্রদর্শন না করেন।
গত সপ্তাহে মিডিয়া ওয়াচডগ রিপোর্টার্স সানস ফ্রন্টিয়ার্স বা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর কাবুলে সক্রিয় নারী সাংবাদিকের সংখ্যা ১০০ জনের নিচে নেমে এসেছে। অথচ এর আগে অন্তত ৭০০ জন নারী সাংবাদিক কাবুলে সক্রিয় ছিলেন।
তালেবানদের ক্ষমতার প্রথম মেয়াদ নিষ্ঠুরতা এবং মানবাধিকার বিশেষ করে নারী ও শিশুদের উপেক্ষা করার ভয়াবহ কাহিনীতে পরিপূর্ণ ছিল।
ধারণা করা হচ্ছিল তালেবনাদের এবারের শাসন ভিন্ন হবে। তারা নিজেদের বদলে ফেলার কথা বলেছিল এবং নারীদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল।