‘ক্যাসিনোর টাকা কোন নেতাদের কাছে যেত তা খুঁজে বের করা হচ্ছে’

‘ক্যাসিনোর টাকা কোন নেতাদের কাছে যেত তা খুঁজে বের করা হচ্ছে’


জুয়া, ক্যাসিনোর টাকা কোন কোন নেতাদের কাছে যেত তা খুঁজে বের করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আলী সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ উপ-কমিটির উদ্যোগে শেখ হাসিনার জন্ম দিন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৭৩ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি দেওয়ার অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতির বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কা‌দের বলেন, শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দিবেন না। শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। অনুপ্রবেশকারীরাও এখানে আছে, খোঁজে খোঁজে অপকর্মকারীদের, সন্ত্রাসীদের, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজদের বের করবেন। খোঁজে বের করা হচ্ছে। অন্যায়ভাবে অর্জিত অর্থ কোন কোন নেতার কাছে যেত তা বের করা হচ্ছে। অনেক বিএনপি নেতার কাছেও এই ক্যাসিনোর টাকা গেছে, এই খবর গণমাধ্যমে বেরিয়ে আসছে। এই প্রশ্নেরও জবাব বিএনপিকে দিতে হবে।

‌তি‌নি ব‌লেন, শেখ হাসিনা ঘর থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছেন। সারা দেশের মানুষ এপ্রিশিয়েট করছে। আর বিএনপি আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ, আত্মস্বীকৃত সন্ত্রাসী দল। এটা তাদের দলীয় গঠন তন্ত্র থেকে সাত ধারা বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত।

দুর্নীতিবাজদের নিয়ে বিএনপির বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, যা অতীতের শাসকেরা করতে পারে নি, খালেদা জিয়া পারে নি আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনা করতে পেরেছে। অপকর্ম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে যে বার্তা দিয়েছেন, বিএনপি আজকে এর বিরুপ মন্তব্য করছে। তাদের শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ছিল।

‌তি‌নি ব‌লেন, আপনাদের আমলে বিএনপির কোন স্তরের নেতাকর্মীদের কোন অপরাধের জন্য শাস্তি পেতে হয় নি। আমাদের অনেক নেতা কর্মী আজকে জেলে। অনেক নেতা, এমপি, মন্ত্রী দুদকের মামলায় হাজিরা দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের মেয়র জেলে, এমপি মন্ত্রীরা আদালতে হাজিরা দিচ্ছে। আর আমাদের দলের নেতারা দুদকের মামলায় জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাওয়ার পর তিনি বলে দিয়েছেন আমি দুদকের ওকালতি করি না।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে অনেকেই নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এমনটা স্বীকার করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তবে আওয়ামী লীগ ধোয়া তুলসী পাতা না, এখানে কেউ অপকর্ম, চাঁদাবাজি, গডফাদারী করে না এটা বলছি না। আমরা ইমপিওনিটি কালচার চালু করেছি, যা বিএনপি করে নি। তারা শুরু করেছিল হাওয়া ভবন সংস্কৃতি। এই হাওয়া ভবন ছিল দুর্নীতির আখড়া, হাওয়া ভবন খাওয়া ভবনে পরিণত হয়েছে। এই হাওয়া ভবন ছিল লুটপাটের খাওয়া ভবন। এই বিএনপি নেতাদের মুখে দুর্নীতি বিরুদ্ধে কথা বলা ভূতের মুখে রাম নাম ছাড়া আর কিছুই না।

ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লী‌গের এ নেতা বলেন, ছাত্রলীগের দায়িত্ব পরিবর্তন হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই রাজনীতিকে বঙ্গবন্ধুর চির বিজয়ী আদর্শে ফিরিয়ে আনতে হবে। ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। শেখ হাসিনার প্রতি সন্মান প্রদর্শন করতে হলে, তোমাদেরকে খারাপ খবরের শিরোনাম হওয়া যাবে না। ছাত্রলীগ ভালো খবরের শিরোনাম হবে এটাই আমরা আশা করি।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ভিন্ন আদর্শের ভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্ধের সঙ্গেও বঙ্গবন্ধু কন্যার সু সম্পর্ক ছিল। আমরা বেবি মওদুদের কথা অনেকেই জানি, শেখ হাসিনা ও বেবি এই সঙ্গে পড়তে কিন্তু পৃথক ছাত্র সংগঠনে ছিলেন। তাদের মধ্যে সেই সময়ে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল সেটা বেবির মৃত্যু পর্যন্ত টিকে ছিলো। রাজনীতির সঙ্গে সৌজন্য পরায়নতার প্রকাশ তখন ঘটতো। এটা এখনকার ছাত্রনেতাদের জন্য উদাহরণ হতে পারে।

শেখ হাসিনার বাংলা বিভাগে ভর্তির জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন আগরতলা ষড়যন্ত মামলায় ক্যান্টনমেন্টে বন্দী, তখন শেখ হাসিনা বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। তখন স্বাভাবিক ভাবেই তার প্রতি আমাদের অত্যন্ত সহানুভূতি ছিলো। তখনকার বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী। শেখ হাসিনা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে দাড়িয়েছিলেন। আগরতলা মামলায় তার বাবা জেলে থাকায় অন্য কোন বিভাগ ভর্তি নিচ্ছিল না। তখন মুনির চৌধুরী সাহেব আমাকে বললেন, শেখ মুজিবরের কন্যা শেখ হাসিনাকে আমাদের এখানে নিয়ে আসো। ও ভর্তি হতে এসেছে, আমরা বাংলা বিভাগ তাকে ভর্তি করবো।

ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ উপ কমিটির চেয়ারম্যান এ এফ ফখরুল ইসলাম মুন্সীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আকতারুজ্জামান, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক সামসুন্নাহার চাঁপা, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।