আঙুলের নির্দেশনার পঞ্চাশে, প্রেরণা পাবে আগামীর পথে

আঙুলের নির্দেশনার পঞ্চাশে, প্রেরণা পাবে আগামীর পথে

‘লাখো শহীদের রক্তের বিনিময় পেয়েছি এ বাংলাদেশ, লাখো মা-বোনের অশ্রুর বিনিময় পেয়েছি এ বাংলাদেশ, এই আমাদের বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।’

সোনাফলা মাটির দেশ বাংলাদেশ। মার্চ মাস বাঙালি জাতির জন্য এক অবিস্মরণী মাসের নাম। বাঙালির আত্মপরিচয়ের নাম হচ্ছে মার্চ। উত্তাল মার্চ। অগ্নিঝরা মার্চ। ১৯৭১ সালের এই মার্চ মাস আমাদের অনেক ইতিহাসের সাক্ষি। ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স মাঠে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। এই মার্চেই শুরু হয়েছিল মুক্তি সংগ্রাম। পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে শসস্ত্র সংগ্রাম। আবার এই মার্চেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।

একটি আঙুলের নির্দেশনা আমাদের মুক্তির পথে নিয়ে গেছে। এবছর আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ৫০ বছর পূর্তি। গোটা জাতি পালন করবে সুবর্ণজয়ন্তীর বর্ণিল আয়োজন। কিন্তু মার্চের আজকের এই দিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ হচ্ছে আরেক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯২০ সালের আজকের এই দিনে আঙুল উধ্বাকাশে উত্তোলন করবার জন্য তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল। তিনি হচ্ছেন আমাদের বাঙালির কবি, রাখাল রাজা, আমাদের কা-ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর জন্মশতবর্ষও এ বছর। সব মিলে বাঙালি জাতি এই মার্চকে স্মরণীয় করে রাখবে।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই কবিতার কথা মনে পড়ে গেলো-
‘যে শিশু ভুমিষ্ঠ হলো আজ রাত্রে
তাঁর মুখে খবর পেলুম
 সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক
নতুন পৃথিবীর দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে
তবু তাঁর মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কি এক দুব্যোধ্য প্রতিজ্ঞায়
এসেছে নতুন শিশু
তাঁকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান...’।

সেদিন থেকেই সুতীব্র চিৎকারে অধিকার আদায়ের আহ্বা ধ্বনি তুলেছিল শিশু মুজিব। টুঙ্গিপাড়ার সেদিনের শিশু খোকা, পরে মুজিব, মুজিব ভাই, বঙ্গবন্ধু এবং আজকের জাতির পিতা। আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সুবর্ণ জয়ন্তির এই মাহেন্দ্রক্ষণে এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে তাঁর প্রতি আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধা। কারণ ১২০ সালের ১৭ মার্চের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত আমাদের মুক্তি সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার পথে হাঁটতে শিখিয়েছে। সেদিনে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত মুক্তাকাশে উন্মুক্ত তর্জনী হয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। যে তর্জনী আজ সারা বিশে^ মর্যাদা পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘ তাঁর তর্জনী উত্থিত ১৮ মিনিটের ভাষণকে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে সংরক্ষণ করেছে।

বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানে মুক্তি সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আজ আন্তর্জাতিক সনদ। আজ  যেমন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতারও সুবর্ণ জয়ন্তি, তেমনি ৭ মার্চের ভাষণেরও সুবর্ণ জয়ন্তি। তিন সুবর্ণ জয়ন্তি এবং জাতির পিতার জন্ম শতবর্ষ  মিলে একাকার হয়ে গেছে। আজ আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ কা-ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

৭ মার্চের কালজয়ী আহ্বান ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-এর রচতিয়তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমাদের ঋণের শেষ নেই। সোনার বাংলদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। সেই ঋণ পরিশোধের একটাই সুযোগ তাঁর নীতি আদার্শ, বিশেষ করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। সেই কাজ সবাই মিলে করতে পারলে স্বপ্নের সোনার বাংলা অবশ্যই রূপ নেবে।