অস্থিতিশীল আলুর বাজার, দিশেহারা সাধারণ মানুষ

অস্থিতিশীল আলুর বাজার, দিশেহারা সাধারণ মানুষ

এক সময় মানুষের মুখে মুখে শোনা যেত ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’। এক পর্যায়ে মাছ কম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এরপর ‘ডাল-ভাতে বাঙালি’ শব্দ এসে মাছে-ভাতে বাঙালি শব্দকে একটু দূরে সরিয়ে দেয়। পরে ডালের দামও চরা হওয়ায় এই জায়গা নিয়ে নেয় ‘আলু-ভাতে বাঙালি’। কারণ আলুর দামই ছিল মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালে। ৫ টাকা কিংবা ১০ টাকা কেজি দরে আলু কিনে আলু সেদ্ধ দিয়ে ভাত খেতে পারতো স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ। এখন আলুও থাকছে না সাধারণ মানুষের নাগালে। গত বছর রান্না ঘরের পেঁয়াজ উঠেছিল বিমানে। এরপর পেঁয়াজ না খাওয়ার বাণীও শুনতে হয়েছে। কম আয়ের মানুষ অবশ্য বাধ্য হয়েই পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এবছর পেয়াজ ৯০-১০০ টাকার মধ্যে আছে। কিন্তু ১৫ টাকার আলু এক লাফে ৫০-৬০-এর ঘর ছুঁয়েছে। মাঝে মাঝে তিন অংকের ঘরও ছুঁয়েছে। আলু নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন যুদ্ধ। আলুর বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

কয়েক বছর আগের কথা, যখন চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আলু খাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল। বেশি বেশি আলু খেয়ে ভাতের ওপর চাপ কমানোর আহ্বানও জানানো হয়েছিল। কারণ, তখন বাজারে পর্যাপ্ত আলু পাওয়া যেত। কখনওই আলুর দাম ১০ টাকার বেশি ওঠেনি। ৫ থেকে ১০টাকা কেজি দরে আলু পাওয়া যেত। তখন বলা হতো ভাতেও কার্বোহাইড্রেট, আলুতেও তাই। বেশি দামে চাল না কিনে আলু খেলে পুষ্টির ঘাটতি হচ্ছে না। অনেকেই আস্বস্ত হয়ে আলুর দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। কেউ ভাতের পরিবর্তে আলু দিয়ে রকমারী রান্না করে খেয়েছেন। বর্তমানে আর সেই সুযোগ থাকছে না। এখন বরং চালের দাম আলুর চেয়ে অনেক কম। তাই আলুর পরিবর্তে ভাত খাওয়ায়ই উত্তম মনে করছেন। 

সময় পাল্টোছে। বদলেছে দিন। সঙ্গে সঙ্গে আলুর বাজারেও দিনবদলের হাওয়া লেগেছে। ১০ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০-৭০ টাকা কেজি। আলুর এই উর্ধ্বমূখি বাজার কেন? অনেকেই মনে করছেন আলুর দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজার আলু শূণ্য করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। সরকারের বেধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি করতে আগ্রহী হচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। আলুর মজুত না থাকার কারণেই আলুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার বলছেন বাজার নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে আলুর দাম বাড়ছে। আলু নিয়ে শুরু হওয়া লুকচুরি খেলায় বিপর্যস্ত সাধারণ ভোক্তারা। সেজন্য বাজার মনিটরিং এর পাশাপাশি আলুর মজুত আছে সেটা নিশ্চত করতে হবে।

গত ১৮ অক্টোবর বরিশালের এক সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী দেশে সকল পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। একটি মহল গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। কোন গুজবে কান না দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য ক্রয় করতে হবে। এক সপ্তাহ পার না হতেই বাজারের চিত্র বলছে অন্য কথা।

সারা দেশের মতো বরিশালের আলুর বাজার অস্থির। সরকার পাইকরী ও খুচরা বাজারে আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর প্রতি কেজি আলু কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে ২৩টাকা, পাইকারী বাজারে ২৫ এবং খুচরা বাজারে ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। ওই দামে যাতে আলু বিক্রি হয় সেজন্য মাঠ প্রশাসনকে চিঠিও দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাজারের আলুর দাম তখনও ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আলুর দাম কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি ২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে কেজি ৩০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে কেজি ৩৫ টাকা পুননির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু খুচরা বাজারে ওই মূল্য নির্ধারণী কোন কাজে আসছে না। উল্টো আলুর দাম দ্বিগুনেরও বেশি হয়ে গেছে।

আমরা চাই, আলু নিয়ে নতুন এই লুকচুরি খেলা বন্ধ করতে হবে। মানুষ যাতে কম মূল্যে আলু, পেঁয়াজসহ নিত্য পন্য কিনতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। পেঁয়াজ এবং আলু নিয়ে যদি কোন মহল কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে আলু ও পেঁয়াজের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।