আশার স্বপ্নের পথে বাংলাদেশ

‘কি আশায় বঁধি খেলাঘর বেদনার বালুচরে...’। এই গানের কথা দিয়ে দ্রুত বিলিন হয়ে যাওয়ার কথাকেই বেশি বোঝাতে চেষ্টা করেছেন গীতিকার। তার কারণ বালুুচরে ঘর বাঁধার স্বপ্ন, সে তো কেবল দুঃস্বপ্নই হয়। তারপরও মানু স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন বোনে, স্বপ্ন রচনা করে এবং নিরন্তরভাবে স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেও চলে। তবে সেই স্বপ্ন ঘুমের ঘোরের স্বপ্ন নয়, সেই স্বপ্ন হচ্ছে জেগে থেকে আগামীকে বিনির্মাণ করে চলার স্বপ্ন। যে স্বপ্ন দেখে দেশ স্বাধী হয়েছিল। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং দেখিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই পথ ধরে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে সোনার বাংলা। আজ সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা ৫০ বছর অতিক্রম করে চলেছে। ১৯৭১ সালের ৯ মাস শসস্ত্র সংগ্রামের পথ ধরে স্বপ্ন সফল হয়েছে। লাল-সবুজের সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ যৌবন পেরিয়ে পৌড়ত্বের পথে। এই পথ ধরেই শিল্পে, সাহিহ্যে, ইতিহাস-ঐতিহ্যে এবং অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হচ্ছে বাংলাদশে।এই স্বপ্নই আমাদের শতবর্ষ থেকে শত আলোকবর্ষে নিয়ে যাবে। একুশের সম্ভাবনার বাংলাদেশআশার স্বপ্নের পথে হাঁটছে।
২০২১ সালের করোনা মহামারী পুরো বছর জুড়ে ছিল ব্যাথার মালায় গাঁথা। কর্মহীন হয়ে পরা মানুষের দু:খ-কষ্টের বছর ছিল ২০২০ ও ২০২১। আবার করোনাকে পূঁজি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার জনিরও দেখেছি এই অশান্ত সময়ে। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নতুন করে আমাদের ভাবিয়েছে। আবার এটাও সত্য এই মহামারীর মধ্যেই নানান নতুন উদ্যোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনলাইনে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে যার যার অবস্থান থেকে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেও সবাই কাছেই ছিল ডিজিটাল সেবার কারণে। শত প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে চলে চলে আমরা আগামীর এক নতুন সুর্যের অপেক্ষা করছি। যে সূর্য আমাদের সকল দু:খ-কষ্টকে মুছে দিয়ে সুন্দর পৃথিবীর দিকে নিয়ে যাবে। তাই ব্যাথা, কষ্ট, বাধাকে পেছনে ফেলে ২০২২ সালকে স্বাগত জানাতেই হয়। নতুন বছরে বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীর মানুষের জন্য আমাদের শুভকামনা। একই সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী শেষ করে করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। নতুন বছরের সঙ্গে সুবর্ণ জয়ন্তীর শুভেচ্ছাও থাকলো আমাদের পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও বিক্রয় প্রতিনিধি, সহকর্মী এবং সুভানুধ্যায়ীদের জন্য।
বিশে বিষময় ২০২১ সাল যেমন আমাদের নি:স্ব করে দিয়েছে। আবার এই ২০২১ সাল আমাদের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। দূরের মানুষ কাছে থেকেছে ডিজিটাল সেবার সুযোগ নিয়ে। এতো এতা মৃত্যুর মিছিলের মধ্যেই আবার আশার আলো দেখা দিয়েছে। করোনায় বাংলাদেশ অনেকটাই সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করেছে। নিজস্ব সামর্থ দিয়েই মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়িয়েছে। গোটা দুনিয়ায় এতো বড় দুর্যোগের মধ্যেও ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথেই ছিল। আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় শেষ করেছে ২০২১ সালে। ২০২২ সালের যে কোন একদিন খুলে যাবে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর দ্বার। আমাদের পায়রা বন্দর, আমদের মেট্রোরেলসহ অনেক মেঘা প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিয়ে এগিয়ে চলছে। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের ৫০ বছর পূর্ণ করেছে। বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী শেষ করে আমরা নতুন স্বপ্ন নিয়ে বাইশ সালে পদার্পন করছি। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ সত্যিকার সোনার বাংলা হয়ে উঠতে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।
