হৃদয় মন্ডলকে সংবর্ধনা

হৃদয় মন্ডলকে সংবর্ধনা

বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে তারই স্কুলে। মুন্সীগঞ্জের পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব এ ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আয়োজনে মুন্সিগঞ্জের সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন। ঢাকা থেকে যাওয়া বিশিষ্ট নাগরিকদের সফর উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মুন্সিগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-ল উপস্থিতি ছিলেন।

সভায় মুন্সীগঞ্জের পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব বলেন, ‘আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলাম যার জন্য আওয়ামী লীগের সময়ে মুন্সিগঞ্জে কখনো জামায়াত তাদের দাপট দেখাতে পারেনি। জামায়াত ও হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ সবসময় মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক নাশকতার চেষ্টা করেছে। তারই নিদর্শন এই শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-লের উপর ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনা।’
তিনি জানান, ‘আগামী মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) বিনোদপুর রামকুমার স্কুলে যেটা হুদয় ম-লের কর্মক্ষেত্র সেখানকার মাঠে তাকে সংবর্ধন জানাবো বিজ্ঞানের পক্ষে তার দৃঢ় অবস্থানের জন্য।’

মুন্সিগঞ্জে সূধীসমাজের সঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ‘মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও সন্ত্রাস প্রতিহতকরণে সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক নাগরিক মতবিনিময় সভায় হৃদয় চন্দ্র ম-লের লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়।

নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে ও নির্মূল কমিটির মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বলের সঞ্চালনা মতবিনিময় সভায় বক্তব্য প্রদান করেন মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, মুন্সীগঞ্জের পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর-এর সভাপতি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, মুন্সিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান, মুন্সিগঞ্জ জেলা নির্মূল কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কাদের, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জেলার সভাপতি সুজন হালদার, উদীচির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা তপন, পূজার উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমর কুমার ঘোষ, মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাভোকেট নাসিমা আক্তার, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুবীর চক্রবর্তী, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভবতোষ চৌধুরী নুপুর, পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সাধারণ সম্পাদক নবীন কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক বাসুদেব নাগ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অভিজিৎ দাস ববি, উদীচির সদস্য হামিদা খাতুন প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের প্রতিহত করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের নিকট থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি বলেন, ‘বিগত ৫০ বছর যাবৎ আমি রাজনৈতিক কর্মী। এ সময় আমি প্রত্যক্ষ করেছি নানা কারণে বাংলাদেশের অনেক জেলাতেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা হলেও মুন্সীগঞ্জে কখনো হয়নি। কিন্তু আপনার সঙ্গে যা হয়েছে এজন্য আমি সত্যিই অনেক ব্যথিত, ক্ষুব্ধ, মর্মাহত ও দুঃখিত।’

হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে গ্রেফতারের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ কেন হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে ১৯ দিন কারারুদ্ধ করে রাখল তা আমার বোধগম্য নয়।’ বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে তার আসনে সম্মানের সাথে প্রতিষ্ঠাকরণে যা যা করণীয় তিনি তা করবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বপ্রদানকারী বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ এক যুগেরও অধিককাল একটানা ক্ষমতায় তাকার পরও প্রশাসন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবস্থানকারী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। কখনো তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কারও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট জালিয়াতি করে ইসলাম অবমাননার পোস্ট দিয়ে কিংবা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে কিংবা স্কুলে হিজাব-নেকাব নিয়ে মিথ্যাচার করে সনাতন ধর্মালম্বী শিক্ষকদের হেনস্তা করে বাংলাদেশকে মোল্লা উমরদের তালেবানি আফগানিস্তান বানাতে চাইছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ আমরা মুন্সিগঞ্জ এসেছি স্কুল শিক্ষক হৃদয় ম-লের লাঞ্চনার প্রতিবাদ জানানোর জন্য। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির প্ররোচনায় স্কুলের কিছু ছাত্র যেভাবে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-লকে হেনস্তা করেছে, ভিকটিমকে নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো তাকে গ্রেফতার করে প্রশাসন যে ন্যাক্কারজনক আচরণ করেছে আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। শিক্ষক হৃদয় ম-ল ১৯ দিন পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বটে তবে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি অত:পর বছরের পর বছর আদর্শবান এই শিক্ষককে মিথ্যা অভিযোগের গ্লানিকর মামলার বোঝা বইতে হবে, যেটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিরীহ ছেলে রসরাজ এবং এ ধরণের সাম্প্রদায়িক মামলার অন্যান্য ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রে।’