অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর জানাজা সম্পন্ন

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর জানাজা সম্পন্ন

একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, গবেষক ও বিজ্ঞানী, জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর  ধানমন্ডিতে অবস্থিত ঈদগাহ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠিত জানাজায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে নিকটতমদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন অংশগ্রহণ করেন।

জানাজার পর জামিলুর রেজার মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) ভোররাতে শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। জানা যায়, সাহরির সময় পরিবারের সদস্যরা জামিলুর রেজাকে ডাকতে গেলে কোনও সাড়া না পেয়ে তাকে দ্রুত স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

জামিলুর রেজা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদসহ আরও অনেকে।

জামিলুর রেজা চৌধুরী একাধারে গবেষক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী ছিলেন। দেশের প্রথম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান ছিলেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। পদ্মা সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্যানেলেরও নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ চলমান নানা উন্নয়ন প্রকল্পেও বিশেষজ্ঞ প্যানেলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি।

১৯৪৩ সালের ১৫ নভেম্বর সিলেট শহরে প্রকৌশলী আবিদ রেজা চৌধুরী ও হায়াতুন নেছা চৌধুরীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (তখনকার আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ)। ১৯৬৩ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করে সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন।

তিনি ১৯৬৪ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডভান্স স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়াারিংয়ে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৬৮ সালে সেখানেই পিএইচডি শেষ করেন। এরপর দেশে ফিরে আবার বুয়েটে শিক্ষকতা শুরু করেন।

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ১৯৯৬ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একুশে পদক লাভ করেন।

২০১৮ সালে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক নির্বাচিত হন। জামিলুর রেজা চৌধুরী ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে সম্মানসূচক ডক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ম্যাথমেটিকাল অলিম্পিয়ার্ড কমিটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেছেন। বুয়েট থেকে অবসরে যাওয়ার পর ২০০১ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, সেই দায়িত্বে তিনি ছিলেন ২০১০ সাল পর্যন্ত। এরপর ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন।

বিশেষজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়েও সরকারের বিভিন্ন পরামর্শক প্যানেলে জামিলুর রেজা চৌধুরীর ডাক পড়েছে।

তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সফটওয়্যার রফতানি এবং আইটি অবকাঠামো টাস্কফোর্সের চেয়াররম্যান ছিলেন ১৯৯৭ সাল থেকে পাঁচ বছর। ১৯৯৯ সালে সরকার তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা করার জন্য যে কমিটি করেছিল, জামিলুর রেজা চৌধুরীকেই তার আহ্বায়ক করা হয়।

২০০১ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর আইটি টাস্কফোর্সেরও সদস্য করা হয়। পুরকৌশলের এই শিক্ষক নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেখভাল করতে হয়েছিল তাকে।

যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউশন অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্সের ফেলো জামিলুর রেজা চৌধুরী নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের সভাপতি ছিলেন।

বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটিতেও তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।