আলম খান ও শর্মিলী আহমেদকে স্মরণ

আলম খান ও শর্মিলী আহমেদকে স্মরণ

সম্প্রতি প্রয়াত অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ ও সংগীত পরিচালক আলম খানকে স্মরণ করলেন চলচ্চিত্র ও সংগীতের মানুষেরা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আয়োজন করে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। স্মরণসভার মূল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলমগীর, ওয়াহিদা মল্লিক জলি ও আরমান খান।

স্মৃতিচারণা করতে এসে শর্মিলী আহমেদের ছোট বোন ওয়াহিদা মল্লিক জলির স্বামী রহমত আলী বলেন, ‘আমি শর্মিলী আহমেদের পরিবারের একজন। তার বাবা হাসান তোফাজ্জল হোসেন। তার কারণেই এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। রাজশাহীতে ছিলাম, এই লোকটা আমাকে হাত ধরে অভিনয়ে নিয়ে এসেছেন। পরে শর্মিলী আহমেদের ছোট বোনকে বিয়ে করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শর্মিলী আহমেদ আমাকে ভাই বলতেন আবার মারতেনও। কখনও তার সঙ্গে অভিনয় করতে পারিনি। এটা আমার অভিনয় জীবনের বড় ট্র্যাজেডি।’

পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, ‘আমার প্রথম সিনেমার গানের সুরকার আলম খান। আমি তাকে কখনও রাগ করতে দেখি নাই। শর্মিলী ভাবি বলে ডাকতাম আমি। আমার তাকে নিয়ে কাজ করা হয়নি, কিন্তু তিনি আমার পছন্দের।’

ফোয়াদ নাসের বাবু বলেন, ‘প্রথম দেখেছি ১৯৭৪ সালে। আজম খানের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আলম খানের সঙ্গে পরিচয়। অনেক গানে একসঙ্গে বাজিয়েছি। তিনি ছিলেন পাঠশালা। একসঙ্গে কাজ করতে করতে শিখেছি। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব।’

মিল্টন খন্দকার আলম খানকে নিয়ে বলেন, ‘আলম ভাই রাগতেন, কিন্তু চিৎকার করতেন না, কটু কথা বলতেন না। তিনি রেগে গেলে মোছ টানতেন, কান খোঁচাতেন। তাকে দেখেছি ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসে, সেই ধর্মাবলম্বীদের শিল্পীদের দিয়ে কোরাস করাতেন। প্রয়োজন না থাকলেও মাঝে মাঝে করাতেন, উৎসব যেন তারা একটু ভালোভাবে করতে পারেন।’

নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার জানান, শর্মিলী আহমেদকে সবাই ভাবি বলে ডাকেন, কারণ রকিবউদ্দিন আহমেদ তার স্বামী, নির্মাতা ছিলেন। তাই শর্মিলী আহমেদকে সবাই ভাবি ডাকতেন।

আলম খানের ছেলে আরমান খান বলেন, ‘শর্মিলী আহমেদের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। কিন্তু তাকে শ্রদ্ধা করি, তার আত্মার শান্তি কামনা করি।’

বাবাকে নিয়ে আরমান বলেন, ‘এফিডিসিকে তিনি নজের বাড়ি, ব্যাকগ্রাউন্ড বেশি পছন্দ করতেন, মনে ও মুখে এক ছিলেন। বাজে কথা বা কারও নামে বাজে কথা বলতেন না। তার সৃষ্টিটাকে আর্কাইভ করা এবং নেক্সট প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়াই আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য।’

পারিবারিকভাবে অনুরোধ করে আরমান বলেন, ‘আলম খানের নামে এফডিসির কোনো চত্বর বা ভবন বা সাউন্ড স্টুডিও যদি করা যায়, সেই দাবি বা অনুরোধ আমি করছি।’

গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘আলম খানকে নিয়ে বলতে হবে, এটা ভাবিনি, তিনি আমার বয়সে ছোট। সৃজনশীল মানুষ চলে গেলে তিনি পেছনে রেখে যান সমুদ্র। তাকে আমি অভিমানি হিসেবে মনে করি। তার- হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ওরে নীল দরিয়া গানে সেটাই মনে হয়।’

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘যে দুজনকে নিয়ে কথা বলছি, তারা দুজনই অত্যন্ত ভালো মানুষ। তাদের ভালো কথাগুলোই আজ আমরা ছড়িয়ে দিচ্ছি।’

চিত্রনায়ক আলমগীর বলেন, ‘শর্মিলী ভাবি ও আমার মিতা আলম খানের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৭২ সালে। শর্মিলী আহমেদের কাছ থেকে পেয়েছি কীভাবে ভালো ব্যবহার করতে হয়। আমার প্রথম সিনেমা আমার জন্মভূমিতে আলম খানকে পেয়েছি। প্রথম সিটিংয়ে আমি আলম খান, আলমগীর কুমকুম, মুকুল একটা গ্রুপ হয়ে গেলাম। আলমকে ফোন করলে আমাকে হ্যালো বলত না, বলত, বলো মিতা। এ দুজনের স্মৃতি যদি নাও সংরক্ষণ করি, তারপরও তারা বেঁচে থাকবেন।’

সোহানুর রহমান সোহান মন্ত্রীর কাছে দাবি করেন, দেশের বিদগ্ধ শিল্পীদের কথা যেন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষকে মৃত্য বরণ করতে হবে, কিন্তু কিছু মৃত্যু দেশ-সমাজ-জাতিকে ভাবায়। শর্মিলী আহমেদ ও আলম খানের মৃত্যু তেমনই। আলম খানের ভাই আজম খান। আমার যৌবনে আজম খানকে খুব পছন্দ করতাম। আলম খানের পরিচয় আজম খানকে দিয়ে হবে না, কিন্তু এমন বড় ভাই যার আছে, তার তো এমনই কাজ করার কথা। শর্মিলী আহমেদের সঙ্গে আমার পরিচয় পর্দাতেই।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এফডিসিতে নতুন যে ভবন হবে, সেখানে কালজয়ী শিল্পীদের জীবনী, ছবি দিয়ে একটা কর্ণার যেন করা হয়, তাতে নতুন শিল্পীরা উপকৃত হবেন। আমি এফডিসির এমডিকে বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করব।’

এ ছাড়াও স্মরণসভায় কথা বলেন এফডিসির এমডি নুজহাত ইয়াসমিন। উপস্থিত ছিলেন মাজনুন মিজান, ডি এ তায়েবসহ অনেকে।