গত একটি বছর আমাদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে অনেক ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে। আমাদের চিরায়াত ঐতিহ্যের ওপর আঘাত এসেছে এই সময়ে। ধর্মান্ধ ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের ভ্রান্ত ফতোয়ায় নতুন করে ভাস্কর্য ভাঙার সংস্কৃতি আরও তীব্র হয়েছে। যা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর চরম বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিয়েছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মন্দির এবং সনাতন ধর্মের মানুুষের ওপর হামলা, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে চরম আঘাত করেছে। মৌলবাদী চিন্তার ফসল আমাদের পাঠ্য বইয়ের পরিবর্তন। তারপরও আমরা থেমে থাকিনি। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে বাংলাদেশ।এতোসব নেতিবাচক বিষয়কে পেছনে ফেলে আমরা নতুনকে আলিঙ্গন করতে সব সময় প্রস্তুতি নিয়ে চলেছি। তার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ নতুন এবং আগামীর পথে চলতে চায়। আধুনিক এবং বিজ্ঞানমনষ্ক পথে চলতে চায়। তাই নতুনের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে না বাংলাদেশ। পুরানো স্মৃতি মুছে দিয়ে সুন্দরকে আলিঙ্গন করার নাম-ই তো বাংলাদেশ। নতুন মানে অন্ধকার দূর করে আলোর পথে চলা। নুতন মানে সম্ভাবনা। নতুন মানে রঙিন ও উজ্জলের আহ্বান। নতুন মানে আগামীর পথ নির্মাণ করা। সেই নতুনের আহ্বান জানাচ্ছে ইংরেজি নতুন বছর ২০২২।
আজকের নতুন সূর্য আমাদের পেছনে ফেলে আসা সকল জঞ্জাল দূর করে দিক। নির্মল এবং সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে আমাদের অনুপ্রেরণা দেবে এটা বিশ্বাস করি। ধর্মান্ধতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে বাস্তবতার বিচারে নিজে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। নতুন বছরে আমরা সকল অমঙ্গলকে দূরে রেখে মঙ্গল ও কল্যাণের পথে হাঁটবো। একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাই একযোগো কাজ করবো। সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত হবার চেষ্টা করবো। ্আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবো। ইভটিজিং, মাদক, বাল্য বিবাহ, হত্যা, ধর্ষণ ও দুর্নীতি মুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে আত্মপ্রত্যয়ী হবো।
২০২১ সালের ১ জানুয়ারিও সুন্দর এক সকালে আমরা যাত্রা করেছিলাম। নতুন সূর্যকে স্বাগত জানিয়ে পথ চলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু পথিমধ্যে করোনা আমাদের সেই পথ চলাকে কঠিন করে দিয়েছে। তারপরও ৩৬৬ দিনের নানা ঘটনা আমাদের আন্দোলিত করেছে। বেশিরভাগ সময় আমাদের হতাশার তিমিরে ডুবিয়ে রেখেছিল। বছরের একদম শেষে এসে যাত্রীবাহী লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল আমাদের ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন করেছে। এরই মধ্যে কখনো আশার সঞ্চার করেছে, আবার কখনো হতাশা এবং কখনো সম্ভাবনাও জাগিয়েছে। সেই পুরানো স্মৃতি নিয়েই আমরা সামনে যাবো। বছর ঘুরে আবার আরেক নতুন সূর্য আমাদের আহ্বান জানাচ্ছে। এই আহ্বান যেন কোন অশুভ শক্তি ম্লান করতে না পারে। কোন হতাশার চাদর আমাদের যেন আচ্ছন্ন করতে না পারে। সেজন্য আপনি, আমি এবং আমরা সবাই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবো।
কবি নির্মলেন্দু গুণের সেই কালজয়ী কবিতার কয়েকটি লাইন দিয়ে শেষ করতে চাই। ‘শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে, রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে, অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চেদাঁড়ালেন। তখন পলকে দারুন ঝলকে তরীতে উঠিল জল, হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার, সকল দুয়ার খোলা, কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী, গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
আমাদের সেই কবি, রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই অমিত কালজয়ী শ্লোগান মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে ২০২২ সালের সোনালী আভার দিকে নিয়ে যাবে, এমনই প্রত্যাশা। যে আলোকিত সূর্য আমাদের আহ্বান জানাচ্ছে সেই আহ্বানে সাড়া দেই। দেশের সঙ্গে থাকুন, দেশকে ভালোবাসুন, লাল সবুজের পতাকার মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় এমন কোন কাজের সঙ্গে নিজে জড়িত হবেন না। অন্য কেউ এমন কাজে যুক্ত হলে দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ করুন। আমরা সবাই মিলে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে আগামীর পথে নিয়ে যাবো।আবারো নতুন বছর ২০২২ সালের প্রভাতে পাঠক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি শুভকামনা জানাচ্ছি।