স্বেচ্ছায় ইফতার বিরতণকারী রায়হানকে শিবির অপবাদ দিয়ে মারধরের অভিযোগ

স্বেচ্ছায় ইফতার বিরতণকারী রায়হানকে শিবির অপবাদ দিয়ে মারধরের অভিযোগ

পটুয়াখালীতে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে লকডাউনকালীন সময়ে খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে বিনামূল্যে ইফতার বিতরণকারী মাহামুদ হাসান রায়হানকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। তিনি রায়হানকে শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই তাকে মারধর করা হয়েচে স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা। তবে রায়হান ছাত্র শিবিরের সাথে জড়িত নয় বলে দাবী করেছেন পটুয়াখালীর বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা।

গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে মাহামুদ হাসান রায়হান অসহায় মানুষের মাঝে বিনামূল্যে এবং স্বেচ্ছায় ইফতার বিতরণ করতে গেলে তাকে মারধর করেন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলমগীর।

জানা যায়, হামলায় আহত রায়হান পটুয়াখালীর শিশুপার্ক এলাকার বাসিন্দা মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে এবং পটুয়াখালীবাসী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের কর্মী। দুই বছর পূর্বে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করে সে। দির্ঘদিন ধরে একটি মোবাইলের দোকানে কর্মরত রয়েছে রায়হান। ২০১০ সাল থেকে সে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। বাবা মারা যাওয়ার পর রাজনীতি থেকে সরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।  

রায়হান বলেন, পটুয়াখালীবাসী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের উদ্যোগে দ্বিতীয় রোজা থেকে প্রতিদিন ৫০ জন রোজাদার শ্রমজীবী মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে সংগঠনের ব্যানারে ৮/১০ সদস্য এই ইফতার বিতরণের কাজ করে আসছে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পটুয়াখালী সার্কিট হাউজের সামনে ইফতার সাজিয়ে রেখে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে প্যাকেবট বিতরণ হচ্ছিলো। আকস্মিক দুটি মোটর সাইকেলযোগে কাজী আলমগীরের নেতৃত্বে ৬জন লোক এসে তাকে মারধর শুরু করে। কাজী আলমগীর নিজেই তাকে মারধর করেন।

রায়হান জানায়, মারধরের সময় কাজী আলমগীর তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তুই পটুয়াখালী শহরে কি হইছো। এ সময় অপর স্বেচ্ছাসেবকরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। তাদেরকে ধাওয়া করে আলমগীর ভাইয়ের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা। মারধরে আহত হয়ে বর্তমানে নিজ বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। 

এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রায়হান বলেন, আলমগীর ভাই আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে মামলা করে আমি কি এলাকায় থাকতে পারবো। কি কারণে এ হামলা হয়েছে জানতে চাইলে রায়হান বলেন, ইফতার বিতরণের প্রচার-প্রচারনা বেশী হওয়ায় তিনি ঈর্ষান্বিত হয়ে এই হামলা চালাতে পারেন। তবে আমি কখনো ছাত্র শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম না।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পটুয়াখালীর এক বাসিন্দা জানান, রায়হান কখনোই শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। ইফতার বিতরণ অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে আমন্ত্রণ না জানানোয় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে এই হামলা চালিয়েছেন।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন মুঠোফোনে রায়হানকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, পটুয়াখালী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের ব্যানারে ইফতার বিতরণ করছিল শিবিরের কর্মীরা। দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে ইফতার বিতরণের আড়ালে তারা যে কোন অঘটন ঘটাতো পারে। এমন আশংকায় তিনি তাদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। রায়হান ছাত্রশিবির করেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার এমন দাবির বিষয়ে কাজী আলমগীর বলেন, তিনি নিজে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি থেকে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হয়েছেন। তাই কে কোন দল করে তার চেয়ে ভালো কারোর জানান কথা নয়।