২০০৫ সালে সারা দেশে জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটে। ওই জঙ্গী বোমা হামলায় অনেক মানুষ নিহত হয়। তখন ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যার ঘটনাও ঘটে। এরপর থেকে আদালত এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২০০৫ সালের পর গতকাল সোমবার কুমিল্লার একটি আদালতের এজলাসে বিচারকের সামনে এক আসামী অন্য আসামীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। ঝালকাঠিতে দুই বিচারককে বোমা মেরে হত্যা করা হয়েছ এজলাসের বাইরে। কিন্তু কুমিল্লার ঘটনাটি ঘটে এজলাসের ভেতরে। তাও আবার বিচারকের সামনে। ওই হত্যাকা-ের ঘটনায় বিচারক, আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
প্রশ্ন উঠেছে, আদালতের এজলাসে একজন আসামী কিভাবে ছুরি নিয়ে প্রবেশ করলো? নিরাপত্তা কর্মীরা কি আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিল? তল্লাসী ছাড়া একজন আসামী আদাল প্রাঙ্গনে ছুরি নিয়ে প্রবেশ করলো কিভাবে? আদালত প্রাঙ্গন বলছি কেন? ক্ষোদ এজলাসে বিচারকের উপস্থিতিতে ছুরি বের করে এক আসামী অন্য আসামীকে হত্যা করার মতো ঘটনা ঘটেছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান বিচারকসহ গোটা এজালাসে থাকা আইনজীবীসহ বিচারপ্রার্থীরা। আদালতের নিরাপত্তা তাহলে কোথায়?
আমরা দেখেছি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদে বিমানে দেশে ফেরাতে পাসপোর্টবিহীন বৈমানিককে বিদেশের মাটিতে আটক হতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে যিনি দেশ থেকে বিদেশে গেছেন পাসপোর্ট ছাড়াই। আমাদের ইমেগ্রেশন তাকে আটকাতে সাহস করেনি। কারণ তিনি তো আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আনার জন্য যাচ্ছেন। তার আবার পাসপোর্ট লাগবে কেন? কিন্তু বিদেশের মাটিতে তো সবাই সমান। সেদেশের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে বিনা পাসপোর্টে ভ্রমণের দায়ে আমদের বৈমানিককে আটক করে সে দেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ। লজ্জায় আমাদের মাথা নত হয়ে যায়।
এই বিষয়টি উল্লেখ করার কারণ কি? এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আমাদের বিমানবন্দরসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি আবারো স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার। সে কারণেই বলতে হচ্ছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদে ফেরাতে দেশ থেকে বহির্গমনে পাসসপোর্ট বিহীন যাত্রা করা সম্ভব সে দেশে একজন আসামী আদালতের এজলাস পর্যন্ত ছুরি নিয়ে প্রবেশ করতেই পারে। কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে কে? সবকিছু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে হবে? তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ কি?
আমরা চাই, আমাদের আদালত প্রঙ্গনসহ দেশের সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। কিন্তু যেখানে আদালতের এজলাসই নিরাপদ নয়, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা বলাই বাহুল্য। তারপরও আদালত এবং এজলাস এরকম ঝুঁকির মধ্যে পড়–ক এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। আদালতে শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বহীনতার দায় এড়ানো যাবে না। আমরা কেবল দায় এড়ানোর কথা বলতে চাই না। বিচারক, বিচারপ্রার্থীসহ সাবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে আমাদের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে। সেই আশঙ্কা দূর হোক। সবাই নিরাপদে থাকুক এটাই প্রত্যাশা।