১০ ডিসেম্বর কি কি খেলা হলো

১০ ডিসেম্বর কি কি খেলা হলো

'খেলা হবে' কথাটা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে খুব পরিচিত এ সময়ে।এর ব্যবহার ক্রীড়া অঙ্গনে থাকার কথা থাকলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে ব্যবহার যেন অনিবার্য হয়ে আছে সেটা ভারত ও বাংলাদেশ দুদেশেই।  প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এর রাজনৈতিক ব্যবহার হলেও উৎপত্তি বাংলাদেশে। খেলা হবে’ স্লোগানটি নারায়ণগন্জের রাজনীতিবিদ শামীম ওসমানের হলেও জনপ্রিয় করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।এদিকে ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা চলছে সে উন্মাদনায় দেশসহ বিশ্ব কাপছে। সেখানেও খেলা চলছে প্রতিদিন। বাংলাদেশ ভারত ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেখানেও খেলা চলছে। মূলত বিএনপির সারাদেশে রাজনীতি কর্মসূচি নিয়ে খেলা হবে কথাটা আওরাতে শোনা যায় রাজনৈতিক নেতৃত্বদের। ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এর ইতিহাসে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে ১৯৭১ সালেই তবে ২০২২ সালে এ ইতিহাস আরও কিছু ইতিহাস সংগ্রহ করলো।ইতিহাস যেন খেলা কথাটা ঘিরে তৈরি হলো।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বরঃ


মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন ১০ ডিসেম্বর। ১৯৭১ ঢাকায় রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সূচনা হয়। এদিন শান্তিনগরের চামেলীবাগের ভাড়া বাড়ি থেকে প্রখ্যাত সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, 'সব ধর্মের মানুষই সমানভাবে আমাদের ভাই। এই মহান আদর্শ রক্ষার জন্য আপনারা এবং আমরা সংগ্রাম করছি।' রেডিও আকাশবাণীর বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বক্তব্যে সেদিন তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজয় শুধু তখনই সম্ভব হবে, যখন বাংলাদেশ সরকার কায়েম হবে এবং বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত ১ কোটি শরণার্থী নিজেদের ভিটায় ফিরে যেতে পারবে।'এছাড়াও দিনে মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস রয়েছে।


বিশ্বকাপ ফুটবলে ১০ ডিসেম্বর ঃ

এই প্রথম শীতে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন তাও আমাদের কাছাকাছি কাতারে এবারের রেশটা যেন ভিন্ন কেউ ভাপা পিঠা খেতে খেতে, কেউ সোয়েটার পড়ে আবার কাঁথা মুড়ো দিয়ে খেলা দেখলো। তবে কোয়াটার ফাইনালে যে খেলা হলো ১০ ডিসেম্বর তাতে কেউ বসে শুয়ে খেলা দেখতে পারেনি নিশ্চিত। বিশ্বকাপের উপভোগ্য দুই কোয়ার্টার ফাইনাল দেখল পুরো বিশ্ব। যেখানে টানটান উত্তেজনার প্রথম কোয়ার্টারে ফেবারিট ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া। ৯ ডিসেম্বর কোয়াটারে ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়া ফুটবল খেলা হলে রেশটা যেন ১০ ডিসেম্বর উদযাপন করলো বাংলাদেশ। এর কারন হাড্ডি হাড্ডি লড়াই করে ট্রাইবেকারে ব্রাজিল হারলো ক্রোয়েশিয়ার কাছে, ব্যাস কি হলো তাতো আপনি নিজেই ইতিহাসের সাক্ষী।নেইমারের চোখের পানি যেনো বাংলাদেশে ব্রাজিল সমর্থকদের সমুদ্রের তুফান তুললো সত্যি বলতে ব্রাজিলের খেলোয়ারদের কান্না ২০২২ সালের বিশ্বকাপে বিসর্জন এর মুহুর্ত মতো হলো। আর্জেন্টিনা সমর্থকরা  ব্রাজিলের হারটা যেন টান টান উত্তেজনায় ২ ঘন্টা উদযাপন করলো।কারন ওরা ভিতরে ভিতরে খুব চিন্তিত আসলে কি পারবে এ তরী পাড় হতে। নেদারল্যান্ডসকে সেই টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। ১০ ডিসেম্বর শুরুর রাতে পায়ে গড়াতে ম্যাচগুলো রঙিন করে রেফারি মাতিও খেলোয়াড়ের সঙ্গে কোচ, সাইড বেঞ্চের খেলোয়াড়, এমনকি পেনাল্টি করতে আসা ফুটবলারকেও হলুদ রঙয়ের কার্ড দেখাতে ছাড়েননি।ম্যাচে মোট ১৯টি কার্ড দেখান রেফারি। যেখানে কার্ড দেখেছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি আর সাপোর্ট স্টাফ ওয়াল্টার স্যামুয়েলও।  বিশ্বকাপের ইতিহাসে আর কোনো ম্যাচে এত বেশি কার্ড দেখানোর রেকর্ড নেই।  তাতে বেধে আছে বিপত্তি। এ রেশ ফুটবল প্রিয় বাংলাদেশে আর ৪ বছরে শেষ হবে কিনা জানিনা।

১০ ডিসেম্বর বিএনপি :

রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন ১০ ডিসেম্বর  নির্বাচন করেছে বিএনপি.. ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণসমাবেশ নির্ধারন হওয়ার পরই খেলা হবে কথাটা ব্যাপক ব্যবহার পাওয়া যায় একদিনে, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি নেতারা বলেছেন ১০ ডিসেম্বর সরকার উৎখাত করবেন, তারেক রহমান দেশে আসবেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশ চালাবেন,দেশ অচল করবেন।এরপর প্রশাসন,পুলিশ, আইনসংস্থা, রাজনীতি,কূটনীতিক পাড়া চাঙা হয় গণমাধ্যমও যেনো নড়েচড়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর ১০ ডিসেম্বর এর আগেই বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে  সংঘর্ষ,তল্লাশি, নিহতের ঘটনা ঘটে। রুহুল কবির রিজভী ও আমানুল্লাহ আমান আটক হয়,৯ ডিসেম্বর আটক হয় পুলিশের ওপর হামলা, পরিকল্পনা, উসকানির অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। সেইসঙ্গে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। নিউজে দেখা গেলো ঢাকার নাকি সাত লাখ লোক প্রবেশ করেছে এরপর তো সব যান চলাচল বন্ধ হওয়ার খবর, বরিশাল থেকে ১০ ডিসেম্বর এর জন্য আগের দিন লঞ্চ যাত্রা বাতিল হয়।দেশের কোথাও কোথাও বাস ও ট্রেন বন্ধ এর সাথে রাজধানীতে এবার নতুন কার্যক্রম দেখায় পুলিশ। তল্লাশি করতে তারা মোবাইল ফোনেও তল্লাশি চালায় এটা তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারই বলা যায়। আর ৯ ডিসেম্বর শেষ  রাতে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি পেলে মাঠে আগেই অবস্থান নেয় বিএনপির সমর্থকরা। ১০ ডিসেম্বর সকালে ১১ টার আগেই শুরু করে বিএনপির সমাবেশ। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা ঘোষণা করেছে  বিএনপি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ দাবি আদায়ে আগামী দিনেআন্দোলন করবে। শনিবার  বিকেল সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১০ দফা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার আজকের গণসমাবেশে বাধা দেওয়ার জন্য নানান ষড়যন্ত্র করেছে। আমাদের সাড়ে চারশোর বেশি নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে সব বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে আজকের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল হয়েছে।’সমাবেশ থেকে বিএনপি এমপিদের পদত্যাগের ঘোষণা,সমাবেশ থেকে বিএনপি এমপিদের পদত্যাগের ঘোষণা গণসমাবেশ থেকে ঘোষিত বিএনপির ১০ দফাতেই সরকারের পতন ঘটানো হবে। 

বাংলাদেশ ক্রিকেটে ১০ ডিসেম্বর:


বাংলাদেশ টানা দুই ম্যাচে জয়ী হয়ে ভারতের সঙ্গে সিরিজ জয় প্রায় নিশ্চিত করে। ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বনাম ভারত ওয়ানডে খেলে হোয়াইট ওয়াশ মিশনে ব্যর্থ হয়। ভারতকে এর আগেও ওয়ানডে সিরিজ হারানোর রেকর্ড আছে। এবার ভারতকে আরও একবার বাগে পেয়েছিলো টাইগাররা। প্রথম দুই ম্যাচেই জয় তুলে নিয়ে নিশ্চিত করেছে সিরিজ।সিরিজটিতে অবশ্য এত সহজে জয় পায়নি বাংলাদেশ আজ ১০ ডিসেম্বর শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে ২২৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।শেষ ম্যাচে বড় জয়ে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াল ভারত ,২০১৫ সালে এশিয়ার পরাশক্তিদের মাটিতে নামিয়েছিল টাইগাররা। ২০১৫ সালে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি ২০২২ সালেও পারলো না। তবে এবার ভালো সুযোগ এসেছিলো বাংলাদেশের সামনে। ম্যাচটি জিততে পারলে প্রথমবারের মতো ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করার কীর্তি গড়তো। যা হতো বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস।

১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যক্রমঃ

১০ ডিসেম্বর ঢাকার সাভারে আওয়ামী লীগের জনসভা করেছে সভায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার ছিলেন।প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক (এমপি), অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম (এমপি), জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।এছাড়াও সারাদেশে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচী করতে দেখা গিয়েছে। আমি যেহেতু 'খেলা হবে' নিয়ে লেখা লিখেছি এ নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে রাজনীতিবিদরের বক্তব্য গুলো এমন ছিলো।রাজনীতির মাঠে ‘খেলা হবে’ স্লোগানের বিরোধিতা করেছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ। খেলা হবে, খেলা হবে’।আমার দৃষ্টিতে এটা রাজনৈতিক স্লোগান না, এটা রাজনৈতিক স্লোগান হতে পারে না। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খেলা হবে, ডিসেম্বরে খেলা হবে, নির্বাচনে খেলা হবে, ১০ তারিখে খেলা হবে, তবে মারামারি নয়, পাল্টাপাল্টি নয়। তবে আগুন আর লাঠি নিয়ে আসলে খেলা হবে। আপনারা লাঠি খেলা করবেন, আগুন নিয়ে খেলা করবেন, আর আমাদের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাবে? আমরা প্রস্তুত আছি, খেলা হবে। তিনি বিভিন্ন বক্তব্যে বলেছেন, খেলা হবে স্লোগান মির্জা ফখরুলের পছন্দ নয়। আরও কারো কারো পছন্দ নয়। কিন্তু যে স্লোগান জনগণ পছন্দ করে, সেই স্লোগান আমি দিয়েই যাব।আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন ‘বিএনপির কয়েকজন নেত্রীও এখন বলছেন যে, খেলা হবে। কিন্তু আমরা আপনাদের সাথে খেলব না। ছাত্রলীগ আপনাদের সঙ্গে খেলবে। আমরা সবার সাথে খেলি না।’ ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর শুক্রবার ৯ ডিসেম্বর বলেছেন, ‌‘ আওয়ামী লীগ খেলার কথা বলে ফাউল খেলছে। আপনারা এভাবে ফাউল খেললে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হবে।’

বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে আমীর খসরু বলছিলেন ডিসেম্বর খেলা হবে। বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কথার ভিত্তি করে এতদিন খেলা হবে কথাটা খুব প্রচলন ছিলো। বিএনপি মাঠ গরম করতে কতোটা পেরেছে সেটা আমি মন্তব্য করবনা।তবে সমাবেশ যদি ‘খেলা’ হয় তাহলে এই খেলার প্রথম সিরিজ বিএনপি জিতেছে বলে দাবি করেছে দলটি। এসময় টা রাজনৈতিক ভাবে উপভোগ্য ছিলো মনে হয়।সাথে বিশ্বকাপ ফুটবল ও ভারত বনাম বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলা হওয়ায় পথে - ঘাটে, চায়ের কাপে, সোশ্যাল মিডিয়ায় খেলা হবে এর ব্যবহার বহুরুপ নিয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনাল শেষ, ক্রিকেটও শেষ হবে,বিএনপি ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণসমাবেশ শেষ এরপর কি খেলা হবে?